Saturday 22 Nov 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জামায়াত আমিরের আশঙ্কা
নির্বাচন-গণভোট একসঙ্গে হলে ‘নির্বাচনের জেনোসাইড’ হবে

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২২ নভেম্বর ২০২৫ ১৮:৫৫ | আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০২৫ ২০:১৩

সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। ছবি: সারাবাংলা

চট্টগ্রাম ব্যুরো: জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং গণভোট একসঙ্গে হলে ‘নির্বাচনের জেনোসাইড’ হওয়ার আশঙ্কা দেখছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। তারপরও তিনি বলেছেন, তারা নির্বাচন নিয়ে কোনো সংকট তৈরি হতে দেবেন না।

শনিবার (২২ নভেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রাম সফরে এসে নগরীর প্যারেড ময়দানে সাংবাদিকদের একথা বলেন জামায়াতে ইসলামীর আমির।

নির্বাচনের দিন গণভোট প্রসঙ্গে জামায়াতের অবস্থান জানতে চাইলে দলটির আমির বলেন, ‘এটা আমরা ভালোভাবে দেখছি না। আমরা আগেই বলেছি, নির্বাচনের দিন গণভোট হলে নির্বাচনের জেনোসাইড হওয়ার আশঙ্কা আছে।’

সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন নিয়ে জামায়াতের সুর নরম হয়েছে বলে বিএনপির বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘দেখেন, আমাদের এত পজেটিভ চিন্তা, আমরা জাতির জন্য কী করব, সেগুলো বলতে বলতেই আমাদের সময় চলে যায়। কাউকে খোঁচা দেওয়া বা কারও খোঁচার জবাব দেওয়ার সময় আমাদের নেই। আমাদের অবস্থান পরিষ্কার। আমাদের দাবি অব্যাহত। এই দাবি বাস্তবায়ন হবে জনগণের স্বার্থে। কথা দিচ্ছি, আমরা ক্ষমতায় গেলে সেই পিআর আমরা বাস্তবায়ন করব, ইনশল্লাহ।’

বিজ্ঞাপন

লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড না থাকলেও নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে মত দিয়ে তিনি বলেন, ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড আমাদের তৈরি করতে হবে। আমাদের মানে সবাইকে নিয়ে। সবাই তৈরি থাকুন, এ নির্বাচন হতে হবে। এ নির্বাচন না হলে দেশে সংকট দেখা দেবে। আমরা কোনো সংকট তৈরি হতে দেব না ইনশল্লাহ।’

জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচনের দাবি প্রসঙ্গে জামায়াতের আমির বলেন, ‘আমরা এখন স্থানীয় নির্বাচনের কথা বলছি না, কারণ এটা সম্ভব নয়। আমরা অবাস্তব কোনো দাবি কখনো পেশ করিনি, করবও না।’

জামায়াত নির্বাচনি কোনো জোট করবে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা এটা ক্লিয়ার করেছি যে, আমরা কনভেনশনাল কোনো জোট করব না। কিন্তু অনেকগুলো দল এবং শক্তির সঙ্গে আমাদের নির্বাচনি সমঝোতা হবে ইনশল্লাহ।’

চট্টগ্রামের সব আসনে জামায়াত প্রার্থীর জয়ের জন্য কোনো বার্তা আছে কি-না? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি চট্টগ্রামের সকল আসনে জামায়াতের প্রার্থী জয়ের কোনো বার্তা দেব না, আমি জনগণের বিজয়ের বার্তা দেব। আমি জামাতের বিজয় চাচ্ছি না, আমি জনগণের বিজয় চাচ্ছি।’

এর আগে, বিকেল পৌনে ৪টার দিকে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানকে বহনকারী হেলিকপ্টারে চট্টগ্রাম নগরীর প্যারেড ময়দানে অবতরণ করে। সেখানে তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন।

সাংবাদিকদের উদ্দেশে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমি একটা মাদরাসার বার্ষিক মাহফিলে দাওয়াত পেয়েছি, সেখানে উনাদের সম্মানিত করতে এসেছি। এর আগে দক্ষিণবঙ্গের নেছারাবাদ মাদরাসার বার্ষিক মাহফিলে দাওয়াত পেয়ে সেখানে গিয়েছিলাম, সেখান থেকে এখানে এসেছি। বাংলাদেশে এই একটা জেলার নামের আগে বীর শব্দ ব্যবহার হয়, এটার নাম চট্টগ্রাম, অবশ্য বীর চট্টগ্রাম বলা হয় না, বলা হয় বীর চট্টলা। আসলে ইতিহাসটা বীরত্বের ইতিহাস।’

