খুলনা: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, দেশের জনগণ যখন নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত, ঠিক তখনই একটি চক্র ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরীফ ওসমান হাদিকে গুলি করে পরিস্থিতি অস্থির ও অস্থিতিশীল করে তুলছে। বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) দুপুরে খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার খর্ণিয়া ইউনিয়নে এক উঠান বৈঠক শেষে তিনি এ কথা বলেন।
এসময় তিনি আরও বলেন, দেশের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দারা বারবার ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। যদি এভাবে চলতে থাকে, তাহলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়বে।
নির্ধারিত সময়ে নির্বাচনের জন্য সরকারি সংস্থাগুলোকে নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোকে সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সরকার ঘোষিত টাইমলাইনে নির্বাচনকে নিরাপদে সম্পন্ন করার জন্য সরকারের সকল অর্গানগুলোকে আরও কঠোর হতে হবে, রাজনৈতিক দলগুলোকে আরও সহনশীল, ধৈর্যশীল ও আন্তরিক হতে হবে এবং গণমাধ্যমকেও রাজনৈতিক দল ও জনগণের সঙ্গে সমন্বয় রেখে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।
এদিকে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় খর্নিয়া ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের বামুন্দিয়ায় সহযোগী সদস্য সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি বলেন, ‘অভ্যুত্থান পরবর্তী নতুন বাংলাদেশ গড়তে নারী, পুরুষ, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। পাশাপাশি রাষ্ট্রসংষ্কার, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি প্রদানে গণভোটকে হ্যাঁ বলুন।’
তিনি আরও বলেন, ‘কর্তৃত্ববাদী স্বৈরাচারী সরকারকে হঠাতে আবু সাঈদ, মুগ্ধরা তাদের জীবনকে বিলিয়ে দিয়েছে তবুও স্বৈরশাসনের কাছে মাথা নত করেনি। তারা চেয়েছিল একটি বৈষম্যহীন, বাক স্বাধীনতামুক্ত, আধিপত্যমুক্ত দেশ গড়তে যেখানে আমরা আমাদের কথাগুলো বলতে পারবো, আমাদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা বজায় থাকবে। কিন্তু শেখ হাসিনা আমাদের সকল সুযোগ কেড়ে নিয়ে রাষ্ট্রীয় মদদে গুম, খুন, হত্যা, জুডিশিয়ারি কিলিংয়ের মাধ্যমে আমাদের সকলকে জিম্মি করে রেখেছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা প্রথমে পরে সাধারণ জনগণ সবাই সেদিন রাস্তায় নেমে এসেছিল ওই স্বৈরাচারী সরকারকে হঠাতে। দুই হাজার ছাত্র- জনতার জীবন ও হাজার হাজার ছাত্র-জনতার পঙ্গুত্ব বরণের মধ্য দিয়ে পাওয়া এই নতুন বাংলাদেশকে তাদের চাওয়া অনুযায়ী গঠন করা এখন আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। সুতরাং আমরা এখন সেই কাঙ্খিত বাংলাদেশ গড়তে চাই। সেদিন ছাত্র-জনতা কর্তৃত্ববাদী শাসনকে লালকার্ড দেখিয়েছে আর আমরা এখন দেশ নির্মাণের অন্তরায় দূর্নীতিকে লালকার্ড দেখাবো ইনশাআল্লাহ।’ এসময় তিনি সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।
ওয়ার্ড সভাপতি মাওলানা মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা জামায়াতের সেক্রেটারী মুন্সী মিজানুর রহমান, সহকারি সেক্রেটারী অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস, ডুমুরিয়া উপজেলা আমীর মাওলানা মোক্তার হোসেন, উপজেলা হিন্দু বিভাগের সভাপতি ডাঃ হরিদাস মন্ডল, ঢাকাস্থ খুলনা ক্লাবের সভাপতি সরদার আঃ ওয়াদুদ, সাবেক শিবির নেতা ড. একরাম উদ্দিন সুমন।
শহিদুল ইসলাম সরদারের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন ইউনিয়ন আমির আবুল হোসেন শেখ, ইউনিয়ন সেক্রেটারি মাওলানা মুজিবুর রহমান, ইউনিয়ন হিন্দু সভাপতি নারায়ণ রাহা, সেক্রেটারি প্রদিপ দাস প্রমুখ। পরে বেলা ১১ টায় অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার পাচুড়িয়া এলাকায় গণসংযোগ করেন।
পরে বেলা ১২টায় পূর্ব ভদ্রদিয়ায় ৪নং ওয়ার্ডের উদ্যোগে অনুরূপ এক সহযোগী সদস্য সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। ওয়ার্ড সভাপতি আনোয়ার হোসেন গাজীর সভাপতিত্বে এবং সেক্রেটারি আবদুল কাদের মোড়লের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন জেলা সেক্রেটারী মুন্সী মিজানুর রহমান, সহকারি সেক্রেটারী অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস, ডুমুরিয়া উপজেলা আমীর মাওলানা মোক্তার হোসেন, ঢাকাস্থ খুলনা ক্লাবের সভাপতি সরদার আঃ ওয়াদুদ প্রমুখ।
এদিকে বিকাল ৩টায় শোভনা ইউনিয়নের মান্দারতলায় মতুয়া সম্মেলনে মাষ্টার শুভ্রত’র সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন জেলা সেক্রেটারী মুন্সী মিজানুর রহমান, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য এডভোকেট আবু ইউসুফ মোল্যা, ডুমুরিয়া উপজেলা আমীর মাওলানা মোক্তার হোসেন, শোভনা ইউনিয়ন সভাপতি মাওলানা মোসলেম উদ্দিন, সেক্রেটারী আবুল বাশার প্রমুখ।
এসময় প্রধান অতিথি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, স্বাধীন দেশে সকল সম্প্রদায়ের মানুষ তাদের ধর্মীয় উৎসব, আচার অনুষ্ঠান পালন করবে। কিন্তু পতিত হাসিনা সরকারের আমলে দেখা যেত হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দিরে তাদের প্রতিমা ভেঙে তার দায় ইসলাম পন্থীদের উপর চাপিয়ে দিত। আর আপনারাও সহজে তা বিশ্বাস করে নিতেন ইসলাম পন্থীদের সাথে না চলাফেরার কারণে। তবে ৫ আগস্টের পর আপনারা প্রমাণ পেয়েছেন ইসলামপন্থীরা কখনো কোন ধর্মের উপর আঘাত বা তাদের মন্দিরে হামলা করেনি। বরং রাত জেগে আপনাদের পূজায় পাহারা দিয়েছে। তাই আসুন হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানসহ সকল ধর্ম, বর্ণ ও গোত্রের মানুষ একসঙ্গে আমাদের এই প্রিয় মাতৃভূমিকে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কাঙ্ক্ষিত বসবাসের যোগ্য করে গড়ে তুলি।
রাত ৭টায় ফুলতলার রাড়ীপাড়ায় এক উঠান বৈঠক মাওলানা মতিয়ার রহমান এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান অতিথি ছিলেন অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। রবিউল ইসলামের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন জেলা সেক্রেটারী মুন্সি মিজানুর রহমান, জেলা সহকারী সেক্রেটারি প্রিন্সিপাল গাওসুল আজম হাদী, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য শেখ সিরাজুল ইসলাম ও এডভোকেট আবু ইউসুফ মোল্লা, জেলা যুব বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা আল মুজাহিদ, ফুলতলা উপজেলা আমীর অধ্যাপক আব্দুল আলীম মোল্যা, ফুলতলা ইউনিয়ন আমীর মাষ্টার মফিজুল ইসলাম, সেক্রেটারী হাফেজ আলআমিন গাজী প্রমুখ।