ঢাকা: জাতীয় নাগরিক কমিটির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বলেছেন, ‘জুলাই সনদ আদেশ ঘোষণার মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে দীর্ঘমেয়াদি সংকটে ফেলে দেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক দলের উচিত, জনগণের স্বার্থ মাথায় রেখে কাজ করা। সরকার ও প্রধান উপদেষ্টা দায় এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।’
বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীতে ‘জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘নতুন রাজনীতি আনতে পারিনি। অর্থ ও পেশিশক্তির প্রভাবের রাজনীতি এখনও চলছে। আদর্শ ও নীতিনির্ভর রাজনীতি ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছে।’
বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে তুলনামূলক বিশ্লেষণে এনে সামান্তা বলেন, ‘আমরা ভারত ও পাকিস্তানের রাজনীতির মধ্যে আছি।’
রাজনৈতিক কৌশল এবং সাংবিধানিক প্রক্রিয়ার তীব্র সমালোচনা করে এনসিপির এই সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক বলেন, ‘সাংবিধানিক সংকট শেখ হাসিনার পছন্দের শব্দ ছিল। কিন্তু আজ যে প্রক্রিয়া চলছে, তা আরও গভীর সংকটের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।’
তিনি বর্তমান পরিস্থিতিকে ‘দ্বিমুখী খেলা’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘একদিকে আমরা আওয়ামী লীগকে রাজপথে ঠেকানোর চেষ্টা করছি, অন্যদিকে একই আওয়ামী লীগের রাষ্ট্রপতি দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আদেশ জারির স্বাক্ষর করানো হচ্ছে।’
তিনি হুঁশিয়ারি দেন যে এই ধরনের সাংবিধানিক দ্বৈততা ‘বাংলাদেশে দীর্ঘ মেয়াদে অচলাবস্থা সৃষ্টি করবে।
এর আগে জাতীয় জুলাই সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ-২০২৫ জারি করে সরকার। বৃহস্পতিবার আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগ থেকে এ-সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করা হয়। একই দিনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন আদেশে সই করেন। এর আগে উপদেষ্টামণ্ডলীর সভায় ‘জুলাই জাতীয় সনদ সংবিধান সংস্কার বাস্তবায়ন আদেশ-২০২৫’ অনুমোদন দেয় উপদেষ্টা পরিষদ।
এই আদেশের মাধ্যমে সংবিধান সংস্কারের প্রস্তাবগুলো এখন গণভোটে তোলা হবে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মধ্যস্থতায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে চূড়ান্ত করা সংস্কার প্রস্তাবগুলোর ওপর জনগণের মতামত নেওয়া হবে এই গণভোটের মাধ্যমে।
উল্লেখ্য, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নিয়ে গত ২৮ অক্টোবর জাতীয় ঐকমত্য কমিশন অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দুটি বিকল্প সুপারিশ জমা দেয় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
এর আগে গত ১৭ অক্টোবর বিএনপি, জামায়াতসহ ২৪টি রাজনৈতিক দল জুলাই জাতীয় সনদে সই করে। ওইদিন বিকেলে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় দলগুলোর প্রতিনিধিরা বহুল প্রত্যাশিত জুলাই সনদে সই করেন।