খুলনা: আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কোনো ষড়যন্ত্রই সফল হবে না উল্লেখ করে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য জহির উদ্দিন স্বপন বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টা, সেনাপ্রধান এবং জনগণের শক্তির ঐক্যের মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয়ে গেছে আগামী ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন কেউ ঠেকাতে পারবে না।
শনিবার (১৫ নভেম্বর) বিকালে খুলনা-৩ আসনে বিএনপি মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী রকিবুল ইসলাম বকুলের সমর্থনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল খানজাহান আলী থানা শাখার উদ্যোগে ফুলবাড়ী গেট চত্বরে আয়োজিত এক বিশাল শ্রমিক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জহির উদ্দীন স্বপন বলেন, গত ১৭ বছর ধরে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনে দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে প্রহসনে পরিণত করা হয়েছিল। দেশের মালিকানা জনগণের হাত থেকে কেড়ে নিয়ে একটি পরিবারের হাতে কুক্ষিগত করা হয়েছিল। কিন্তু এদেশের তরুণ ছাত্র-জনতা বিএনপির তৈরি করা জমিনের ওপর দাঁড়িয়ে সেই স্বৈরাচারকে ক্ষমতা থেকে লাথি মেরে বের করে দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আমাদের ১৭ বছরের ত্যাগ এবং ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাদের শক্তির একমাত্র উৎস হলো বিএনপিসহ সকল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের নৈতিক সমর্থন।’
প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানিয়ে স্বপন বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস জাতিকে আশ্বস্ত করেছেন যে ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন হবে। এই ঘোষণার মাধ্যমে তিনি জনগণকে শঙ্কা থেকে মুক্তি দিয়েছেন। আমরা তাকে ধন্যবাদ জানাই।’
নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্রকারীদের সতর্ক করে তিনি বলেন, ‘যারা নির্বাচন নিয়ে চক্রান্ত করছেন, নির্বাচনকে পিছিয়ে দেওয়ার তালবাহানা করছেন, তারা শুনে রাখুন—যারা নির্বাচনের বিরোধিতা করবে, তারা শুধু গণতন্ত্রের শত্রু নয়, তারা দেশেরও শত্রু।’
খুলনা-৩ আসনের বিএনপি প্রার্থী রকিবুল ইসলাম বকুলকে একজন যোগ্য নেতা হিসেবে উল্লেখ করে স্বপন বলেন, ‘বকুল শুধুমাত্র আপনাদের প্রার্থী নয়, সে আমাদের দলের অন্যতম নীতিনির্ধারক। জাতীয় রাজনীতি ও জনগণের চিন্তা নিয়ে কাজ করার সকল যোগ্যতা তার আছে। তাকে পার্লামেন্টে পাঠাতে পারলে শুধু এলাকার উন্নয়নই হবে না, জাতীয় পর্যায়েও আপনারা সম্মানিত হবেন।’
ভোটারদের প্রতি বিশেষ আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘এবারের নির্বাচন শুধু সরকার গঠনের প্রশ্ন নয়, এর ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে উচ্চকক্ষের আসন বণ্টন হবে। তাই ধানের শীষ জিতবে কি জিতবে না, এই আলোচনার সময় এখন নয়। কিন্তু ধানের শীষ শতকরা ৬০ ভাগ ভোট পেল কি পেল না—এই লক্ষ্য আমাদের অর্জন করতে হবে। বকুলকে সর্বোচ্চ ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী করতে হবে।’
সমাবেশে প্রধান বক্তার বক্তব্যে রকিবুল ইসলাম বকুল বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আপোষহীন নেত্রী, তিনি কখনো রাজপথ ছেড়ে যাননি। একজন নেত্রী জনগণকে ফেলে রেখে ক্ষমতা দখলের এই সংগ্রামে আপোস করেননি।
খুলনার বন্ধ জুটমিলগুলোর উদাহরণ টেনে তিনি পূর্ববর্তী সরকারের সমালোচনা করে বলেন, ‘লুটপাট করে জনগণকে নিঃস্ব করে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যেই তারা কাজ করেছে। আমাদের এই খুলনার জুটমিলগুলো সব বন্ধ করে দিয়ে, লুটপাট করে এখান থেকে সব সম্পদ বিভিন্ন দেশে পাচার করে দিয়েছে।’
নির্বাচন নিয়ে কোনো ষড়যন্ত্র হলে তার পরিণতি ভয়াবহ হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বকুল বলেন, ‘যারা জনগণের ভোট ছাড়াই নির্বাচন করেছিলেন, তাদের কি পরিণতি হয়েছিল জনগণের ভয়ে বাড়ির পিছন দিক দিয়ে হেলিকপ্টারে করে পালিয়ে যেতে হয়েছিল।’
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন খানজাহান আলী থানা শ্রমিক দলের সভাপতি কাজী শহিদুল ইসলাম এবং সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক জিয়াদুল ইসলাম।
সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন-খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি এডভোকেট শফিকুল আলম মনা, সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিন, খানজাহান আলী থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি মীর কায়ছেদ আলী, খানজাহান আলী থানা বিএনপির সভাপতি কাজী মিজানুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ হাওলাদার আব্বাস,সাংগঠনিক সম্পাদক মোল্লা সোহাগ হোসেন।
আরও উপস্থিত ছিলেন খুলনা মহানগর শ্রমিক দলের আহবায়ক মো. মজিবুর রহমান এবং সদস্য সচিব শফিকুল ইসলাম শফিক। এছাড়া বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা সমাবেশে অংশ নেন।