বাংলাদেশ এখন ইতিহাসের একটা বাঁকে এসে দাঁড়িয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আমরা সাতচল্লিশ পার হয়ে এসেছি, বায়ান্ন পার হয়ে এসেছি, একাত্তর পার হয়ে এসেছি, এখন আমরা দাঁড়িয়েছি চব্বিশের কোলে। বারবার এ জাতির সামনে সুযোগ এসেছে। কিন্তু সুযোগের উত্তম ব্যবহার যাদের করার কথা ছিল, তারা সেটা না করে সুযোগের অপব্যবহার করেছে। যার কারণে এ অঞ্চল দুই-দুইবার স্বাধীনতার আলো দেখার পরও সেই আলো অনেকটা নিভু নিভু হয়ে গেল।’

‘দ্বিতীয় স্বাধীনতার আজ ৫৪ বছর। এই দীর্ঘ পথপরিক্রমায় একটা জাতির বহুদূর এগিয়ে যাবার কথা ছিল। সম্পদের লীলাভূমি এই চট্টগ্রাম, বিশেষ করে বাংলাদেশ। কিন্তু আমরা সেই সম্পদের উপকারভোগী হতে পারলাম না কেন? কিছু লোক জনগণের সম্পদ লুণ্ঠন করে তাদের পকেট ভারী করেছে। কিন্তু কার্যত জনগণ সেই উন্নয়নের মুখ দেখেনি।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়েছে। নতুনভাবে শিল্পকারখানা হচ্ছে না। আমাদের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ ব্যাপক থাকা সত্ত্বেও চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম। সবকিছু একটাই কারণ। বিচক্ষণ, আন্তরিক, দেশপ্রেমিক ও সৎ নেতৃত্বের অভাব। এই চারটি উপাদান না থাকায় দেশ বারবার মুখ থুবড়ে পড়ছে। সুযোগ এসেছে, হারিয়ে গেছে। আমরা ২০২৪-এর এই সুযোগ আর হারাতে চাই না। এই সুযোগের ষোল আনা সদ্ব্যবহার আমরা করতে চাই।’

‘কোনো দল নয়, গোটা জাতি, আপামর জনগণ এই দেশের মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান সকলের জন্য। আরও যারা জাতি-উপজাতি সকলের জন্য, এই বাংলাদেশের সীমানায় যারা বসবাস করে সবার জন্য। আমরা সবার কণ্ঠ হতে চাই। এজন্য আমরা আল্লাহর নামে ঘোষণা করেছি, আমাদের যুদ্ধ হবে এ দেশকে সত্যিকারের মুক্তির স্বাদ এনে দেওয়ার জন্য। যুদ্ধ হবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে। এ যুদ্ধ হবে আপসহীন। এ যুদ্ধে ইনশল্লাহ আমরা কারও কাছে মাথানত করবো না। গন্তব্যে না পৌঁছা পর্যন্ত কেউ আমাদের থামাতে পারবে না, আমরা ইনশল্লাহ থামবো না।’

জামায়াতের আমির আরও বলেন, ‘কারও কাছে আমরা আমাদের রাজনীতি ইজারা দিতে চাই না। কোনো দল নয়, কোনো পরিবার নয়। এদেশের মালিক এদেশের জনগণ। আমরা জনগণের হাতে জনগণের অধিকার তুলে দিতে চাই। দুর্নীতির জট যদি খুলে ফেলা যায়, তাহলে সমাজের উন্নয়নের অন্যান্য জটগুলোও খুলে ফেলা যাবে, ইনশল্লাহ। আবারও ঘোষণা করছি, আমরা কোনো অপশক্তির কাছে মাথানত করবো না। এই মাথা নত হবে শুধুমাত্র রাব্বুল আলামীনের সামনে।’

এ সময় জামায়াতে ইসলামীর চট্টগ্রাম মহানগর, দক্ষিণ ও উত্তর জেলার নেতারা আমিরের সঙ্গে ছিলেন।

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর