ঢাকা: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার তারিখ ফের পিছিয়ে গেল। দলের চেয়ারপারসন ও তারেক রহমানের মা বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার কারণেই মূলত এবার পেছাতে হচ্ছে তার দেশে ফেরার সময়।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, গত নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে দেশে ফেরার সব প্রস্তুতি নিয়েছিলেন তারেক রহমান। কিন্তু কোনো এক কারণে সেটা পিছিয়ে যায়। এর পর পরই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন তার মা বেগম খালেদা জিয়া। মায়ের অসুস্থতার কারণে ধারণা করা হয়েছিল, এবার হয়তো দ্রুতই দেশে ফিরবেন তারেক রহমান। কিন্তু তাও তিনি ফেরেননি। কেন ফেরেননি সেটা দলের পক্ষ থেকে যেমন খোলাসা করা হয়নি, তেমনি তারেক রহমানের পক্ষ থেকেও কাউকে কিছু বলা হয়নি। তবে গত ২৯ নভেম্বর নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে তারেক রহমান যে স্ট্যাটাস দেন সেখানে তিনি বলেন, দেশে ফেরা তার একক সিদ্ধান্তের ওপরে নির্ভর করছে না।
অপরদিকে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বলেন, তারেক রহমান কবে দেশে ফিরবেন সেটা তার নিজের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে। যেদিন তিনি দেশে ফিরতে চাইবেন সেদিনই ফিরবেন। এ ব্যাপারে দলের কারও কিছু বলার নেই।
গত মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে ‘ফিউচার বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘তারেক রহমানের দেশে আসাটা তার নিজের সিদ্ধান্ত ও তার পরিবারের। এটা (দেশে আসা) নিয়ে কিছু কিছু লোক অতি আগ্রহ প্রকাশ করছেন। এটার তো দরকার নেই। এটা তাদের পারিবারিক সিদ্ধান্ত, এগুলো একান্ত তাদের।’
এদিকে মা খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় এ যাত্রা তারেক রহমান দেশে ফিরছেন না সেটা দু’দিন আগেই জানা গিয়েছিল। তখন দলীয় সূত্র জানায়, খালেদা জিয়াকে যদি বিদেশে নেওয়ার বিষয়ে চিকিৎসকরা অনুমতি দেন তাহলে তাকে লন্ডনে নেওয়া হবে। সেক্ষেত্রে তারেক রহমান লন্ডনে অবস্থান করবেন মায়ের চিকিৎসার জন্য। সেজন্য তিনি আপাতত আর দেশে ফিরছেন না।
জানা গেছে, দেশ-বিদেশের চিকিৎসকদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। এরই মধ্যে চীন ও যুক্তরাজ্যের চিকিৎসক টিম ঢাকায় এসে খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডে যোগ দিয়েছেন। তাদের সবার সিদ্ধান্তে বৃহস্পতিবার(৪ ডিসেম্বর) দুপুরে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এজেড এম জাহিদ হোসেন সংবাদ সম্মেলন জানান, সবকিছু ঠিক থাকলে বৃহস্পতিবার মধ্য রাতের পর অথবা শুক্রবার সকালে কাতার আমিরের দেওয়া এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে খালেদা জিয়াকে নিয়ে লন্ডনের পথে রওয়ানা করবেন তার চিকিৎসক দলের সদস্যরা। ওই দলে অন্তত ১৪ জন চিকিৎসক থাকবেন।
খালেদা জিয়াকে যেহেতু লন্ডনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সেহেতু তারেক রহমানের আপাতত দেশে ফেরা হচ্ছে না এটা নিশ্চিত। জানা গেছে, প্রায় দেড় যুগ ধরে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ১/১১-এর সরকারের সময় গ্রেফতারের পর গুরুতর অসুস্থ হয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি লন্ডনে যান। এর পর থেকে সেখানেই অবস্থান করছেন তিনি।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলে তারেক রহমানের দেশে ফেরার পথ অনেকটা সুগম হয়। একে একে বিভিন্ন মামলা থেকে খালাস পেতে থাকেন তিনি। দলের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়, শিগগিরই তাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশে ফিরবেন। ২০২৫ সালের শুরুতে তারেক রহমান দেশে ফিরবেন এমন গুঞ্জনও শোনা যাচ্ছিল। বলা হচ্ছিল, কিছু জটিল মামলা নিষ্পত্তি হলেই দেশে ফিরবেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বড় ছেলে। মামলার বাধা সব কেটে গেলেও দেশে ফেরেননি তিনি। এরপর গত ১০ মাসে বহুবার দেশে ফেরার গুঞ্জন উঠলেও দেশে ফেরেননি।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দেশে ফেরার বিষয় জানতে চাইলে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘তারেক রহমান কবে দেশে ফিরতে পারবেন সেটা আমি বলতে পারব না।’ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরে তারেক রহমান দেশে ফিরলে তিনি ভোটার হতে পারবেন কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এই আইনটি আমার জানা নেই।’
এ প্রসঙ্গে লন্ডনে অবস্থানরত ব্যারিস্টার মাহাবুবুর রহমান তার ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজে লিখেছেন, ‘সঠিক তথ্য হলো: গত সপ্তাহ ধরে তারেক রহমান বিশ্বের সব নামকরা ডাক্তারদের দ্বারে দ্বারে নক করেছেন, কীভাবে প্রিয় মা বেগম খালেদা জিয়ার সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিত করা যায়। বারবার বাংলাদেশের চিকিৎসক টিমের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও চীনের অভিজ্ঞ ডাক্তারদের অনলাইনে যুক্ত করেছেন এবং পরামর্শ করে বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন।’
তিনি আরও লিখেন, ‘তারেক রহমান কেন দেশে ফিরছেন না? প্রিয় মায়ের কাছে দ্রুত যাওয়ার সাহসটুকু কেন তার নেই? তারেক রহমান গোপনে ঢাকা বিমানবন্দরে অবতরণ করছেন- এমন হাজারো গুজব যখন চলছিল, তখন তারেক রহমান চিকিৎসকদের কাছে পরামর্শ চেয়েছেন, প্রিয় মা-কে কীভাবে লন্ডনে কিংবা বিশ্বের অভিজ্ঞ ডাক্তারদের কাছে সরাসরি চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যায়। তিনি চীন, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে চিকিৎসকদের ঢাকায় নেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। তারেক রহমান অবশ্যই এক সপ্তাহ আগেই ফ্লাইটে চড়ে মায়ের কাছে ফিরতে পারতেন, কিন্তু তিনি মায়ের চিকিৎসার ব্যবস্থাকে অধিকতর গুরুত্ব দিয়েছেন। কাতারের আমিরের সাথে যোগাযোগ করে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করেছেন। এখন সব কিছু ঠিক থাকলে বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের চিকিৎসক টিমসহ আগামীকাল (৫ ডিসেম্বর) ফ্লাই করতে পারবেন, ইনশাল্লাহ।’
ব্যারিস্টার মাহবুব লিখেছেন, ‘তার মানে হলো- আমরা সবাই যখন গুজবের হাইপ তুলেছিলাম, তখন তারেক রহমান সঠিক কাজটি-ই করার চেষ্টা করেছেন। প্রিয় মায়ের চিকিৎসাকে তিনি গুরুত্ব দিয়েছেন এবং আল্লাহ চাইলে বেগম খালেদা জিয়ার সঠিক চিকিৎসা সম্ভব হলে, তিনি ভালো হয়ে উঠবেন বলে দেশবাসী প্রত্যাশা করছেন।’
তিনি আরও লিখেন, ‘তারেক রহমানের দেশে ফেরার ক্ষেত্রে এখন মা বেগম খালেদা জিয়ার লন্ডনে পৌঁছা এবং পরবর্তীতে তার স্বাস্থ্যের উন্নতির ওপর যেমনটা নির্ভর করবে, তেমনি বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে দল হিসেবে বিএনপির কৌশল, প্রস্তুতি এবং এতে তারেক রহমানের সরাসরি অংশগ্রহণের বিষয়ে দলের সিদ্ধান্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হবে।’