রংপুর: দেশের ঐতিহ্যবাহী রংপুরের কারমাইকেল কলেজে দীর্ঘ ৩৫ বছর পর কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে।
মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) রাতে অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে সুনির্দিষ্ট সময়সূচি প্রকাশিত হয়ে।
প্রকাশিত রোডম্যাপ অনুযায়ী, জানুয়ারি থেকে শুরু করে ফেব্রুয়ারি ২০২৬-এর মধ্যে ভোট গ্রহণ ও ফলাফল ঘোষণার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পাওয়া গেলেই এই সময়সূচি আরও এগিয়ে আনা যাবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
এই ঘোষণা সাধারণ শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের দীর্ঘদিনের আন্দোলনের ফল, যা গত কয়েক মাস ধরে জোরালো হয়েছে। রোববার (১ ডিসেম্বর) শিক্ষার্থীরা ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছিলেন, যা আজ সকাল থেকে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অব্যাহত ছিল।
এদিকে কলেজের প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে উৎসাহের ঢেউ উঠেছে, যা ক্যাম্পাসে উদ্দীপনা ছড়িয়ে দিয়েছে। এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আজকের এই রোডম্যাপ আমাদের ৩৫ বছরের সংগ্রামের বিজয়। এখন গণতান্ত্রিক ক্যাম্পাস গড়ার পালা।’
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, শিক্ষার্থীদের জোরালো দাবির প্রেক্ষিতে কলেজ প্রশাসন এরই মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ (মাউশি) এবং স্থানীয় প্রশাসনকে বিষয়টি অবগত করেছে। নির্বাচন আয়োজনের অনুমতির জন্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে প্রশাসন সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যদি মন্ত্রণালয় থেকে দ্রুত অনুমতি পাওয়া যায়, তবে ঘোষিত তারিখগুলো এগিয়ে আনা হবে। এই রোডম্যাপ নির্বাচন কমিশন গঠনের ওপর নির্ভরশীল, যা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের সাথে সাথেই গঠিত হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
কাকসু নির্বাচনের রোডম্যাপের বিস্তারিত সময়সূচি অনুযায়ী, ৭ জানুয়ারি ২০২৬-এর মধ্যে আইডি কার্ড নিশ্চিতকরণ, ১৫ জানুয়ারি ২০২৬-এর মধ্যে (ছবিযুক্ত) খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ, মন্ত্রণালয়ের অনুমতির সাথে সাথে নির্বাচন কমিশন গঠন, নির্বাচন কমিশন গঠনের ২ সপ্তাহের মধ্যে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ (ছবিযুক্ত), চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের ১ সপ্তাহের মধ্যে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা, তফসিল ঘোষণার ২০ দিনের মধ্যে ভোট গ্রহণ ও ফলাফল প্রকাশ। এই সময়সূচি পূরণ হলে ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে নির্বাচন সম্পন্ন হতে পারে।
বিজ্ঞপ্তিতে বিশেষ সতর্কতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, সব শিক্ষার্থীকে তাদের আইডি কার্ড নিশ্চিত করতে হবে, অন্যথায় ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন। জানা গেছে, ১৯১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এই কলেজে ১৯টি বিভাগে প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষার্থী পড়ছেন।
উল্লেখ্য, ১৯৯০ সালে শেষবার কাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যা পরবর্তীকালে ভেঙে দেওয়া হয়। তারপর থেকে কোনো নির্বাচন হয়নি। ২০১৯ সালে সাবেক শিক্ষার্থী ওসমান গণির রিটে হাইকোর্টে ভোটাধিকার বন্ধ রাখার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়, কিন্তু তা আর এগোয়নি। পরে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের পতনের পর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন কাকসু নির্বাচনের দাবি তুলে আসছে।