রাজবাড়ী: সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘের (ইউএন) শান্তিরক্ষা মিশনের একটি ঘাঁটিতে সন্ত্রাসী হামলায় ছয়জন শান্তিরক্ষী নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার শামীম রেজা (২৮) রয়েছেন। এ ঘটনায় আরও আটজন শান্তিরক্ষী আহত হয়েছেন।
নিহত শামীম রেজা হোগলাডাঙ্গী গ্রামের আলমগীর ফকিরের বড় ছেলে। গত ৭ নভেম্বর সুদানের আবেইতে তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন।
রোববার (১৪ ডিসেম্বর) দুপুর ৩টায় রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার মৃগী ইউনিয়নের হোগলাডাঙ্গি গ্রামে গিয়ে দেখা যায় বাড়ির সামনে বসে আহাজারি করছেন বাবা আলম ফকির। স্বজন ও প্রতিবেশীরা তাকে শান্ত করার চেষ্টা করছেন।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় হোগলাডাঙ্গী কামিল মাদরাসার ছাত্র ছিলেন শামীম রেজা। শামীম এই মাদরাসা থেকে দাখিল ও আলিম পাস করেন। পরে ২০১৭ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সৈনিক পদে যোগ দিয়েছিলেন এবং সর্বশেষ কর্মস্থল ছিল বগুরা সেনানিবাসে। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে শামীম সবার বড়। মেজ ভাই সোহেল ফকির সৌদি আরব প্রবাসী, সেজ ভাই সোহান বেকার অবস্থায় বাড়িতেই রয়েছেন এবং একমাত্র বোন মরিয়ম খাতুন হাফেজিয়া মাদরাসায় পড়ালেখা করেন। তার বাবা আলমগীর ফকির স্থানীয় একটি মসজিদের মোয়াজ্জেম। গত দেড় বছর আগে বিয়ে করেন শামীম। প্রায় ৮ বছরের ধরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন তিনি।
নিহত শামীম রেজার ছোট ভাই সোহান ফকির বলেন, ‘ভাইয়া ৮ বছর ধরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে চাকরি করে। গত ৭ নভেম্বর সুদানে শান্তিরক্ষা মিশনে যায় সে। শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) রাত ১২টার দিকে আমরা তার নিহতের খবর পাই। পরে জানতে পারি ড্রোন হামলায় সে নিহত হয়।’
প্রতিবেশী আলীমুজাজামান বলেন, ‘শামীম বাড়ির বড় ছেলে। অনেক শান্ত ছেলে ছিল। অনেক স্বপ্ন নিয়ে শান্তিরক্ষা মিশনে গিয়েছিলেন। সংসারের সব দায়িত্ব ছিল ওর ওপর। কিন্তু সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হন তিনি। এখন পরিবারটি খুব অসহায় হয়ে পড়বে। আমরা চাই দ্রুত তার মরদেহ পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হোক।‘
শামীমের বাবা আলম ফকির বলেন, কৃষিকাজ করে শামীমকে লেখাপড়া শিখিয়েছি। গত ৭ নভেম্বর সে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সুদানে যায়। সবশেষ গত শুক্রবার ছেলের সঙ্গে মোবাইল ফোনে ভিডিও কলে কথা হয়। সে সময় ছেলে জানায়, সে সুস্থ আছে। বললো, আব্বু আমি ডিউটিতে যাব দোয়া করো। কিন্তু ডিউটিতে গিয়ে আর ফিরল না আমার ছেলেটা। শনিবার রাত ১২টার দিকে আমরা খবর পাই আমার ছেলে আর নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার ছেলে শামীম দেড় বছর আগে কুষ্টিয়ার খোকসায় বিয়ে করে। শামীমের স্বপ্ন ছিল ছোট ভাই-বোনদের ভবিষ্যৎ গড়ে দেবে। সে আমার মেঝ ছেলেকে সৌদি আরব পাঠিয়েছে। ছোট ছেলেকে সিঙ্গাপুর পাঠানোর জন্য পাসপোর্ট করেছে।’
এদিকে বিকেল ৪টার দিকে রাজবাড়ী সদর সেনা ক্যাম্পের একটি দল শামীম রেজার গ্রামের বাড়িতে তার পরিবারের খোঁজখবর নিতে আসে। এ সময় তারা শোকসন্তপ্ত শামীমের পরিবারকে সান্ত্বনা ও সমবেদনা জানান।
কালুখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মেজবাহ উদ্দিন বলেন, ‘আমি জানার সঙ্গে সঙ্গে নিহত শামীমের বাড়ি ছুটে আসি। উপজেলা প্রশাসনের থাকে পরিবারের কিছু আর্থিক সহযোগিতা করি। সন্তান হারানোর যে বেদনা, যে কষ্ট যা কোনো কিছু দিয়ে কখনোই পুরোপুরি পূরণ বা শেষ করা যায় না। আমরা কথা দিয়েছি কালুখালী প্রশাসন সবসময় তাদের পাশে থাকবো। তাদের ভালো মন্দ যতটুকু সম্ভব হয় সরকারের পক্ষ থেকে টেক কেয়ার করব।’