চট্টগ্রাম ব্যুরো: একাত্তরে শহিদ বুদ্ধিজীবীদের অনেকেই পাকিস্তানের পক্ষে ছিলেন জানিয়ে চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের আমির মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেছেন, পাকিস্তানপন্থী বুদ্ধিজীবীদের পাকিস্তানি বাহিনী কেন হত্যা করবে ?
রোববার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেলে নগরীর দেওয়ানবাজারে দলীয় কার্যালয়ে শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবসের আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডকে ‘জঘন্যতম মানবতাবিরোধী অপরাধ’ উল্লেখ করে জামায়াত নেতা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘হত্যাকাণ্ড যেমন গুরুতর অপরাধ, তেমনি ভুয়া বয়ান তৈরি করে প্রকৃত খুনিদের আড়াল করে অন্যদের ওপর দায় চাপিয়ে দেয়াও জঘন্য অপরাধ। কারা এ জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিল, প্রকৃত হত্যাকারী কারা ছিলো সেটা আজও রহস্যময় করে রাখা হয়েছে। দেড় যুগের ফ্যাসিবাদী শাসনে ভুয়া বয়ানের ভিত্তিতে মিথ্যা মামলা করে প্রচলিত সাক্ষ্য আইনকে উপেক্ষা করে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিচারিক হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে জাতীয় নেতাদের দুনিয়া থেকেও সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
চীনপন্থী কমিউনিস্ট নেতাদের ‘সাক্ষী মেনে’ তিনি দাবি করেন, মুক্তিযুদ্ধের পর রাও ফরমান আলী এক সাক্ষাৎকারে সেসময় ভারতীয় সৈন্যদের নিয়ন্ত্রিত ঢাকায় বুদ্ধিজীবীদের হত্যার জন্য ভারতকে দায়ী করার পক্ষে মত দিয়েছিলেন।
শহিদ বুদ্ধিজীবীদের অনেকে পাকিস্তানের পক্ষে ছিলেন উল্লেখ করে জামায়াত নেতা নজরুল বলেন, ‘শহিদ বুদ্ধিজীবীদের অনেকেই ছিলেন সরকারের পক্ষে বা পাকিস্তান রাষ্ট্রের ঐক্যের পক্ষে। ১৯৭১ সালের ১৭ মে বাংলাদেশের কতিপয় বুদ্ধিজীবী তৎকালীন রাষ্ট্রের অখণ্ডতার পক্ষে বিবৃতি দিয়েছিলেন। ঢাকাকেন্দ্রিক ৫৫ জন এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৩ জন শিক্ষক ছিলেন এই তালিকায়। সেখানে শহিদ বুদ্ধিজীবীদের অনেকেই আছেন।’
‘প্রশ্ন হচ্ছে- পাকিস্তানপন্থী বুদ্ধিজীবীদের পাকিস্তানি বাহিনী কেন হত্যা করবে ? এটি একটি অমিমাংসিত ঐতিহাসিক প্রশ্ন, যা যুগ যুগ ধরে ঘুরপাক খাচ্ছে। বিএনপির সাবেক সেক্রেটারি আবদুল মান্নান ভূঁইয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন- ১৯৭১ সালের ১২ ডিসেম্বর থেকে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী নিষ্ক্রিয় হয়ে যায় এবং তাদের সামরিক কমান্ড ভেঙে পড়ে। সে সময় তারা ছিল আত্মসমর্পণ ও আত্মরক্ষায় ব্যস্ত। নিজেদের জান নিয়ে যেখানে টানাটানি সেখানে অন্যকে হত্যা করার সুযোগ কই ?’
তিনি আরও বলেন, ‘নিরপেক্ষ গবেষক ও বুদ্ধিজীবীদের আরও অনেকে অভিন্ন মতামত দিয়েছেন যে, হত্যাকাণ্ডের শিকার বুদ্ধিজীবীরা ছিলেন পাকিস্তানপন্থী। তাদের কেউ ভারতে যাননি। জহির রায়হানের মতো অনেকে ছিলেন চীনপন্থী কমিউনিস্ট। পাকিস্তানি সৈন্যরা তাদের জীবনের সংকটকালে তাদের প্রতি অনুগত বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করতে যাবে কেন ? সামরিক বিষয়ে অভিজ্ঞ ব্যক্তিমাত্রই বিশ্বাস করেন যে, পাকিস্তানি সৈন্যদের নাম ব্যবহার করে অন্য কেউ তাদেরকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে।’
‘সন্দেহভাজন হিসেবে ভারতের নাম উচ্চারিত হয় সর্বাগ্রে। ভারতে না যাওয়ায় তারা ভারতের রোষানলে পড়েছিল। শহীদুল্লাহ কায়সারের হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তি জল চেয়েছিল। জল কোনো মুসলমানের পরিভাষা নয়। ভারতীয় বাঙালিরা জল বলে। তাই বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের তীর ভারতের প্রতি। তদন্ত কমিশন করে প্রকৃত সত্য উদঘাটনের আহবান জানাই।’
নগর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি মোহাম্মদ উল্লাহর পরিচালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন- কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার সদস্য খাইরুল বাশার, ডবলমুরিং থানার আমির ফারুকে আজম, চকবাজার থানার আমির আহমদ খালেদুল আনোয়ার, কোতোয়ালি থানার নায়েবে আমির আব্দুজ্জাহের।