Wednesday 10 Dec 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আসন্ন নির্বাচনে শিশু অধিকার সমুন্নত রাখার বিষয়ে জাতীয় সংলাপ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১০ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৯:০৬ | আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০২৫ ২০:০৩

আয়েজিত জাতীয় সংলাপে অতিথিরা।

ঢাকা: আসন্ন ত্রয়োদশ নির্বাচন শুধু ভোটের একটি দিন নয়। নির্বাচন একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া; যার মধ্যে রয়েছে রাজনৈতিক কর্মসূচি, মিছিল, জনসভা, পোস্টারিং, প্রচার এবং বড় আকারের জনসমাগম। এই পুরো সময়জুড়ে যে জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি অনিরাপদ থাকে পথ শিশু ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা।

বুধবার (১০ ডি‌সেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লা‌বে আয়েজিত জাতীয় সংলাপে বক্তারা এসব কথা বলেন। সংলাপের আ‌য়োজন ক‌রে লোকাল অ্যাডুকেশন অ্যান্ড ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন, হিউম্যান রাইটস ডেভেলপমেন্ট সেন্টার (এইচআরডিসি) এবং ঢাকা সেন্টার ফর ডায়ালগ (ডিসিডি)।

অনুষ্ঠা‌নে সভাপ‌‌তি ছি‌লেন লিডোর নির্বাহী প‌রিচালক ফরহাদ হোসেন। আরও উপ‌স্থিত ছি‌লেন বিএনপির লন্ডন প্রচার সম্পাদক ময়নুল ইসলাম, ঢাকা-৬ জামা‌য়‌াতে ইসলামী ম‌নোনীত প্রার্থী আব্দুল মান্নান, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু ও আমজনতার সদস্যসচিব তা‌রেক রহমান প্রমুখ।

বিজ্ঞাপন

ময়নুল ইসলাম ব‌লেন, ‘যারা শিশু‌দের সঙ্গে প্রতারণা ক‌রে, তারা নির্বা‌চিত হ‌লে জা‌তি‌র সঙ্গে প্রতারণা কর‌বে। তাই আমা‌দের অঙ্গীকার কর‌তে হ‌বে, নির্বাচ‌নে শিশু‌দের ব্যবহার কর‌ব না।’

জামায়াত নেতা আব্দুল মান্নান ব‌লেন, ‘শিশু ও নারী আমা‌দের দে‌শে সব‌চে‌য়ে বে‌শি ভি‌ক্টিম হয়। আমরা দলীয়ভা‌বে পথ‌শিশু‌দের পোশাক, বৃ‌ত্তিসহ অনেকে কর্মসূ‌চি দি‌য়ে‌ছি।’

তি‌নি আরও ব‌লেন, ‘বাংলা‌দে‌শে এই মুহূর্তে মরণব্যাধি হ‌চ্ছে কি‌শোর গ্যাং। আর এদের সেল্টার দেয় রাজনী‌তিবীদরা। আমা‌দের শপথ নি‌তে হ‌বে, আমরা এদের সেল্টার দি‌বে না।’

এবি পার্টির মজিবুর রহমান মঞ্জু ব‌লেন, ‘সবার আগে রাষ্ট্রীয় সংস্কার কর‌তে হ‌বে।‌ নির্বাচ‌নের আগে অনেক কথা ব‌লি, কা‌জের সময় নাই। আমা‌দের সবার উচিত যারা শিশু‌দের প্রচার-প্রচারণায় ব্যবহার ক‌রে, তা‌দের বয়‌কট কর‌তে হ‌বে।’

আমজনতার তা‌রেক রহমান ব‌লেন, ‘শিশু‌দের ব্যবহার ক‌রে একটা গো‌ষ্ঠী মাদকসহ সকল অপরাধ করা‌চ্ছে। এটা দেখার কেউ নেই। সরকার চাইলে একটা দালান ক‌রে পথ‌শিশু‌দের রাখ‌তে পা‌রে।’

