Wednesday 26 Nov 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নিরাপদ নগরীর দাবিতে একশনএইডের ক্যাম্পেইন শুরু

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট 
২৭ নভেম্বর ২০২৫ ০১:২৩

‘নিরাপদ নগরী, নির্ভয় নারী’ স্লোগানে একশনএইড বাংলাদেশ আয়োজিত কর্মসূচি

ঢাকা: নারী ও কন্যাশিশুর জন্য নিরাপদ নগরী গড়ে তোলার আহ্বানে রাজধানীর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে শুরু হলো জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধে ১৬ দিনব্যাপী প্রচারাভিযান। ‘নিরাপদ নগরী, নির্ভয় নারী’ স্লোগানে একশনএইড বাংলাদেশ আয়োজিত দিনব্যাপী কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতিই সহিংসতা বৃদ্ধির মূল কারণ— জরুরি জবাবদিহিতা নিশ্চিত না হলে নারীর নিরাপত্তা অর্জন সম্ভব নয়।

দিনব্যাপী কর্মসূচির শুরুতে শিল্পকলার উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় ‘স্টোরিজ অফ কারেজ’ শিরোনামে জীবন্ত আউটডোর পারফরম্যান্স ও ইনস্টলেশন সিরিজ। এতে নারীদের সাহস, সংগ্রাম ও প্রতিকূলতা মোকাবিলার বাস্তব অভিজ্ঞতা তুলে ধরা হয়। পরে চিত্রশালা মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হয় ইনডোর নাটক ‘একোজ অফ হার লাইফ’, যেখানে গণপরিবহন, পাবলিক স্পেস ও সেবাপ্রতিষ্ঠানে নারীদের দৈনন্দিন হয়রানির অভিজ্ঞতা তুলে ধরা হয়। নাটকটি দর্শকদের গভীরভাবে নাড়া দেয়।

বিজ্ঞাপন

একশনএইড বাংলাদেশের উইমেন রাইটস অ্যান্ড জেন্ডার ইকুইটি টিমের লিড মরিয়ম নেছা নগরীতে নারীদের অনলাইন ও অফলাইনে নিরাপত্তাহীনতার চিত্র তুলে ধরেন।

ইন্টারেক্টিভ আলোচনায় বক্তারা আইন প্রয়োগের কঠোরতা, জেন্ডার-সংবেদনশীল নগর পরিকল্পনা এবং সচেতনতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দেন। পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার পরিবর্তন এবং শিক্ষা পাঠক্রমে জেন্ডার সচেতনতা অন্তর্ভুক্ত করাও জরুরি বলে মত দেন তারা।

এ প্রসঙ্গে একশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির বলেন, “২০২১ ও ২০২২ সালে অনলাইনে নারীর প্রতি সহিংসতা ৬৩ শতাংশে পৌঁছেছে, যার প্রভাবে ৪২ শতাংশ নারী অনলাইন উপস্থিতি কমিয়ে দিয়েছেন। এছাড়া, গণপরিবহনে নিয়মিত ২২ শতাংশ নারী হয়রানির শিকার হন। এসব পরিসংখ্যান প্রমাণ করে—নারীরা কোথাওই সম্পূর্ণ নিরাপদ নন।”

তিনি আরও বলেন, “সহিংসতা অব্যাহত থাকার প্রধান কারণ হল প্রশ্রয় ও জবাবদিহির অভাব। এটি রোধে নারী-পুরুষ সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. তানিয়া হক সহিংসতা বৃদ্ধির পেছনে সাংস্কৃতিক সহিংসতার (Cultural Violence) প্রভাব তুলে ধরে বলেন, নীরব দর্শক হয়ে থাকলে পরিবর্তন আসবে না; কমিউনিটিকে সোচ্চার হতে হবে।

মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব ড. প্রকাশ কান্তি চৌধুরী বলেন, “পুরুষ ও ছেলেদের ইতিবাচক পরিবর্তনের সহযোগী হিসেবে যুক্ত করা না গেলে সহিংসতা কমবে না। সরকার ও নাগরিক সমাজকে প্রতিরোধমূলক কাজে আরও মনোযোগী হতে হবে।”

ডিএনসিসির প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ এস এম শফিকুর রহমান জেন্ডার-সংবেদনশীল নগর পরিকল্পনা ও নিরাপদ পাবলিক স্পেস তৈরির প্রতিশ্রুতি দেন। অপরদিকে ডিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার মোছাঃ ফারহানা ইয়াসমিন দ্রুত রিপোর্ট করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, থানায় নারী পুলিশ সদস্য বাড়ানো এবং তাদের বিশেষ প্রশিক্ষণ জরুরি।

ইউএনডিপি-এর জেন্ডার টিম লিড শারমিন ইসলাম গণপরিসরে সিসিটিভি নজরদারি জোরদার এবং জেন্ডার বাজেট বৃদ্ধি করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে বলেন, “বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণেই সহিংসতা বাড়ছে; তাই পাঠক্রমে জেন্ডার সংবেদনশীলতা অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি।”

অনুষ্ঠানে চলচ্চিত্র নির্মাতা ফখরুল আরেফিন খানসহ সরকারি নীতিনির্ধারক, নগর পরিকল্পনাবিদ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

একশনএইড জানায়, ২৫ নভেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন শহরে স্থানীয় পর্যায়েও নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে নিরাপদ নগরী গঠনে দীর্ঘমেয়াদি সামাজিক আন্দোলন তৈরি করা হবে।

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর