নীলফামারী: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির এটিএম আজহারুল ইসলাম বলেছেন, বাংলাদেশে সম্পদের কোনো অভাব নেই, অভাব কেবল সৎ নেতৃত্বের।
তিনি বলেন, ‘দেশের এমপিরা সৎ হলে দেশের আজ এতো করুণ অবস্থা হতো না। ইতিপূর্বে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে। দেশ যদি গরিব হতো তাহলে এত টাকা পাচার হতো না। অর্থাৎ দেশ গরিব নয়, দেশকে গরিব বানিয়ে রাখা হয়েছে।’
রোববার (৭ ডিসেম্বর) সকালে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার গ্রাড়াগ্রাম নতুন টেপারহাট এলাকায় ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত ৯০টি পরিবারের মাঝে ঢেউটিন বিতরণ কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন।
কর্মসূচির আয়োজন করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কিশোরগঞ্জ উপজেলা শাখা। সভাপতিত্ব করেন উপজেলা আমির আব্দুর রশিদ শাহ। গত ৫ অক্টোবর কিশোরগঞ্জ উপজেলায় ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় ১০ গ্রামের ছয় শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত কিছু পরিবারকে সহায়তা করতে জামায়াতের এই কর্মসূচি।
এটিএম আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘যদি আজ সৎ নেতৃত্ব ক্ষমতায় থাকত, তারা অতীতে যে দায়িত্ব পালন করেছে সেখানে দুর্নীতি বন্ধ করতে পারলে দেশের দামাল ছেলেদের জমি-জায়গা বিক্রি করে বিদেশে যেতে হতো না। দেশের সম্পদ সৎভাবে জনকল্যাণে ব্যয় করতে পারলে বাংলাদেশ সিঙ্গাপুরের চেয়েও এগিয়ে যেত। বিদেশ থেকে মানুষ চাকরির জন্য বাংলাদেশে আসত। আমরা পেছনে ফিরতে চাই না, সামনে এগিয়ে যেতে চাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘বন্যা হোক বা অন্য কোনো দুর্যোগ জামায়াতে ইসলামী জনগণের পাশে থেকেছে এবং সব সময় থাকবে। মানবতার কল্যাণ শুধু স্লোগান নয়; আমরা সামর্থ্য অনুযায়ী মানুষের পাশে দাঁড়াই। রাসুলের (সা.) হাদিস অনুযায়ী মানুষের প্রতি রহম প্রকাশ করতে হবে, তা না পারলে আল্লাহও রহম করবেন না।’
নির্বাচন সামনে রেখে কেউ কেউ ভোটের জন্য উপস্থিত হয়েছেন মনে করলে তিনি বলেন, ‘আমরা শুধু ভোটের জন্য মানুষের কাছে আসি না। রাষ্ট্রীয়ভাবে খেদমত করার সুযোগ কম, তবে দলের সীমিত শক্তি নিয়েই আমরা মানুষের পাশে থাকি।’
নায়েবে আমির বলেন, ‘আমরা ইসলামকে বাংলাদেশে কায়েম করতে চাই। ইসলাম কায়েম শুধুমাত্র আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে হয় না, বর্তমান যুগে গণতান্ত্রিক নির্বাচন ব্যবস্থায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে সংসদে গিয়ে সরকার গঠন করতে হয়। সুযোগ পেলে ইসলামের নীতিতে দেশ পরিচালনা করলে মুসলিম-অমুসলিম সবাই উপকৃত হবেন।’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘অতীতে হিন্দু সম্প্রদায়ের পূজা মণ্ডপে হামলা হলেও দায় চাপানো হতো জামায়াত-শিবিরের ওপর। কিন্তু এবার দুর্গাপূজায় কোথাও কোনো ভাঙচুর বা হামলার ঘটনা ঘটেনি। আমরা দেশে থাকায় অমুসলিমরা সবচেয়ে নিরাপদ অবস্থায় আছেন।’
নারী ইস্যুতে বিতর্কের জবাবে বলেন, ‘আমরা নারীদের ঘরে আটকে রাখব এ অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। প্রথম ইসলাম গ্রহণকারীদের মধ্যে ছিলেন— হজরত খাদিজা (রা.) এবং প্রথম শহিদও নারী হজরত সুমাইয়া (রা.)। ইসলাম কায়েম হলে নারী-পুরুষ, মুসলিম-অমুসলিম সবাই শান্তিতে থাকবে।‘
