ঢাকা: বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের মিডিয়া ফেলোশিপ পেয়েছেন সারাবাংলা ডটনেটের সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট এমদাদুল হক তুহিন। ‘ফ্লেভার আসক্তিতে তরুণ-তরুণীরা, জনস্বাস্থ্যে ঝুঁকি বাড়াচ্ছে সুগন্ধি সিগারেট’ শীর্ষক প্রতিবেদনের জন্য জাতীয় ক্যাটাগরিতে তিনি এই ফেলোশিপ অর্জন করেছেন। একইসঙ্গে আঞ্চলিক ক্যাটাগরিতে ফেলোশিপ পেয়েছেন ঢাকা ট্রিবিউন ও বাংলা ট্রিবিউনের খুলনা প্রতিনিধি মো. হেদায়েৎ হোসেন মোল্লা।
বুধবার (২৬ নভেম্বর) রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট ও ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট’র যৌথ উদ্যোগে ‘আইনের সীমাবদ্ধতা: সুযোগ নিচ্ছে তামাক কোম্পানি’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের প্রাপ্ত বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরা হয়। এতে ‘ফ্লেভার আসক্তিতে তরুণ-তরুণীরা, জনস্বাস্থ্যে ঝুঁকি বাড়াচ্ছে সুগন্ধি সিগারেট’ শীর্ষক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের প্রাপ্ত তথ্য ও সুপারিশ পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে তুলে ধরেন সারাবাংলা’র সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট এমদাদুল হক তুহিন।
‘চটকদার বিজ্ঞাপনে সিগারেট বিক্রি বাড়াচ্ছে কোম্পানিগুলো’ শীর্ষক প্রতিবেদনের প্রাপ্ত বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন ঢাকা ট্রিবিউন ও বাংলা ট্রিবিউনের খুলনার প্রতিনিধি মো. হেদায়েৎ হোসেন মোল্লা। পরে প্রতিবেদন দু’টির ওপর বিস্তারিত আলোচনা করেন আলোচকরা।
সারাবাংলা ডটনেটে প্রকাশিত অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে দেখা যায়, তরূণদেরকে আকৃষ্ট করতে তামাক কোম্পানিগুলো সকল মূল্যস্তরেই বিভিন্ন ফ্লেভারের সিগারেট বাজারে এনেছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, সাধারণ সিগারেটের মতোই এই ফ্লেভারযুক্ত সিগারেট শ্বাসতন্ত্রের ক্যান্সারের একটি বড় কারণ। এই সিগারেটে ব্যবহৃত সিনথেটিক মেনথল ফুসফুসের অ্যালার্জি, টনসিল ফোলাসহ দীর্ঘস্থায়ী অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজের সম্ভাবনা বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। এছাড়া, এসকল সিগারেটে ব্যবহৃত আপেল, স্ট্রবেরি ও চকলেট স্বাদের সুগন্ধি শীতল অনুভূতি জাগানোর কারণে আরও গভীরভাবে শ্বাস নিতে উৎসাহিত করে। ফলে শরীরে বিষাক্ত রাসায়নিক ও আলকাতরা বেশি পরিমাণে প্রবেশ করে। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিশেষ করে নারীদের মধ্যে এই সিগারেটের জনপ্রীয়তা বাড়ছে যা খুবই উদ্বেগজনক। প্রতিবেদনের সুপারিশে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করার প্রক্রিয়ায় ফ্লেভার সিগারেটকে সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধের বিধান যুক্ত করা জরুরি বলে অবহিত করা হয়।
আরও পড়ুন
ফ্লেভার আসক্তিতে তরুণ-তরুণীরা, জনস্বাস্থ্যে ঝুঁকি বাড়াচ্ছে সুগন্ধি সিগারেট
অপর প্রতিবেদনে উঠে আসে, বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া দুর্বল হওয়ায় বহুজাতিক সিগারেট কোম্পানিগুলো শিক্ষার্থী ও তরুণদের টার্গেট করে চটকদার বিজ্ঞাপন প্রচার করছে। দেখা যায়, ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত, ৩৪ মাসে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নে খুলনায় মাত্র ৫০টি মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হয়েছে এবং জরিমানা করা হয়েছে মাত্র ৬১ জনকে। অথচ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ৩১ মাসে ৮০১ জনকে কারাদণ্ড ও জরিমানা করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বিদ্যমান তামাক নিয়ণ্ত্রণ আইনের দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে বহুজাতিক সিগারেট কোম্পানিগুলো নিত্যনতুন কৌশলে তাদের পণ্যের প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া, বিভ্রান্তিকর তথ্যের মাধ্যমে তামাকের কর বৃদ্ধি ও তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত ও প্রশ্নবিদ্ধ করছে। গবেষণায় দেখা গেছে, বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন ভঙ্গেও বেপরোয়া বহুজাতিক তামাক কোম্পানিগুলো। তাই, কার্যকর তামাক নিয়ন্ত্রণে বিদ্যমান আইনকে শক্তিশালী করা জরুরি।
বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের দফতরবিষয়ক সম্পাদক সৈয়দা অনন্যা রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের ভারপ্রাপ্ত সমন্বয়কারী হেলাল আহমেদ। অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী এবং নীতি বিশ্লেষক সৈয়দ মাহবুবুল আলম তাহিন, এইড ফাউন্ডেশন প্রকল্প পরিচালক শাগুফতা সুলতানা, টিসিআরসি’র সদস্য সচিব মো. বজলুর রহমান।
এছাড়াও বক্তব্য দেন নাটাব’র প্রকল্প ব্যবস্থাপক ফিরোজ আহমেদ, মানসের প্রকল্প সমন্বয়কারী উম্মে জান্নাত , ডাস্’র সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার মোয়াজ্জেম হোসেন, বিইআর এর সিনিয়র প্রজেক্ট অ্যান্ড কমিউনিকেশন অফিসার ইব্রাহীম খলিল এবং অর্ধশতাধিক গণমাধ্যমকর্মী।
উল্লেখ্য, পেশাগত জীবনে এমদাদুল হক তুহিন ‘ডিআরইউ বেস্ট রিপোর্টিং অ্যাওয়ার্ড’ ও ‘পিআইবি-এটুআই মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড’ অর্জন করেছেন। চলতি বছরে কাতারে অনুষ্ঠিত সপ্তাহব্যাপী আম উৎসবে বাংলাদেশ দূতাবাসের সম্মাননাও পেয়েছেন তিনি। তুহিন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) স্থায়ী সদস্য। তিনি বাংলাদেশ কৃষি সাংবাদিক ফোরামের (বিএজেএফ) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ আইসিটি জার্নালিস্ট ফোরামের (বিআইজেএফ) সদস্য।