অনুষ্ঠা‌নে অন্য বক্তারা ব‌লেন, ‘আমা‌দের ইশ‌তেহা‌রে পথ‌শিশুদের অধিকার দেওয়া দরকার। ‌কোনো শিশু‌কে আমরা ব্যবহার কর‌ব না। পথ‌শিশু‌দের দা‌য়িত্ব রাষ্ট্রকে নি‌তে হ‌বে।’

তারা আরও ব‌লেন, ‘আমরা শিশু‌দের খারাপ কা‌জে ব্যবহার ক‌রি। আজ যারা শিশু হত্যা কর‌ছে, তারা নো‌বেল পা‌চ্ছে। বাচ্চা‌দের অধিকার শুরু হোক ঘর থে‌কে।’

বাংলাদেশের শিশু আইন-২০১৩ অনুযায়ী ১৮ বছরের নিচে প্রত্যেক ব্যক্তি শিশু। কোনো শিশুকে এমন কাজে যুক্ত করা যাবে না, যা তার শারীরিক, মানসিক বা সামাজিক বিকাশের জন্য ক্ষতিকর।

জাতীয় শিশু সুরক্ষা নীতিমালা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করে, শিশুকে সহিংসতা, শোষণ, অবহেলা ও ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশ থেকে সুরক্ষা দেওয়া রাষ্ট্র ও সমাজের যৌথ দায়িত্ব।

রাজনৈতিক মিছিল, উত্তেজনাপূর্ণ সমাবেশ ও নির্বাচনকালীন সহিংসতা শিশুদের জন্য স্বীকৃতভাবেই ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশ। সে কারণে নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় শিশুদের ব্যবহার আইনগত ও নৈতিক উভয়ভাবেই অগ্রহণযোগ্য বলে উল্লেখ করেছেন বক্তারা।

তারা আরও বলেন, ‘রাস্তার শিশুদের অতিরিক্ত ঝুঁকিপথ শিশুরা দ্বিগুণ ঝুঁকিতে থাকে। তাদের অনেকেরই-স্থায়ী আশ্রয় নেই, পরিবার বা অভিভাবকের পর্যবেক্ষণ নেই, কোনো অভিযোগ জানানোর জায়গা নেই। ফলে নির্বাচনের সময় তারা রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহৃত হলেও তা শনাক্ত বা প্রতিরোধ করা কঠিন হয়ে পড়ে। গণমাধ্যমের ধারাবাহিক প্রতিবেদনগুলো স্পষ্টভাবে দেখায়, এই শিশুরা নির্বাচনি সহিংসতা ও শোষণের সবচেয়ে নীরব ভুক্তভোগী।’

আয়োজকরা মনে করেন

  • নির্বাচনি রাজনীতিতে শিশুদের ব্যবহার বন্ধ করা এখন জরুরি।
  • রাজনৈতিক দলগুলোর শিশু সুরক্ষার বিষয়ে স্পষ্ট দায়বদ্ধতা প্রয়োজন।
  • ২০২৬ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে একটি সুস্পষ্ট নীতিগত অবস্থান নিতে হবে।

তারা রাজ‌নৈ‌তিক দলগু‌লোর কা‌ছে দা‌বি ক‌রেন

  • কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি, মিছিল বা প্রচারণায় শিশুদের অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করা;
  • নির্বাচনকালীন সময়ে রাস্তার ও ঝুঁকিপূর্ণ শিশুদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া;
  • শিশু অধিকার সুরক্ষার অঙ্গীকার নির্বাচনি ইশতেহারে অন্তর্ভুক্ত করা;
  • শিশুদের রাজনৈতিক ব্যবহার বন্ধে একটি লিখিত ও প্রকাশ্য ঘোষণাপত্রে সই কর‍া।

সবশেষ বক্তরা বলেন, ‘শিশুরা ভোট দেয় না। কিন্তু ভোটের সময় সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে তারাই পড়ে। একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচন তখনই আর্থবহ, যখন সেটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। আমরা চাই, ২০২৬ সালের জাতীয় নির্বাচন হোক এমন একটি নির্বাচন-যেখানে শিশুরা ভয় নয়, সুরক্ষার মধ্যে থাকবে।’

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর