ঢাকা: ক্ষুদ্রঋণ কার্যকরভাবে পরিচালনা এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দারিদ্র্য দূরীকরণে ক্ষুদ্রঋণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এ লক্ষ্যে ‘ক্ষুদ্রঋণ ব্যাংক অধ্যাদেশ ২০২৫’ নামে একটি খসড়া প্রণয়ন করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।
খসড়া অনুযায়ী, লাইসেন্স প্রাপ্তি সাপেক্ষে একাধিক ব্যক্তি উদ্যোক্তা হিসেবে নিজস্ব অর্থায়নে এ ধরনের ব্যাংক স্থাপন করতে পারবে। ব্যাংকের প্রাথমিক অনুমোদিত ও পরিশোধিত মূলধন হবে যথাক্রমে ৩০০ কোটি টাকা এবং ১০০ কোটি টাকা। মূলত ‘মাইক্রেডিট রেগুলেটরি অথিরিটি আইন ২০০৬’-এর আওতায় সকল ক্ষুদ্রঋণ ব্যাংক পরিচালিত হবে এবং ব্যাংকের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও লাইসেন্স অথরিটি হচ্ছে ‘মাইক্রেডিট রেগুলেটরি অথিরিটি’ (এমআরএ)। ক্ষুদ্র ঋণ ব্যাংক পরিচালনার জন্য এমআরএ ‘মাইক্রেডিট রেগুলেটরি অথিরিটি আইন ২০০৬’-এর আওতায় একটি পৃথক বিভাগ বা দফতর স্থাপন করবে এবং পৃথক একজন নির্বাহীর দ্বারা এটি পরিচালিত হবে।
খসড়া অধ্যাদেশ অনুযায়ী, ব্যাংকের অনুমোদিত মূলধন প্রতিটি ১০০ টাকা মূল্যমানের ৩ কোটি সাধারণ শেয়ারে বিভক্ত থাকবে। আর পরিশোধিত মূলধনের ন্যূনতম ৬০ শতাংশ ব্যাংকের ঋণগ্রহীতা-শেয়ারহোল্ডার কর্তৃক পরিশোধ করা হবে এবং অবশিষ্ট ৪০ শতাংশ অন্যান্য শেয়ারহোল্ডারদের দ্বারা পরিশোধ করা যাবে। ব্যাংকের শেয়ার ক্রয়ের মাধ্যমে মূলধন পরিশোধ করা যাবে। তবে কোনো স্টক এক্সচেঞ্জে এ ব্যাংক তালিকাভুক্ত হবে না।
ব্যাংকের কার্যক্রমের বিষয়ে খসড়ায় বলা হয়েছে, ক্ষুদ্রঋণ ব্যাংক একটি সামাজিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করবে। ব্যাংক জামানতসহ বা জামানত ছাড়া, নগদে বা অন্য কোনো প্রকারে, সকল প্রকার অর্থনৈতিক কার্যক্রম, বিশেষত- নতুন উদ্যোক্তাদের আত্মকর্মসংস্থান ও দারিদ্র দূরীকরণের লক্ষ্যে ব্যবসা ও জীবনমান উন্নয়নে ঋণ প্রদান বা বিনিয়োগ করবে এবং লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আরোপিত শর্ত ও প্রাসঙ্গিক অন্যান্য আইনের অধীন শর্তপূরণ সাপেক্ষে সকল বা যে কোনো কাজ করতে পারবে।
খসড়ায় বলা হয়েছে, ক্ষুদ্রঋণ ব্যাংক বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিতে পারবে। তবে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ হিসেবে প্রদেয় অর্থের পরিমাণ তাদের মোট বিনিয়োগের অতিরিক্ত হবে না। পরিশোধযোগ্য বিনিয়োগের পরিমাণ নির্ধারণের ক্ষেত্রে ওই অর্থের ওপর কোনো কর ধার্য থাকলে তা পরিশোধ সাপেক্ষে প্রদেয় নিট অর্থের পরিমাণ বোঝাবে। যে কোনো নীতিগত প্রশ্নে ব্যাংক লাইসেন্স প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুসরণ করবে।
খসড়া অনুযায়ী, ক্ষুদ্র ঋণ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ হবে ৮ সদস্য বিশিষ্ট। এর মধ্যে একজন চেয়ারপার্সন, একজন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং ৬ জন মনোনীত পরিচালক থাকবেন। পর্ষদের মেয়াদ হবে ৩ বছর।
ব্যাংকের চেয়ারপার্সন নিযুক্ত হবেন পরিচালকদের ভোটের মাধ্যমে। আর ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন বোর্ড কর্তৃক। তার চাকরির শর্তাবলী বিধি দ্বারা নির্ধারণ করা হবে। ছয় মনোনীত পরিচালকের মধ্যে ঋণগ্রহীতা-শেয়ারহোল্ডারদের দ্বারা ৩ জন এবং অন্যান্য শেয়ারহোল্ডারদের দ্বারা বাকী ৩ জন মনোনীত হবে। কোনো মনোনীত পরিচালক একাদিক্রমে দুই মেয়াদের অধিক পরিচালক পদে থাকতে পারবেন না।
খসড়া অধ্যাদেশ অনুযায়ী, আর্থিক স্থিতিজনিত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ক্ষুদ্রঋণ ব্যাংক লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষের পূর্বঅনুমোদনক্রমে সরকার কর্তৃক গ্যারান্টিযুক্ত বিনিয়োগ ইনস্ট্রুমেন্টে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ আমানত বিনিয়োগ করবে।
ব্যাংকের আর্থিক হিসাব নিরীক্ষা করতে হবে ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল-এর তালিকাভুক্ত নিরীক্ষক দ্বারা। ‘ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং আইন ২০১৫’-এর ধারা ২-এর দফা (৮)-এ প্রদত্ত সংজ্ঞা অনুযায়ী ক্ষুদ্রঋণ ব্যাংক ‘জনস্বার্থ সংস্থা’ হিসেবে বিবেচিত হবে বলে খসড়ায় বলা হয়েছে।