Monday 01 Dec 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

তারেক রহমানের ‘দেশে ফেরা’ কার নিয়ন্ত্রণাধীন?

মো. মহসিন হোসেন স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১ ডিসেম্বর ২০২৫ ২২:২৩ | আপডেট: ১ ডিসেম্বর ২০২৫ ২২:৩১

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ছবি কোলাজ: সারাবাংলা

ঢাকা: দেশের রাজনীতিতে এখন সবচেয়ে আলোচিত বিষয় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার ইস্যুটি। গত ১৫ মাস ধরে আলোচনা ছিল, ‘কবে দেশে ফিরবেন তিনি?’ সেই আলোচনা এখন ‘কেন ফিরছেন না?-তে ঠেকেছে। সম্প্রতি তার এক ফেসবুক পোস্ট এই ইস্যুটির সামনে ‘প্রশ্নবোধক চিহ্ন’ এঁকে দিয়েছে। তারেক রহমান নিজেই বলছেন, দেশে ফেরা তার একক সিদ্ধান্তের ওপরে নির্ভর করছে না। তাহলে তার ‘দেশে ফেরা’ কার নিয়ন্ত্রণাধীন?- তবে কি তিনি কোনো বিপদের আভাস পেয়েছেন?- এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে সবাই।

রাজনীতি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যদি কোনো বিপদের আশঙ্কা নাই থাকে তাহলে নিজের মায়ের কঠিন অসুস্থতার সময়েও কেন ফিরছেন না তারেক রহমান? শনিবার (২৯ নভেম্বর) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে দেওয়া এক পোস্টে তারেক রহমান বলেন ‘এমন সংকটকালে মায়ের স্নেহ স্পর্শ পাবার তীব্র আকাঙ্ক্ষা যেকোনো সন্তানের মতো আমারও রয়েছে। কিন্তু অন্য আর সবার মতো এটা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমার একক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ অবারিত ও একক নিয়ন্ত্রণাধীন নয়। স্পর্শকাতর এই বিষয়টি বিস্তারিত বর্ণনার অবকাশও সীমিত। রাজনৈতিক বাস্তবতার এই পরিস্থিতি প্রত্যাশিত পর্যায়ে উপনীত হওয়া মাত্রই স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে আমার সুদীর্ঘ উদ্বিগ্ন প্রতীক্ষার অবসান ঘটবে বলেই আমাদের পরিবার আশাবাদী।’

বিজ্ঞাপন

তার এই ফেসবুক পোস্টের পর রাজনৈতিক মহলে ঝড় উঠেছে। তারেক রহমান গত অক্টোবরে বিবিসি বাংলার সঙ্গে সাক্ষাতকারে নিজেই বলেছিলেন দ্রুতই দেশে ফিরবেন। দলের অনেকে ভেবেছিলেন, সেপ্টেম্বরে দেশে ফিরে নির্বাচনের হাল ধরবেন। কিন্তু সেখান থেকে দু’মাস পরে কেন তার এই লেখা।

তারেক রহমান কবে দেশে ফিরবেন? এমন প্রশ্ন গতবছর ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর পরই শুরু হয়। পরে জানা যায়, খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য লন্ডন যাবেন। চিকিৎসা শেষে যখন দেশে ফিরবেন তখন তারেক রহমান তার সঙ্গে ফিরবেন। কিন্তু ৮ জানুয়ারি বেগম খালেদা জিয়া লন্ডনে গিয়ে চার মাস চিকিৎসা শেষে ৬ মে দেশে ফেরেন। তার সঙ্গে তারেক রহমান আসেননি। তার স্ত্রী জোবাইদা রহমান শাশুড়ির সঙ্গে দেশে আসেন। তখন দলীয় নেতারা বলেন, জোবাইদা রহমান লন্ডন ফিরে গিয়ে কয়েকদিনের মধ্যে আবার তারেক রহমানসহ দেশে ফিরবেন। সেটাও গত জুন মাসের বক্তব্য। এর পর বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি দেশে ফিরবেন তারেক রহমান। সেই মাসও পেরিয়ে গেছে।

জিয়া পরিবারের ঘনিষ্টজন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং খালেদা জিয়ার চিকিৎসক প্রফেসর ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন গত ২৫ সেপ্টেম্বর শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই দেশে ফিরবেন। তিনি ফিরে এসে শুধু বিএনপির নির্বাচনি প্রক্রিয়াই নয়, বরং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের শেষ লগ্নের নেতৃত্ব দেবেন।’ তার সেই বক্তব্যের পর দুই মাসেরও বেশি সময় পার হয়েছে। কিন্তু এখনো জানা যায়নি, তারেক রহমান আসলে কবে দেশে ফিরবেন। এর মধ্যেই চলে এসেছে নতুন আলোচনা। আর সেটি তার ফেসবুকের সাম্প্রতিক পোস্ট থেকেই।

