Monday 22 Dec 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

যমুনার চরাঞ্চলে হলুদ তরমুজ চাষে সফল সুমন মিয়া

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২৩ ডিসেম্বর ২০২৫ ০০:১৬ | আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫ ০০:১৮

সুমন মিয়া।

টাঙ্গাইল: যমুনা নদীর তীরবর্তী চরাঞ্চলে যেখানে একসময় অনাবাদি জমি ও ঝুঁকিপূর্ণ চাষাবাদই ছিল কৃষকদের নিয়তি, সেখানে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছেন এক তরুণ। টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার চরাঞ্চলে ভুট্টা ও বাদাম চাষে সফলতার পর এবার হলুদ তরমুজ চাষে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছেন সুমন মিয়া।

ভূঞাপুর উপজেলার যমুনা নদী তীরবর্তী গাবসারা ইউনিয়নের ফলদাপাড়া এলাকায় নদীভাঙনের কারণে দীর্ঘদিন ধরে অনাবাদি ও ঝুঁকিপূর্ণ জমিতে তেমন কোনো ফসল হতো না। বাদাম, ভুট্টা কিংবা ক্ষতিকর তামাক ছাড়া অন্য চাষে আগ্রহী ছিলেন না কৃষকরা। কিন্তু সেই ধারণা বদলে দিয়েছেন ভূঞাপুর সরকারি ইব্রাহিম খাঁ কলেজ-এর ডিগ্রি পর্যায়ের শিক্ষার্থী সুমন মিয়া (২৮)। ইউটিউবে আধুনিক তরমুজ চাষ দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজ উদ্যোগে প্রথমবার হলুদ তরমুজ চাষ করে সফলতা পেয়েছেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

আলাপকালে সুমন মিয়া জানান, ‘ইউটিউবে হলুদ তরমুজের ফলন দেখে আগ্রহ জন্মায়। এরপর সাহস করে ৫ বিঘা জমি লিজ নিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে চাষ শুরু করি।’ তিনি জানান, এ জমিতে তিনি তৃপ্তি, মধুমালা ও পাকিজা-এই তিন জাতের তরমুজের বীজ রোপণ করেন। মোট পাঁচ হাজার গাছে তরমুজ ধরেছে। তৃপ্তি ও মধুমালা জাতের তরমুজ বাইরে হলুদ রঙের, আর পাকিজা জাতের তরমুজ বাইরে সবুজ হলেও ভেতরে লাল ও অত্যন্ত মিষ্টি।

সুমন মিয়ার হিসাব অনুযায়ী, ৫ বিঘা জমিতে চাষ করতে তার মোট খরচ হয়েছে প্রায় ৬ লাখ টাকা। ফলন ও বাজারদর বিবেচনায় তিনি অন্তত ৫ লাখ টাকা লাভের আশা করছেন।

তিনি বলেন, ‘এটি মূলত শীত মৌসুমের ফসল। মাত্র তিন মাসেই ফলন পাওয়া যায়। প্রতিটি তরমুজের গড় ওজন ৫ থেকে ৭ কেজি। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই ক্ষেত থেকে বিষমুক্ত তরমুজ তুলে বিক্রি শুরু করব।’

সুমন মিয়ার তরমুজ খেত দেখতে আশপাশের এলাকা থেকে প্রতিদিনই ভিড় করছেন মানুষ। তার সাফল্য দেখে অন্তত ১০ জন কৃষক আগামী মৌসুমে তরমুজ চাষে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বলে জানান তিনি।

তার মতে, ‘ভূঞাপুরের চরাঞ্চলের বালুমাটি তরমুজ চাষের জন্য খুবই উপযোগী। সঠিক পরিকল্পনা আর সরকারি সহায়তা পেলে চরাঞ্চলের অর্থনীতি বদলে যেতে পারে।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর নাগরপুর, কালিহাতী, টাঙ্গাইল সদর ও ভূঞাপুর উপজেলার চরাঞ্চলে মোট ৪ হেক্টর জমিতে তিন জাতের তরমুজ চাষ হচ্ছে। কম খরচে বেশি লাভের আশায় অফ-সিজনের তরমুজ চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের মধ্যে।

ভূঞাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘গোল্ডেন ক্রাউন জাতের তরমুজ বাংলাদেশে তুলনামূলক নতুন। এটি সাধারণত মৌসুমের বাইরে চাষ হয়। বাইরে হলুদ হলেও ভেতরে লাল, সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। ফলন বেশি হওয়ায় অমৌসুমে বাজারমূল্যও ভালো পাওয়া যায়।’

তিনি আরও জানান, কৃষকদের আগ্রহ বাড়াতে কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে নিয়মিত মনিটরিং ও কারিগরি পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর