নীলফামারী: নীলফামারীর ডোমারে বেসরকারি ক্লিনিক ‘ডোমার জেনারেল ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার’ এর গাইনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসার কারনে সিজারের দুই সপ্তাহ পর এক প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।
নিহত নারীর নাম লক্ষ্মী রায় (২৫)। তিনি ডোমার উপজেলার হরিনচড়া ইউনিয়নের নীলাহাটি শালমারা গ্রামের বাসিন্দা তাপস কুমার রায়ের স্ত্রী। এ ঘটনার পর মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) বিকেলে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ক্লিনিকে পরিদর্শন করে তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, ২১ নভেম্বর বিকেলে গর্ভাবস্থায় হঠাৎ শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে লক্ষ্মী রায়কে ডোমার জেনারেল ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভর্তি করা হয়। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর দ্বায়ীত্বরত গাইনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. অরাতুল আক্তার বিভা জরুরি সিজার করার পরামর্শ দেন। এক পর্যায়ে পরিবার রাজি হলে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে এক মেয়ে সন্তানের জন্ম হয়।
তবে দুই দিন পরই লক্ষ্মীর শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি হতে থাকে। চিকিৎসক তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। রোগী অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে গুরুতর সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছেন বলে চিকিৎসকরা জানান। পরবর্তীতে তাকে রংপুর ডক্টর্স ক্লিনিকে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে দুই সপ্তাহ চিকিৎসাধীন থাকার পর সোমবার (৮ ডিসেম্বর) বিকেলে তিনি মারা যান। তবে নবজাতক সুস্থ আছে বলে পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
নিহতের স্বামী তাপস কুমার রায় অভিযোগ করে বলেন, ‘ক্লিনিকে নেয়ার পর ডাক্তার আমাদের জানান দ্রুত সিজার না হলে বড় সমস্যা হতে পারে। আমরাও উপায়ন্তর না পেয়ে রাজী হয়ে যাই। ডোমারে চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসার কারণেই আমার স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে। সব মিলিয়ে চিকিৎসায় প্রায় ১২ লাখ টাকা ব্যয় করেও আমরা তেমন কোনো ফলাফল পাইনি। যেন অন্য কোনো পরিবার এ ধরনের ঘটনার শিকার না হয়, তাই তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।’
এ বিষয়ে হরিনচড়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. রাসেল রানা বলেন, ‘ঘটনার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ইউনিয়ন পরিষদের প্রতিনিধি ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। পরে আমি তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছি। আজ সকালে ওই মহিলার দাহ সম্পন্ন হয়েছে।’
অপরদিকে ক্লিনিকের পক্ষ থেকে মো. জাহাঙ্গীর ইসলাম জানান, সিজার সংক্রান্ত কোনো সমস্যা রোগীর হয়নি। একপর্যায়ে সংবাদকর্মীদের বিষয়টি বাড়াবাড়ি না করার অনুরোধ জানান তিনি।
গাইনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. অরাতুল আক্তার বিভা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘সিজারের সময় কোনো সমস্যা হয়নি। রোগীর জন্মগত কিডনি সমস্যা থাকায় তাকে ডায়ালাইসিসের জন্য রংপুরে রেফার করা হয়েছিল। কিন্তু তারা কিডনি বিভাগে না গিয়ে গাইনি বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছে।’
তদন্ত কমিটির প্রধান ডা. মো. আইনুল হক পরিদর্শন শেষে জানান, ‘ক্লিনিকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই, ট্রেড লাইসেন্সসহ প্রশিক্ষিত স্টাফও নেই। বেশিরভাগ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ডোমার থানার অফিসার ইনচার্জ মো. হাবিবুল্লাহ বলেন, ‘এখনও কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উল্লেখ্য, এই ক্লিনিকটি এর আগেও ২০২৩ সালে ভুল চিকিৎসার কারণে আলোচনায় আসে। তখন পেটব্যথা নিয়ে আসা ১৩ বছরের এক মাদরাসাছাত্রীকে গর্ভবতী বলে ভুল রিপোর্ট দেওয়ার ঘটনায় এলাকায় তীব্র সমালোচনা সৃষ্টি হয়। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত ক্লিনিকটি সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়। তবে কিছুদিন পর তারা স্থান পরিবর্তন করে পুনরায় কার্যক্রম শুরু করে।