এখন প্রশ্ন উঠেছে, তারেক রহমান কেন এমন কথা বললেন যে, দেশে ফেরা তার একক সিদ্ধান্তের ওপরে নির্ভর করছে না। তাহলে এই সিদ্ধান্ত কারা, কীভাবে দেবেন? যদিও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, ‘তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো বাধা নেই।’ আবার ডিক্যাব টকে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছেন, ‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে আসতে চাইলে একদিনে তাকে ট্রাভেল পাস দেওয়া সম্ভব।’ তৌহিদ হোসেন ও শফিকুল আলমের বক্তব্যের পর প্রশ্ন আরও ঘনীভূত হয়েছে। কী কারণে তিনি ফিরছেন না?

এদিকে খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় এক দোয়া মাহফিল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, ‘দেশনেত্রী মারাত্মক অসুস্থ। অথচ, এই সময়ে তারেক রহমান আসতে পারছেন না। এ যে কত যন্ত্রণার, তা সন্তান ছাড়া কেউ বুঝবে না।’ অপরদিকে দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘এই অবস্থার মধ্যে আসলে তার ফেরার কোনো আপডেট আমাদের কাছে নেই। যথাসময়ে, মানে উপযুক্ত মনে হলে উনি আসবেন। তিনি (তারেক রহমান) তার মায়ের জন্য, আমাদের চেয়ারপারসনের জন্য উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় সময় কাটাচ্ছেন। আমি যতটুকু জানি, প্রতিমুহূর্তে দায়িত্বরত চিকিৎসকদের সঙ্গে তিনি কথা বলছেন।’

রুহুল কবির রিজভীর এই বক্তব্যেও স্পষ্ট যে, তারেক রহমান দেশে ফিরতে চাচ্ছেন। কিন্তু তিনি ফিরতে পারছেন না কোনো এক অদৃশ্য কারণে। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘তারেক রহমানের ফেসবুক স্ট্যাটাসেই সব ব্যাখ্যা রয়েছে। এ বিষয়ে আর কিছু বলার নেই।’ অর্থাৎ দলও এর বাইরে মুখ খুলতে নারাজ।

এ প্রসঙ্গে রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বলেন, ‘ফেসবুকে তারেক রহমান যা বলেছেন, তাতে মনে হয় দেশে আসার বিষয়টি তার নিজের ওপর নির্ভর করে না। এছাড়া, আরও অনেক ফ্যাক্টর আছে। যার ওপর তার নিয়ন্ত্রণ নেই।’

বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা সারাবাংলাকে বলেন, ‘তারেক রহমানের জীবন শুধু উনার পরিবার বা উনার একার জন্য নয়, বাংলাদেশের মানুষের স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার জন্য জরুরি। স্বৈরাচার হাসিনা ও তার দোসরদের হাসিনার সন্তানতুল্য একজনের ওপর এত বিদ্বেষ কেন ছিল। তারেক রহমান আধিপত্যবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের চক্ষুশীল ছিলেন এবং এখনও আছেন। তাদের পথের কাঁটা সরাতে পারলে এরকম অজেয় আর কেউ আসবে না কোনোদিন। তাই আজ প্রিয় মাতৃভূমিতে প্রত্যাবর্তনের এত প্রতিবন্ধকতা, ষড়যন্ত্র।

তিনি বলেন, ‘অনেক সময় আমরা বুঝলেও সব বলতে পারি না, বা বলতে হয় না। তারেক রহমান এই সময়ের বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদী শক্তির একমাত্র কাণ্ডারি। উনার কিছু হলে লাভবান হবে কে বা কারা, এটা তো আমরা সহজেই অনুমান করতে পারি।’

বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মোহাম্মদ রহমাতুল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, ‘দেশের মানুষ তার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। তিনি নিজেও আসতে চাচ্ছেন। তবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যেকোনো কারণেই হোক তিনি আসতে পারছেন না। কেন আসতে পারছেন না- সেই বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে আশা করি শিগগিরই দেশে ফিরবেন তিনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘তারেক রহমান বিদেশে থাকলেও সবসময় দেশের সঙ্গে তার যোগাযোগ রয়েছে। সবসময় দেশ ও দেশের মানুষের জন্য ভাবেন তিনি। সুতরাং, তিনি যে শিগগিরই দেশে আসবেন তাতে সন্দেহ নেই।’

সারাবাংলা/এমএমএইচ/পিটিএম
বিজ্ঞাপন

আরো

মো. মহসিন হোসেন - আরো পড়ুন
সম্পর্কিত খবর