Thursday 18 Dec 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জেআইসি সেলে গুম: শেখ হাসিনা ও ১২ সেনা কর্মকর্তার বিচার শুরুর আদেশ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৭:৪৭ | আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৮:১৭

শেখ হাসিনা। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেল (জেআইসি)-এ গুম ও নির্যাতনের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক-বর্তমান ১২ সেনা কর্মকর্তাসহ মোট ১৩ আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) ট্রাইব্যুনাল ১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ আদেশ দেন। প্যানেলের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম, গাজী এমএইচ তামিম, শাইখ মাহদীসহ অন্যান্যরা।

বিজ্ঞাপন

এদিন সকালে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে মামলায় গ্রেফতার তিন আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করে পুলিশ। তারা হলেন—ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভির মাজাহার সিদ্দিকী।

মামলার বাকি ১০ আসামি পলাতক রয়েছেন। এর মধ্যে পাঁচজন বিভিন্ন সময়ে ডিজিএফআইয়ের মহাপরিচালক (ডিজি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তারা হলেন—লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আকবর হোসেন, মেজর জেনারেল (অব.) সাইফুল আবেদিন, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. সাইফুল আলম, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আহমেদ তাবরেজ শামস চৌধুরী এবং মেজর জেনারেল (অব.) হামিদুল হক।

অন্য পলাতক আসামিরা হলেন—শেখ হাসিনার প্রতিরক্ষা বিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ তৌহিদুল উল ইসলাম, মেজর জেনারেল কবীর আহাম্মদ এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মখছুরুল হক।

এর আগে, এ মামলায় অভিযোগ গঠন বিষয়ে আদেশ দেওয়ার দিন ধার্য ছিল ১৪ ডিসেম্বর। তবে সেদিন কোনো আদেশ না দিয়ে আজকের দিন নির্ধারণ করেন ট্রাইব্যুনাল। ওই দিনও গ্রেফতার তিন আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছিল।

গত ৯ নভেম্বর গ্রেফতার তিন আসামির অব্যাহতি চেয়ে শুনানি করেন আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু। তিনি চারটি কারণে অব্যাহতির আবেদন করেন। এর মধ্যে বেআইনি আটক, অপহরণ ও নির্যাতনের অভিযোগ বিবেচনায় নেওয়ার কথা জানান ট্রাইব্যুনাল। অপর একটি অভিযোগ ছিল গুম করে রাখার বিষয়ে। পরে পলাতক আসামিদের পক্ষে শুনানি করেন স্টেট ডিফেন্স আইনজীবী হাসান ইমাম, আমির হোসেনসহ অন্যরা।

মামলায় প্রসিকিউশন মোট পাঁচটি অভিযোগ উত্থাপন করে। ৭ ডিসেম্বর অভিযোগ গঠনের শুনানিতে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম জেআইসি সেলে সরকারবিরোধী মতাদর্শের ব্যক্তিদের তুলে নিয়ে দীর্ঘদিন গুম ও নির্যাতনের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেন। তিনি জানান, ২০১৫ সালের ২২ অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত অন্তত ২৬ জন ব্যক্তি গুমের শিকার হন।

শুনানি শেষে ১৩ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আবেদন করেন চিফ প্রসিকিউটর।

এর আগে, ২৩ নভেম্বর পলাতক আসামিদের পক্ষে স্টেট ডিফেন্স আইনজীবী নিয়োগ দেন ট্রাইব্যুনাল। শেখ হাসিনা স্বেচ্ছায় আইনজীবী হিসেবে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেডআই খান পান্নাকে নিয়োগ দিলেও শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি ৩ ডিসেম্বর সরে দাঁড়ান। পরে মো. আমির হোসেনকে তার আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

গত ২২ অক্টোবর সেনা হেফাজতে থাকা তিন সেনা কর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হলে শুনানি শেষে তাদের গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। একই সঙ্গে পলাতক আসামিদের হাজির করার জন্য দুটি জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়।

উল্লেখ্য, গত ৮ অক্টোবর এ মামলায় ১৩ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। পরে অভিযোগ আমলে নিয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল।

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর