Tuesday 25 Nov 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বেরোবি শিক্ষার্থীর জানাজায় যেতে ‘বাস না দেওয়ায়’ ক্যাম্পাসে ক্ষোভ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২৫ নভেম্বর ২০২৫ ১৯:৫১

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর। ছবি কোলাজ: সারাবাংলা

রংপুর: রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) অর্থনীতি বিভাগের ১৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী শিপন আহমেদের বিদ্যুতায়িত হয়ে অকাল মৃত্যুর পর ক্যাম্পাসজুড়ে শোকের ছায়া নেমেছে। কিন্তু তার জানাজায় যাওয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে বাসের অনুরোধ করেও সহায়তা না পাওয়ায় শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।

গতকাল সোমবার (২৪ নভেম্বর) অর্থনীতি বিভাগের ২০২৪-২৫ সেশনের (১৭তম ব্যাচ) শিক্ষার্থী শিপন আহমেদ তার বগুড়ার বাসায় বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা যান। তার মৃত্যুর খবর ক্যাম্পাসে ছড়াতেই সহপাঠীরা জানাজায় যাওয়ার পরিকল্পনা করেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহণ পুলের কাছে বাসের অনুরোধ জানান। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো সহায়তা না পাওয়ায় তারা নিজেদের খরচে একটি বাস ভাড়া করে জানাজায় অংশ নেয়। এই ঘটনা ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে উঠেছে, যেখানে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনকে ‘অমানবিক’ বলে অভিহিত করছেন।

বিজ্ঞাপন

অভিযোগকারী এক শিক্ষার্থীর ফেসবুক পোস্টে লেখা হয়েছে, ‘আজ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বকনিষ্ঠ ১৭ ব্যাচের ছাত্র শিপন আহমেদকে শেষবারের মতো বিদায় জানানোর জন্য যখন আমরা তার বাসায় যাওয়ার প্রয়োজন অনুভব করলাম, তখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো পরিবহণ সুবিধা দেওয়া হলো না। তাহলে প্রশ্ন ওঠে, এই বিপুলসংখ্যক বাস রাখার উদ্দেশ্য কী, যদি শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে সংকটময় মুহূর্তে সেগুলো নিষ্ক্রিয় পড়ে থাকে? শিক্ষার্থীদের ‘পালস’ বুঝতে না পারলে, তাদের চাহিদাকে মূল্যায়ন করতে না পারলে, দায়িত্ব গ্রহণের নৈতিক ভিত্তিটাই বা কোথায় দাঁড়ায়? শুধু আশ্বাস, দুঃখপ্রকাশ আর বিবৃতিতে দায়িত্ব শেষ হয় না। বাস্তব সেবা, সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত এবং মানবিক উপস্থিতিই প্রশাসনের প্রকৃত পরীক্ষার মাপকাঠি। আমাদের ভাইয়ের বিদায় এমনিতেই হৃদয়বিদারক; তার ওপর প্রশাসনিক উদাসীনতা আরও ক্ষতের সৃষ্টি করেছে।’

অর্থনীতি বিভাগ ছাত্র সংসদের জেনারেল সেক্রেটারি মেহেদী হাসান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানিয়েও এ রকম স্পর্শকাতর বিষয়ে বাস দিতে অস্বীকৃতি জানানো খুবই দুঃখজনক। আমরা প্রশাসনের সহযোগিতা না পেয়ে নিজেদের অর্থায়নে শিপনের জানাজায় যাওয়ার জন্য একটি বাস ভাড়া করেছি। এটা শিক্ষার্থীদের প্রতি প্রশাসনের অবহেলার প্রমাণ।’

ক্ষোভ প্রকাশ করে অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস (এআইএস) বিভাগের শিক্ষার্থী আহমাদুল হক আলবীর বলেন, ‘কেমন অথর্ব প্রশাসন! বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটি বাস ম্যানেজ করে দিতে পারে না। ১৭ ব্যাচের একজন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে, তার জানাজায় অংশ নিতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের জন্যও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। প্রশাসন যেন কৃত্রিম; তাদের তো মানবিকতা নেই।’

বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী জাকির জীম বলেন, ‘মুলার প্রশাসন এখন পর্যন্ত যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে, প্রায় সবগুলো শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। প্রশাসনিক ভবনে গিয়ে আন্দোলন না করলে একটা যৌক্তিক দাবিও আদায় হয় না।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহণ পুলের পরিচালক মো. মাসুদ রানা বলেন, ‘পরিচালক হিসেবে গাড়ি দেওয়ার এখতিয়ার আমার নেই। সর্বোচ্চ ৫০ কিমি দূরত্ব পর্যন্ত গাড়ি দেওয়ার এখতিয়ার পরিচালকের, তা-ও সেটি অফ ডে, অফিস কার্যক্রম চালু থাকার দিনে নয়। রুট বন্ধ করে গাড়ি দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তবে একটি ১৬ সিটের মাইক্রোবাসের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে।’

প্রশাসনের এই অবস্থান শিক্ষার্থীদের মধ্যে আরও ক্ষোভ বাড়িয়েছে। বিশেষ করে যখন ক্যাম্পাসে ছাত্রসংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে। শিপনের মৃত্যু ক্যাম্পাসে শোকের পরিবেশ সৃষ্টি করেছে, এবং শিক্ষার্থীরা আশা করছেন, প্রশাসন পরবর্তী সময়ে মানবিক সিদ্ধান্ত নেবে এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনায় দ্রুত সহায়তা দেবে।

সারাবাংলা/পিটিএম
বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর