Friday 07 Nov 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জুলাই সনদ চ্যাপ্টার ক্লোজ, এবার নির্বাচন: আমীর খসরু

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৭ নভেম্বর ২০২৫ ২০:২৭ | আপডেট: ৭ নভেম্বর ২০২৫ ২১:৪২

জনসভায় বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। ছবি: সারাবাংলা

চট্টগ্রাম ব্যুরো: জুলাই সনদ সই হওয়ার মাধ্যমে ঐক্যমত কমিশনের ‘চ্যাপ্টার ক্লোজ’ হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। এরপরও যারা নিজেদের বিভিন্ন দাবিদাওয়া জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে, তাদের গণতন্ত্রের পথে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

এছাড়া যারা নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করতে চায়, বিলম্বিত করতে চায়, তাদের স্বাধীনতা আন্দোলনে যেভাবে বাংলাদেশের শত্রুদের মোকাবেলা করা হয়েছিল, সেভাবে মোকাবিলার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান আমীর খসরু।

আজ শুক্রবার (৭ নভেম্বর) বিকেলে নগরীর বিপ্লব উদ্যানে ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষ্যে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন।

বিজ্ঞাপন

প্রধান অতিথির বক্তব্যে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ঐক্যমত কমিশনের কার্যক্রম প্রসঙ্গে বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন একটা ঐক্যমত কমিশন হয়েছিল। অর্থাৎ ঐক্য করার জন্য একটা কমিটি হয়েছিল। তাদের কাজ হচ্ছে সব দল মিলে একটা ঐক্যমত সৃষ্টি করা। আমরা বারবার বলেছি আপনাদের কাজ হচ্ছে সব দলের সঙ্গে বসে একটা ঐক্যমত সৃষ্টি করা।’

‘ঐক্যমত মানে এই নয় যে, সব দল সবকিছুতে একমত হবে। যেগুলোতে ঐক্যমত হবে, সেই ঐক্যমত নিয়েই আমরা নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাবো। আর যেগুলোতে ঐক্যমত হবে না, সেগুলো নিয়ে প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের সুযোগ আছে, আগামী নির্বাচনের আগে সেগুলো জনগণের কাছে নিয়ে যাওয়া, জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে সংসদে পাশ করা। এর বাইরে কিছু করার সুযোগ নেই। ঐক্যমতের বাইরে যাবার কোনো সুযোগ নেই।’

জুলাই সনদে সই করার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে দীর্ঘ আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে ঐক্যমত হয়েছে, সেই ঐক্যমতের প্রেক্ষিতে জুলাই সনদ হয়েছে, চ্যাপ্টার ক্লোজ, চ্যাপ্টার ক্লোজ। এর বাইরে যাবার কোনো সুযোগ নেই। আমি আবার পরিষ্কার করে বলছি, ঐক্যমত হয়েছে, সনদ সই হয়েছে, এর বাইরে যাবার কোনো সুযোগ নেই। সুতরাং চ্যাপ্টার ক্লোজ।’

‘যারা এর বাইরে গিয়ে তাদের নিজস্ব দাবিদাওয়া অন্য দলের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে, বাংলাদেশের মানুষের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে, তাদের বলছি- গণতন্ত্রের পথে হাঁটতে হবে। শেখ হাসিনার পথে হাঁটলে চলবে না, স্বৈরাচারের পথে হাঁটলে চলবে না, গণতন্ত্রের পথে হাঁটতে হবে। গণতন্ত্রে যদি বিশ্বাস করেন, তাহলে জনগণের ম্যান্ডেটের জন্য জনগণের কাছে যান।’

জামায়াতে ইসলামীর প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘ঢাকায় বসে আপনাদের নিজেদের দাবি আদায়ের জন্য বিএনপির ওপর চাপ সৃষ্টি করবেন না৷ প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের নিজস্ব ভাবনা, চিন্তা, দর্শন আছে। সুতরাং, আমরা সম্মান করি, কিন্তু একদলের ইচ্ছা আরেকদলের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই৷’

আগামী সংসদ কী সিদ্ধান্ত নেবে, সেটা আগে চাপিয়ে দেওয়া যাবে না উল্লেখ করে আমীর খসরু বলেন, ‘আরেকটা কথা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, আগামী সংসদে কী সিদ্ধান্ত হবে, সেটা ঢাকায় বসে কিছু মানুষ, আগামী সংসদে যারা যাবে, আগামী সংসদের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। এটা মেনে নেওয়া যায় না। হ্যাঁ প্রতিটি ঐক্যমত আমরা পরিপূর্ণভাবে পালন করব। কিন্তু এর বাইরে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া তুলে সাংঘর্ষিক রাজনীতির দিকে যাবেন না। মানুষ শান্তি চায়, বাংলাদেশের মানুষ সহনশীল রাজনীতি চায়, বাংলাদেশের মানুষ দ্বিমত পোষণ করেও আরেকজনের মতের প্রতি সম্মান জানাতে চায়। বিএনপিও এই রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে বিশ্বাস করে।’

‘আরেকটা কথা বলছি, নিজেদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন না করে রাস্তায় গিয়ে যদি নিজেদের চিন্তা জনহণের ওপর জোর করে চাপিয়ে দিতে চান, এর চেয়ে অগণতান্ত্রিক আর কিছু নেই৷ সুতরাং বাংলাদেশের মানুষ শান্তি চায়, তারা তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পেতে চায়, তারা ভোটের মাধ্যমে তাদের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চায়, যে সরকার আর যে সংসদ তার কাছে দায়বদ্ধ থাকবে, তার কাছে জবাবদিহি থাকবে। সুতরাং গণতন্ত্রে যদি বিশ্বাস করেন, সঠিক পথে আসুন।’

বিএনপি নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই ঐক্যবদ্ধ বিএনপি শেখ হাসিনার পতন ঘটিয়েছে। কোনোভাবে ঐক্য ভাঙা যাবে না। আজ থেকে সব নেতাকর্মীকে ধানের শীষের পক্ষে থাকতে হবে। তারেক রহমান সাহেবের স্পষ্ট বার্তা, দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে আমরা নিজেদের মধ্যে যেন কোনো ধরনের ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি না করি। আমরা হাতে হাত রেখে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে আগামী নির্বাচনে বিপুল ভোটে ধানের শীষকে বিজয়ী করে তারেক রহমান সাহেবকে দেশের প্রধানমন্ত্রী করবো, ইনশাআল্লাহ।’

নির্বাচন আদায় না হওয়া পর্যন্ত বিএনপির আন্দোলন শেষ হবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আজকের বিএনপিকে মনে রাখতে হবে, এখনো আন্দোলন শেষ হয়নি। আগামী তিন, চার, পাঁচ মাস পর্যন্ত, দেশে নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে একটি নির্বাচিত সরকার গঠন না হওয়া পর্যন্ত বিএনপির আন্দোলন শেষ হবে না। গত ১৭ বছর আমরা যেভাবে ঐক্যবদ্ধ থেকে বিএনপির বিজয় ছিনিয়ে এনেছি, একইভাবে নির্বাচনেও ঐক্যবদ্ধ থেকে বিএনপির বিজয় ছিনিয়ে আনতে হবে। তারেক রহমানকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চায় বাংলাদেশের মানুষ। সুতরাং উত্তর একটাই- ঐক্য ভাঙার কোনো সুযোগ নেই।’

‘আমাদের নিজেদের মধ্যে রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা থাকতে পারে, নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি থাকতে পারে৷ কিন্তু তারেক রহমান সাহেব নির্দেশ দিয়েছেন, দলের পক্ষ থেকে যাকে নমিনেশন দেওয়া হবে, তার পাশে সকল নেতাকর্মীকে সমস্ত শক্তি নিয়ে দাঁড়াতে হবে এবং বিজয় নিশ্চিত করতে হবে। এই জায়গায় কোনো ধরনের প্রশ্ন তোলা যাবে না। এটা ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ, ভবিষ্যৎ বিএনপির জন্য অনেক বড় পরীক্ষা। এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে বিএনপিকে। এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে আমাদের সকলকে, আপনাদের সকলকে।’

সাতই নভেম্বরের চেতনায় গণতন্ত্রের শত্রুদের মোকাবেলার আহ্বান জানিয়ে আমীর খসরু বলেন, ‘আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনে সমগ্র জাতি ঐক্যবদ্ধ থেকে বাংলাদেশের শত্রুদের মোকাবেলা করেছে, গণতন্ত্রের শত্রুদের মোকাবেলা করেছে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা- সার্বভৌমত্ব বিপন্নকারীদের মোকাবেলা করেছে। আজকে আবার সময় এসেছে, ঐক্যবদ্ধভাবে যারা গণতন্ত্রকে বাধাগ্রস্ত করতে চায়, যারা জনগণের নির্বাচনকে বিলম্বিত করতে চায়, যারা জনগণের নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে চায়, যারা জনগণের অধিকারকে বাধাগ্রস্ত করতে চায়, যারা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে, সবাইকে সাতই নভেম্বরের স্পিরিটে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাদের বুঝিয়ে দিতে হবে এদেশের মালিক এদেশের জনগণ। তাদের মালিকানা নিশ্চিত হবে একটি নির্বাচনের মাধ্যমে, তাদের মালিকানা নিশ্চিত হবে একটি নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমে, তাদের মালিকানা নিশ্চিত হবে একটি নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমে। সুতরাং যারা এই নির্বাচনের পথে বাধা সৃষ্টি করতে চায়, তাদের সাতই নভেম্বরের মতো পরাজিত করতে হবে।’

দলীয় প্রার্থী এরশাদ উল্লাহ গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বলা হচ্ছে, দুই দলের অন্তর্দ্বন্দ্বে এই ঘটনা ঘটেছে। ঠিক আছে দুই দলের অন্তর্দ্বন্দ্ব, কিন্তু সেটা এরশাদ উল্লাহর গণসংযোগে কেন হতে হবে ? সেটা বিএনপির রাজনৈতিক কর্মসূচিতে হবে কেন ? তাহলে জনগণ প্রশ্ন তুলছে এই দুই দলের অন্তর্দ্বন্দ্বকে ব্যবহার করে কেউ আগামী নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে চায় কী-না। আপনাদের সবাইকে চোখ-কান খোলা রাখতে হবে, যারা আগামী নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে চায়, বিলম্বিত করতে চায়, তারা গণতন্ত্রের শত্রু। তারা দেশের জনগণের অধিকারের বিরুদ্ধে কাজ করছে। তারা বাংলাদেশে নির্বাচন চায় না। নির্বাচন ছাড়াই যদি ভালো থাকা যায়, মজার মজার, ভালো ভালো খাবার খাওয়া যায়, তাহলে নির্বাচন চাইবে কেন, এটা কি আমরা বুঝি না ? আমরা সবাই বুঝি।’

‘ওই খাওয়া আর খাওয়ানো যাবে না। মজার মজার খাবার খাবে বাংলাদেশের মানুষ। সবাই সজাগ থাকবেন, চোখকান খোলা রাখবেন, এই শত্রুদের যেখানে দেখবেন, পুলিশের হাতে তুলে দেবেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেবেন। এরা আমাদের ভেতরে ঢুকে সমস্যা সৃষ্টি করছে।’

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব নাজিমুর রহমানের সভাপতিত্বে এবং যুগ্ম আহবায়ক আর ইউ চৌধুরী শাহিন ও ইয়াছিন চৌধুরী লিটনের পরিচালনায় জনসভায় আরও বক্তব্য রাখেন- কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর, নির্বাহী কমিটির সদস্য শামসুল আলম, আর্ন্তজাতিক বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ইসরাফিল খসরু মাহমুদ চৌধুরী, নগর কমিটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ মিয়া ভোলা, যুগ্ম আহবায়ক এম এ আজিজ, আবদুস সাত্তার, সৈয়দ আজম উদ্দিন, এস এম সাইফুল আলম, কাজী বেলাল উদ্দিন, শফিকুর রহমান স্বপন, হারুন জামান, নিয়াজ মোহাম্মদ খান, শাহ আলম, শওকত আলম খাজা, আহম্মেদুল আলম চৌধুরী রাসেল, মনজুরুল আলম, মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি মোশাররফ হোসেন দিপ্তী ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহেদ।

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর