খুলনা: ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার আমলে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ গুমের ঘটনা বর্তমানে বন্ধ হলেও বিচারবহির্ভূত হত্যা ও হেফাজতে নির্যাতন এখনও চলছে এবং আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার বিরুদ্ধেও নাগরিকদের ওপর নিপীড়ন করার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। অতীতের অকার্যকর ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থা বহাল থাকায় বাংলাদেশে বহু নিরাপরাধ মানুষ সাজাপ্রাপ্ত হয়ে অথবা সাজার অপেক্ষায় কারাগারে আটক আছেন। কারাগারে আটক ব্যক্তিদের ওপর নির্যাতনসহ নানা ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। এমনকি হাসিনার বাহিনী কর্তৃক গুমের শিকার তিন শতাধিক ব্যক্তি এখনো ফিরে আসেনি। এ কারণে মানবাধিকার রক্ষা করতে হলে সরকারকেই মানবাধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
বুধবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুরে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস-২০২৫ উপলক্ষ্যে মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’ খুলনা ইউনিটের উদ্যোগে খুলনা প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন কর্মসূচি ও র্যালিতে অংশ নিয়ে বক্তারা এসব কথা বলেন।
কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন অধিকার খুলনা ইউনিটের ফোকাল পারসন সাংবাদিক মুহাম্মদ নূরুজ্জামান। দিবসটি উপলক্ষ্যে অধিকার-এর বিবৃতি পাঠ করেন মানবাধিকার কর্মী ও সিনিয়র সাংবাদিক জিয়াউস সাদাত।
অধিকার-এর বিবৃতির উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, অতীতের অকার্যকর ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থা বহাল থাকায় বাংলাদেশে বহু নিরাপরাধ মানুষ সাজাপ্রাপ্ত হয়ে অথবা সাজার অপেক্ষায় কারাগারে আটক আছেন। কারাগারে আটক ব্যক্তিদের ওপর নির্যাতনসহ নানা ধরণের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। চিকিৎসকের অভাবে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে অনেক বন্দি কারাগারে মারা যাচ্ছেন। দেশের প্রচলিত ফৌজদারি আইনে মৃত্যুদণ্ডের বিধান থাকায় প্রতি বছর নিম্ন আদালতে শুধুমাত্র স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীর ভিত্তিতে, যা প্রায় ক্ষেত্রেই নির্যাতনের মাধ্যমে নেওয়া হয়, অভিযুক্তদের মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ আছে।
আরও বলা হয়, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু কর্তৃত্ববাদী হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনৈক্য পরিলক্ষিত। রাজনৈতিক সহিংসতা চলমান রয়েছে, যা আগামী সাধারণ নির্বাচনকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক সহিংসতায় বহু লোকের প্রাণহানি হয়েছে। অনলাইনে নারীদের ওপর বিভিন্ন মহল থেকে হয়রানিসহ নারীদের ওপর বিভিন্ন ধরনের সহিংসতা অব্যাহত আছে। এছাড়া আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ও আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির আশানুরূপ উন্নতি করতে না পারায় বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চলছে। অন্তবর্তীকালীন সরকারের আমলে গণপিটুনিতে হত্যার ঘটনা বৃদ্ধি এবং আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশকে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য সুষ্ঠু ও অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রয়োজন।
কর্মসূচিতে বক্তৃতা দেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজে’র সহকারি মহাসচিব ও দৈনিক আমার দেশ-এর খুলনা ব্যুরো প্রধান এহতেশামুল হক শাওন, বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি আশারাফ-উজ-জামান, জেলা গণসংহতি আন্দোলনের আহবায়ক মুনীর চৌধূরী সোহেল, খেলাফত মজলিসের খুলনা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও রূপসা উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান হাফেজ মাওলানা আব্দুল্লাহ যোবায়ের, বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার খুলনা জেলা কো-অর্ডিনেটর অ্যাডভোকেট মমিনুল ইসলাম, দৈনিক সমকালের খুলনা ব্যুরো প্রধান ও মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন খুলনার সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসান হিমালয়, জাতীয় মানবাধিক ইউনিটের খুলনা মহানগর সভাপতি শেখ আব্দুল হালিম, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) খুলনা মহানগরীর সংগঠক মুশফিকার শামস মিনান, বৃহত্তর আমরা খুলনাবাসীর সহ-সভাপতি সরদার আবু তাহের ও খুলনা ব্লাড ব্যাংকের সভাপতি শেখ ফারুক। উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) খুলনা জেলা শাখার প্রধান সমন্বয়ক মাহমুদুল হাসান ফয়জুল্লাহ, নিরাপদ সড়ক চাইা-নিসচা’র খুলনা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক ও সাংবাদিক মাহবুবুর রহমান মুন্না, প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলাম, প্রভাষক মনিরুজ্জামান মোড়ল, শিক্ষক মো. আবুবকর সিদ্দিক, অ্যাডভোকেট এসএম মারুফ আহমেদ, খুলনা চিংড়ি বনিক সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি এস এম মনোয়ার হোসেন লাবলু, আহত জুলাই যোদ্ধা মো. শহিদুল ইসলাম উজ্জ্বল, পুলিশ কর্তৃক দুই চোখ উপড়ানো যুবক মো. শাহজালাল হাওলাদার, তার স্ত্রী রাহিলা বেগম, মা রেনু বেগম ও শ্বাশুড়ী নাসিমা বেগম, র্যাব কর্তৃক গুম ও নির্যাতনের শিকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মো. ইমরান হোসেন, তার কন্যা জান্নাতুল ম্যাহেক ও পুত্র মুফিদ ইসলাম, মানবাধিকার কর্মী ও সাংবাদিক এম এ আজিম, তাসনিম হাসান আফ্রিদী, মো. জামাল হোসেন, মো. রায়হান মোল্লা, এম এ সাদী, হাফেজ মুহাম্মাদ কামরুজ্জামান, সাখাওয়াত হোসেন স্বপন, মোসলেহ উদ্দিন, আনিসুর রহমান কবির মুন্সি, রেজাউল ইসলাম তুরান, মো. মুজাহিদুর রহমান, মাসুম বিল্লাহ ইমরান, সাফায়াত হোসেন শাওন, আব্দুল হান্নান, ইমরুল ইসলাম ইমন, মো. জামাল মোড়ল, ব্যবসায়ী মো. মোস্তফা কামাল রিপন, মো. ওয়াসিম রানা, মো. আমিরুল ইসলাম, এস এম জসিম উদ্দিন, খুলনা জেলা ব্লাড ব্যাংকের সাধারণ সম্পাদক মো. জাহিদুল ইসলাম, সহ-সভাপতি এস এম সোরহাব, ব্যবসায়ী মো. সাইফুল ইসলাম, নুরুল আলম, মো. তামিম হাসান, আবু সাঈদ আহমেদ, উসমান গণি, বাবু সরদার, প্রমুখ।
মানববন্ধন শেষে একটি র্যালি খুলনা প্রেসক্লাবের সামনে থেকে শুরু হয়ে নগরীর পিকচার প্যালেস মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।