রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়: ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে আন্দোলনের সম্মুখ সারির নেতাদের নানাভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে এবং প্রাণনাশের চেষ্টা করা হচ্ছে। এদিকে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণার পর দুষ্কৃতকারীরা বেশি সরব হচ্ছে। গত ১১ নভেম্বর ড্যাল্টন সৌভাত হীরা নামক ফেসবুক আইডির পোস্টে ‘জুলাই বিপ্লবীদের কিছু মানুষকে যেন তাদের পাওনা বুঝিয়ে দেয়া হয়’ বলে উসকানি দেওয়া হয়।
ওই পোস্টে জুলাই আন্দোলনের সম্মুখ সারির নেতা ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদির পর রাকসু’র সাধারণ সম্পাদক (জিএস) সালাহ্উদ্দিন আম্মারের নাম উল্লেখ ছিল। এরই মধ্যে (১২ ডিসেম্বর) হাদির ওপর ভয়াবহ হামলা হয়েছে। এখন তিনি মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। তবে কি কিলিং মিশনের নেক্সট টার্গেট জুলাইয়ের অন্যতম যোদ্ধা ও রাকসুর জিএস সালাহ্উদ্দিন আম্মার?
বর্তমানে দেশি-বিদেশি নানা জায়গা থেকে নানা মাধ্যমে অনবরত হত্যার হুমকি পাচ্ছেন আম্মার। ফলে চরম নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছেন তিনি। এদিকে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক আসাদুলা-হিল-গালিব গতকাল (১২ ডিসেম্বর) তার ফেসবুকে লিখেন, ‘দয়া করে আমার ক্যাম্পাসের টাকে (সালাহ্উদ্দিন আম্মারকে) কেউ কিছু করবেন না, অনুরোধ রইলো। ওইটা শুধু আমার আর আমার ভাই মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর (রাবি শাখা সভাপতি) ভাগ। ছোট ভাই প্রটেকশন বাড়াও। ৮০সিসি বাইক নিয়ে একা একা ঘুরাঘুরি কোরো না। আর তোমার আব্বা সাদিক কায়েম হেলিকপ্টারে যাতায়াত করে। তুমি অন্তত প্লেনে ঢাকা যাবা। তা না হলে যমুনার আগে ও পরে একটা কিছু হলেও হতে পারে। আমি চাই তুমি বেঁচে থাকো, অনেক হিসাব আছে।’
এর আগে ড্যাল্টন সৌভাত হীরা নামক ফেসবুক আইডির ৯ নভেম্বর দেওয়া উসকানিমূলক ওই পোস্টে লেখা হয়, ‘১৩ তারিখের মধ্যে কিছু মানুষের পাওনাটুকু যেন বুঝিয়ে দেওয়া হয় যদি তারা সাহস করে বের হয়। হাদি একজন, সালাহউদ্দিন আম্মার একটা, এনসিপির টোকাইগুলো কয়েকটা, ৩২ ভাঙার যাবতীয় উসকানি দেয়া হাসান রোবায়েত, হুজাইফা, মাহদূহ, হিযু বাহিনীর একেকটা।’
তারও আগে জুলাইয়ে আন্দোলন চলাকালীন রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার এবং রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ১০ কোটি টাকা দিয়ে সার্ফ শ্যুটার আনেন বলে গুঞ্জন ছিল।
শত-শত হুমকির বিষয়ে সালাহ্উদ্দিন আম্মার বলেন, ‘প্রতিদিন হত্যার হুমকি দিয়ে শত-শত ম্যাসেজ, শত-শত কল পাচ্ছি। ম্যাসেজ দিয়ে আব্বু-আম্মুর ছবি পাঠায়। এতে আমি চরম নিরাপত্তা হীনতায় রয়েছি। কিন্তু আমি বিন্দু পরিমাণ ভীত নই। এখনো আমার নাম্বারটাও পরিবর্তন করি নাই। শত-শত হুমকির মাঝে হাজার হাজার মানুষ যে আমাকে নিয়ে শঙ্কিত এটাই আমার জীবনের বড় পাওয়া।’
রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে লড়াই জারি থাকবে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা লড়ব ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে। আমরা লড়ব ইনসাফের পক্ষে। আমরা লড়ব, না হয় মরব, পেছনে ফেরার বিন্দুমাত্র সুযোগ নাই। আমি এভাবেই নিজের জীবন পার করব যতদিন বাঁচব। আমাদের লড়াই জারি থাকবে, আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে। আমারা সদা জাগ্রত। আল্লাহর জান আল্লাহ নিবে আজ হোক বা কাল। আমি আমার জীবন নিয়ে বিন্দুমাত্র ভীত নই। আমার কিছু হলে আব্বু আম্মুকে দেখে রাখবেন আপনারা। হাদি ভাইয়ের তো ১০ মাসের সন্তান, আমি আমার দুটি বৃদ্ধ সন্তান আমি রেখে যাব।’
ফ্যসিস্টবিরোধী আন্দোলনের সম্মুখ সারির যোদ্ধাদের নিরাপত্তা জোরদার করা জরুরি উল্লেখ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. ফজলুল হক বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে সম্মুখ সারির যোদ্ধারা নানাভাবে হুমকি ও আক্রমণের শিকার হচ্ছে। তাদের নিরাপত্তা জোরদারে সরকারকে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না হলে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও ভেঙে পড়বে এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ওপর এর প্রভাব পড়তে পারে।’