ঢাকা: রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর মীরহাজীরবাগে চোর সন্দেহ বাপ্পি (১৫) নামে এক কিশোরকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। বুধবার (১২ নভেম্বর) মীরহাজীরবাগ আবু হাজী মসজিদ গলির একটি বাসায় এই ঘটনা ঘটে।
বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) খবর পেয়ে পুলিশ মরদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়।
নিহত বাপ্পির বড় ভাই মো. পারভেজ জানান, তাদের বাড়ি বাগেরহাট জেলার শরণখোলা উপজেলার কদমতলা গ্রামে। তার বাবা মো. শাহজাহান একজন রিকশাচালক। আর মা পারুল বেগম কারখানা কর্মচারী। বর্তমানে ধোলাইপাড় প্রেম গলির মজিবর মুন্সির বাড়িতে থাকেন তারা। বাপ্পিও মায়ের সঙ্গে একই কারখানায় কাজ করতো।
পারভেজ আরও জানান, মঙ্গলবার রাত আনুমানিক ২টার দিকে একই এলাকার কাপশি রাসেল, মোল্লা শুভ, ও শাকিব নামে তিনজন তাদের বাসায় এসে বাপ্পিকে ধরে নিয়ে যায়। এ সময় তারা বলতে থাকেন, মীরহাজীরবাগের একটি বাসায় জানালা দিয়ে টাকা ও বিদ্যুতের মিটারের প্রিপেইড কার্ড চুরি করেছে বাপ্পি। পরে বাপ্পিকে ধরে নিয়ে মীরহাজীরবাগের আবু হাজী মসজিদ গলির একটি বাসার নিচ তলায় ক্লাব ঘরে আটকে রাখে তারা। সেখানে রাতভর পেটায় তাকে। বুধবার সকাল ৬টার দিকে আবার বাপ্পিকে নিজের বাসায় ফেরত নিয়ে আসে এবং বলে চুরির টাকা ও মালামাল নিয়ে তাকে বাসা থেকে বের করে দিতে। তখন কিছু না পেয়ে আবারও বাপ্পিকে নিয়ে যায়।
পারভেজ বলেন, বাসা থেকে নিয়ে যাওার সময় বাপ্পিকে ছাড়াতে তার মা পিছু পিছু গেলে তার মাকেও ওই বাসার নিচে পাইপ দিয়ে পিটিয়ে আহত করে তারা। এরপর বুধবার সারাদিন সেখানে আটকে রেখে মারধর করে। এরপর বাপ্পি যখন নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছিল তখন সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার দিকে বাপ্পিকে মীরহাজীরবাগ বড় বাড়ি প্রথম গেট, সাইফুল মিয়ার বাড়ির সামনের রাস্তায় ফেলে রেখে যায়। খবর পেয়ে সেখানে ছুটে যায় পরিবার। তখনও ছটফট করছিল বাপ্পি। সেখান থেকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যায় বাপ্পি।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে বাপ্পীর বাবা রিকশা চালক মো. শাহজাহান বলেন, ‘আমার ছেলে যদি কোন অপরাধ করেও থাকে, তাহলে মারধর করার পর পুলিশের কাছে তুলে দিত। এইভাবে নির্যাতন করে মেরে ফেলল কেন? আমরা এর বিচার চাই।’
এদিকে, যাত্রাবাড়ী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আসাদুজ্জামান জুয়েল জানান, চোর সন্দেহে বাপ্পি নামে ওই কিশোরকে বাসা থেকে ডেকে এনে দীর্ঘ সময় অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে। নির্যাতনের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে বলে প্রথমিক তদন্তে জানা গেছে। বিস্তারিত তদন্ত চলছে।
এসআই আরও জানান, এই ঘটনায় নিহত বাপ্পির মা বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। যার বাসায় চুরির সন্দেহে বাপ্পিকে ডেকে নেওয়া হয়েছে, ওই নারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অভিযুক্ত ওই নারী হলেন ফৌজিয়া রওশন আক্তার প্রিতি। বাকি ৫-৬ জন আসামিকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।