চট্টগ্রাম ব্যুরো: ইসকনের সাবেক সংগঠক চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর আদালতে হাজিরা নিয়ে সংঘর্ষের মধ্যে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যাকাণ্ডের একবছর পূর্ণ হলো আজ বুধবার (২৬ নভেম্বর)। তবে একবছরেও বিচার কাজে দৃশ্যমান অগ্রগতি না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন আলিফের বাবা জামাল উদ্দিন।
চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানায় দায়ের হওয়া রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় ২০২৪ সালের ২৫ নভেম্বর রাতে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ইসকনের বহিষ্কৃত সংগঠক ও সনাতনী জাগরণ জোট নামে একটি সংগঠনের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতার করে ডিএমপির গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। পরদিন ২৬ নভেম্বর তাকে চট্টগ্রাম আদালতে হাজির করা হলে বিচারক কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
কারাগারে পাঠানোর নির্দেশনাকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে ত্রাস সৃষ্টি করে চিন্ময়ের অনুসারীরা। প্রায় তিনঘণ্টা তাকে বহনকারী প্রিজন ভ্যান আদালত এলাকায় আটকে রাখে তারা। এক পর্যায়ে পুলিশ, বিজিবি লাঠিপেটা ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। তখনই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। পরবর্তী সময়ে নগরীর লালদিঘীর পাড় থেকে কোতোয়ালি এলাকায় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে।
সংঘর্ষের সময় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে আদালত প্রাঙ্গণের অদূরে নগরীর বাণ্ডেল সেবক কলোনির সামনে নৃশংসভাবে কুপিয়ে খুন করা হয়। এ ঘটনায় ২৯ নভেম্বর আলিফের বাবা জামাল উদ্দিন নগরীর কোতোয়ালি থানায় ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ১০-১৫ জনকে আসামি করে মামলা করেন। আসামিরা সবাই চিন্ময়ের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
তবে জামাল উদ্দিনের করা মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর নাম ছিল না। চলতি বছরের ৫ মে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তদন্তে সম্পৃক্ততা পাওয়ার তথ্য উল্লেখ করে চিন্ময়কে ওই মামলায় গ্রেফতার দেখানোর জন্য আদালতে আবেদন করেন। আদালত গ্রেফতার দেখানোর আদেশ দেন।
এরপর ১ জুলাই চিন্ময়কে প্রধান আসামি করে ৩৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। তবে অভিযোগপত্র গ্রহণের শুনানিতে আদালত মামলা থেকে একজন আসামির অব্যাহতির জন্য তদন্ত কর্মকর্তার সুপারিশ নাকচ করেন। ফলে এখন ওই মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি ৩৯ জন।
চিন্ময় বাদে বাকি আসামিরা হলেন- চন্দন দাস মেথর, রিপন দাস, রাজীব ভট্টাচার্য্য, শুভ কান্তি দাস, আমান দাস, বুঞ্জা, রনব, বিধান, বিকাশ, রমিত প্রকাশ দাস, রুমিত দাস, নয়ন দাস, ওমকার দাস, বিশাল, লালা দাস, সামীর, সোহেল দাশ রানা, শিব কুমার, বিগলাল, পরাশ, গণেশ, ওম দাস, পপি, অজয়, দেবীচরণ, দেব, জয়, লালা মেথর, দুর্লভ দাস, সুমিত দাস, সনু দাস, সকু দাস, ভাজন, আশিক, শাহিত, শিবা দাস, দ্বীপ দাস ও সুকান্ত দত্ত।
চট্টগ্রাম মহানগর আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মো রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী সারাবাংলাকে জানান, অভিযোগপত্রের ৩৯ আসামির মধ্যে ২১ জন গ্রেফতার হয়েছেন। ১৮ জন এখনও পলাতক। মামলাটি বিচারের জন্য প্রস্তুত করে দায়রা জজ আদালতে পাঠানোর প্রক্রিয়াধীন আছে। আগামী ১ ডিসেম্বর মামলার নির্ধারিত সময় আছে।
আলিফের বাবা জামাল উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার ছেলেটাকে দিনে-দুপুরে সবার সামনে কুপিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। একবছর হয়ে গেল, অথচ আমি এখনো বিচার পেলাম না। আমি দ্রুত বিচার চাই। মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে নিয়ে বিচার যেন তাড়াতাড়ি শেষ হয়, আমি সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি। অনেক আসামি এখনো পলাতক আছে। তাদের পুলিশ ধরতে পারছে না কেন? তাদের দ্রুত গ্রেফতার করা হোক।’
এদিকে আলিফ হত্যাকাণ্ডের প্রথম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি। সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুস সাত্তার সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, বুধবার (২৬ নভেম্বর) সকাল ১০টায় আইনজীবী ভবনের সামনে দ্রুত বিচারের দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হবে। বিকেল ৩টায় সমিতির অডিটোরিয়ামে স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিল আয়োজন করা হয়েছে।