ঢাকা: জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রায়ের তারিখ বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) ঘোষণা হতে পারে। বিষয়টিকে কেন্দ্র করে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে শুরু হয়েছে জ্বালাও-পোড়াও এবং আগুন সন্ত্রাস। দেশের বাইরে থেকে জ্বালাও-পোড়াও করার জন্য উসকানি দিচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি স্থানে গাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। আগুনে মৃত্যু হয়েছে ঘুমন্ত বাসচালকের।
এদিকে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ এদিন দেশব্যাপী ‘লকডাউন’র ঘোষণা দিয়েছে। তবে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সবধরনের নাশকতার অপচেষ্টা প্রতিহতের ঘোষণা দিয়ে মাঠে থাকবে বলে জানিয়েছে। সেইসঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও রাজধানীসহ সারাদেশে কঠোর অবস্থানে থাকবে বলেও জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। অপরদিকে আজ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এলাকার নিরাপত্তা জোরদারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সেনা মোতায়েন থাকবে বলে জানা গেছে।
জানা যায়, চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় পাঁচটি অভিযোগ এনেছে প্রসিকিউশন। গত ১২ মে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা প্রতিবেদন জমা দেয়। এর আগে গত ১০ জুলাই মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলায় শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। এক পর্যায়ে এই মামলায় দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে (অ্যাপ্রুভার) রাজসাক্ষী হতে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের করা আবেদন মঞ্জুর করেন ট্রাইব্যুনাল। পরবর্তী সময়ে এই মামলার রাজসাক্ষী হয়ে সাক্ষ্য দেন তিনি।

রাজধানীসহ আশেপাশের জেলায় বিজিবি মোতায়েন। ছবি: সারাবাংলা
গত ২৩ অক্টোবর মামলায় অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান সমাপনী বক্তব্য দেন। তিনি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রার্থনা করেন। পরে আসামিপক্ষের আইনজীবীর বক্তব্যের জবাব দেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তিনিও শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের সর্বোচ্চ শাস্তি চান। অ্যাটর্নি জেনারেল ও চিফ প্রসিকিউটরের বক্তব্যের জবাব দেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। তিনি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের খালাস প্রার্থনা করেন। পরে ট্রাইব্যুনাল মামলার রায় কবে দেয়া হবে, তা আগামী ১৩ নভেম্বর জানানো হবে বলে জানান।
এদিকে রায়ের তারিখ নির্ধারণকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের ডাকা ‘লকডাউন কর্মসূচি’ ঘিরে রাজধানীতে একের পর এক ককটেল বিস্ফোরণ ও বাসে অগ্নিসংযোগ ঘটনা ঘটছে। পুলিশ বলছে, ঢাকার বাইরে থেকে এসে এসব নাশকতা করা হচ্ছে। অনেকক্ষেত্রে এসব কাজে ভাড়ায় লোক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এমন অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে ঢাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। তবে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ১৩ নভেম্বরের কর্মসূচি ঘিরে জনমনে যে ভীতি ছড়ানোর চেষ্টা চলছে, তাতে শঙ্কার কিছু নেই বলে আশ্বস্ত করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী।
অপরদিকে আওয়ামী লীগের লকডাউন কর্মসূচি নিয়ে বুধবার (১২ নভেম্বর) বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ নির্বাচনি রেসে নেই, তাদের নেত্রীও নেই। সুতরাং তাদের কর্মসূচি নিয়ে আলোচনার কিছু নেই। তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কনসার্নে থাকার মতোই বিষয়। বাহিনীগুলো কঠোর অবস্থানে থাকবে এটাই প্রত্যাশা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও শক্ত অবস্থান নিতে হবে।’ তবে আওয়ামী লীগ ছাড়াও যে কেউ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করতে পারে জানিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি শক্ত অবস্থান নিতে সরকারের প্রতিও আহ্বান জানান তিনি।
আর জাতীয় নাগরিক পার্টির (এসসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগকে প্রতিরোধের আহ্বান জানিয়েছেন। এনসিপির নেতা–কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, ‘যেখানেই আওয়ামী লীগ দেখবেন, আওয়ামী লীগের আগুন সন্ত্রাস দেখবেন বা জনগণের ক্ষতি করার পরিকল্পনা দেখবেন, তাদের ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেবেন।’
আবার আওয়ামী লীগের নাশকতা প্রতিরোধে আট দল সরকারের পাশে থাকতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। জামায়াত কর্মীরা ১৩ নভেম্বর মাঠে থাকবে বলেও জানান তিনি। বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগের যেকোনো নাশকতা রুখে দেয়ার কথা বলা হয়েছে।
আর বাংলাদেশে জুলাই আন্দোলনে পরাজিত শক্তির কোনো ঠাঁই হবে না জানিয়ে তাদের আস্তাকুঁড়ে ফেলার কথা বলেছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক। এদের বাইরেও জুলাই আন্দোলনকে ঘিরে গড়ে ওঠা বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শক্তিকে রাজপথে প্রতিহতের ঘোষণা দিয়েছে।