জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ সোমবার (১৭ নভেম্বর) গাজা উপত্যকায় টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠা ও ধ্বংসস্তূপ পুনর্গঠনের লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র প্রণীত একটি প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। ১৫ সদস্যবিশিষ্ট পরিষদে প্রস্তাবটির পক্ষে ১৩টি ভোট পড়ে, আর রাশিয়া ও চীন ভোটদানে বিরত থাকে। তারা ভেটো প্রয়োগ না করায় প্রস্তাবটি সহজেই গৃহীত হয়।
এই প্রস্তাবের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফা গাজা পরিকল্পনাকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। ওই পরিকল্পনার কিছু অংশ গত মাসে গাজায় কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতির ভিত্তি গঠন করেছিল।
খসড়া অনুযায়ী, প্রস্তাবে একটি অন্তর্বর্তী কর্তৃপক্ষ হিসেবে ‘বোর্ড অব পিস’ গঠনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি গাজায় অস্থায়ীভাবে একটি আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী (আইএসএফ) গঠনের বিষয়েও সম্মতি দেওয়া হয়েছে। ট্রাম্প জানান, শিগগিরই বোর্ডের সদস্যদের নাম ঘোষণা করা হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতিসংঘ দূত মাইকেল ওয়াল্টজ বলেন, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ ইন্দোনেশিয়া, আজারবাইজানসহ বিভিন্ন দেশের অংশগ্রহণে গঠিত এই আইএসএফ গাজায় মোতায়েন হয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে, নিরস্ত্রীকরণ তদারকি করবে, বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা দেবে এবং নিরাপদ করিডরের মাধ্যমে মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে সহায়তা করবে। ভোটের আগেই ওয়াল্টজ সতর্ক করে বলেন, ‘এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট মানে যুদ্ধের দিকে ফিরে যাওয়া।’
তবে প্রস্তাব পাস হলেও এর বাস্তবায়ন নিয়ে বহু প্রশ্ন রয়ে গেছে। কবে এবং কীভাবে অন্তর্বর্তী কর্তৃপক্ষ ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে দায়িত্ব হস্তান্তর করবে তা স্পষ্ট নয়। খসড়ায় শুধু বলা হয়েছে, সংস্কার কর্মসূচি সন্তোষজনকভাবে সম্পন্ন হলে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে। বোর্ড অব পিস ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক উপস্থিতির মেয়াদ ২০২৭ সালের শেষ পর্যন্ত অনুমোদিত হয়েছে।
প্রস্তাবে হামাসসহ অন্যান্য গোষ্ঠীর নিরস্ত্রীকরণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যা ইসরায়েলের প্রধান দাবি। এছাড়া গাজার পুনর্গঠনের দায়িত্বও বোর্ডের ওপর ন্যস্ত থাকবে। খসড়ায় ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রসঙ্গ থাকলেও এর সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়নি।
রাশিয়ার প্রতিনিধি সতর্ক করে বলেন, প্রস্তাবটি যেন দুই রাষ্ট্র সমাধানের মৃত্যুবার্তা না হয়। চীনের প্রতিনিধি অভিযোগ করেন, প্রস্তাবে ফিলিস্তিনের উপস্থিতি ও সার্বভৌমত্ব যথেষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়নি। সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে বোর্ড এবং আইএসএফকে জনবল, সরঞ্জাম ও অর্থ সহায়তা দেওয়ার আহ্বানও জানানো হয়েছে।