এটিএম আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘দেশের রাজনীতিকে স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ নামে দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে, যা দেশের উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করেছে। ৫৪ বছরে দেশের ভাগ্য পরিবর্তন হয়নি। নৌকা, লাঙ্গল, ধানের শীষ সবই দেখেছি। পরিবর্তন হয়েছে শুধু দল, দেশের ভাগ্য নয়। এবার দাঁড়িপাল্লায় ভোট দিয়ে দেখুন, আমাদের একবার পরীক্ষা করে দেখুন।’
তিনি আরও বলেন, ‘৮টি ইসলামী ও দেশপ্রেমী দল একত্র হয়ে আগামী নির্বাচনে একজোট হয়ে লড়বে। জনগণ যেভাবে এগিয়ে আসছে, আমরা আশাবাদী ভবিষ্যতের নির্বাচনে ইনশাআল্লাহ ইসলামী সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে।’
সম্মিলিতভাবে জুলাই সনদে সই এবং গণভোটের আহ্বান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘একই দিনে নির্বাচন ও গণভোট হলে বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা থাকে। তাই আমরা নির্বাচনের পূর্বেই গণভোট অনুষ্ঠানের পক্ষে।’
রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চল টিম সদস্য মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ বলেন, ‘যেখানে দুর্যোগ, সেখানে জামায়াতে ইসলামী। যেখানে মানুষ আহত হয়, সেখানে আমরা চিকিৎসা নিয়ে ছুটে যাই। নৌকাডুবিতে মানুষ মারা গেলে জামায়াতে ইসলামী সহযোগিতা করে। এতে প্রমাণ হয় জামায়াতে ইসলামী সত্যিকার অর্থেই মানুষের কল্যাণ চায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এসব কাজ শুধু জামায়াতকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য করি না; আমাদের ঈমান, বিশ্বাস ও লালিত আদর্শই আমাদের মানবতার সেবা করতে শেখায়। সেই অনুভূতি থেকেই আমরা আজ আপনাদের সামনে এসেছি। আমরা ভিক্ষা দিতে আসিনি, উপহার নিয়ে এসেছি। এই সাহায্যে আপনাদের সম্পূর্ণ ক্ষতি পূরণ হবে না, তবে সামান্য হলেও শান্তনা দিতে পারছি এ জন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি।’
নীলফামারী জেলা জামায়াতের আমির ও নীলফামারী-১ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘এই আসনে যদি জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী হাফেজ মুনতাকিমকে নির্বাচিত করতে পারেন, তাহলে রাষ্ট্রীয় অর্থ দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে ফের সহায়তা করা হবে ইনশাআল্লাহ। ঝড়ে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের বিপদের সময়ে আমরা সামান্য সহায়তা নিয়ে অংশগ্রহণ করেছি মাত্র।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ড. খায়রুল আনাম, জেলা সেক্রেটারি মাওলানা আন্তাজুল ইসলাম, জেলা জামায়াতের অফিস সম্পাদক আব্দুল কাদিম, প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি ছাদের হোসেন, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের জেলা সভাপতি মনিরুজ্জামান জুয়েল, সৈয়দপুর উপজেলা আমির ও নীলফামারী-৪ আসনের সদস্য প্রার্থী হাফেজ আব্দুল মুনতাকিম, নীলফামারী সদর উপজেলা আমির আবু হানিফা শাহ, ডিমলা উপজেলা আমির মাওলানা মুজিবুর রহমানসহ আরও অনেকে।