ঢাকা: সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতা নিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে দায়ের করা আপিলের শুনানি সোমবার (৮ ডিসেম্বর) অনুষ্ঠিত হবে। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে এ শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
এর আগে রোববার (৭ ডিসেম্বর) পঞ্চদশ সংশোধনীর কয়েকটি ধারা অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের শুনানি চলে। সকাল সাড়ে ৯টা থেকে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগে এ শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
আপিলকারীদের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন আইনজীবী ড. শরীফ ভূঁইয়া।
এর আগে, ১৩ নভেম্বর বহুল আলোচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলসহ সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর কয়েকটি ধারা অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি দেয় আপিল বিভাগ। সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারের পক্ষে আইনজীবী ড. শরীফ ভূঁইয়া এ আবেদন করেন।
গত ৩ নভেম্বর হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ‘লিভ টু আপিল’ করা হয়, যেখানে পঞ্চদশ সংশোধনী পুরোপুরি বাতিলের আবেদন জানানো হয়েছে।
গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর হাইকোর্ট সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর কয়েকটি ধারা— বিশেষ করে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল–সংক্রান্ত অনুচ্ছেদগুলো— সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও অবৈধ ঘোষণা করেন। একইসঙ্গে সংবিধানে গণভোটের বিধান পুনর্বহাল করা হয়।
হাইকোর্ট পর্যবেক্ষণে বলেন, গণতন্ত্র সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর অংশ, আর সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন ছাড়া গণতন্ত্র পূর্ণতা পায় না। দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত তিনটি জাতীয় নির্বাচনে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটেনি, যার ধারাবাহিকতায় জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ঘটেছে। জনগণের প্রত্যাশায় অন্তর্ভুক্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর অংশে পরিণত হয়েছিল।
রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল–সংক্রান্ত পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ২০ ও ২১ অনুচ্ছেদ বাতিল করা হয়। এছাড়া ৭ক, ৭খ ও ৪৪(২) অনুচ্ছেদও সাংবিধানিক কাঠামোর সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়ায় বাতিল ঘোষণা করা হয়।
তবে পঞ্চদশ সংশোধনীর পুরোটা বাতিল করেনি আদালত। অন্যান্য বিধান ভবিষ্যতে জনগণের মতামতের ভিত্তিতে সংশোধন বা পরিমার্জনের সুযোগ রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
রায় ঘোষণায় আদালতে উপস্থিত ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদ উদ্দিন। সুজনের পক্ষে ছিলেন ড. শরীফ ভূঁইয়া। বিএনপি, জামায়াত, ইনসানিয়াত বিপ্লব, গণফোরামসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আইনজীবীরাও শুনানিতে অংশ নেন।
২০১১ সালের ৩০ জুন সংসদে গৃহীত পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে— তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল, বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা হিসেবে সংবিধানে স্বীকৃতি, সংরক্ষিত নারী আসন ৪৫ থেকে ৫০-এ উন্নীতকরণসহ মোট ৫৪টি সংশোধন, সংযোজন ও প্রতিস্থাপন করা হয়।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বিভিন্ন পক্ষ রিট দায়ের করলে হাইকোর্ট রুল জারি করেন। দীর্ঘ শুনানি শেষে রায় ঘোষণা করা হয়, যা বর্তমানে আপিল বিভাগে বিচারাধীন।