সিলেট: মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলায় জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের হামলায় দুই ভাই নিহতের ঘটনায় জড়িত জমির উদ্দিনকে আটক করেছে পুলিশ। তাকে পুলিশি প্রহরায় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
জমির উদ্দিন উপজেলার দক্ষিণভাগ উত্তর ইউনিয়নের বিওসি কেছরিগুল গ্রামের মৃত আব্দুস সবুরের ছেলে।
এদিকে রোববার (২৮ ডিসেম্বর) নিহত দুই ভাইয়ের ময়নাতদন্ত শেষে বিকেলে মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ। পরে সন্ধ্যা ৬টায় খলাগাঁও বাজার সংলগ্ন শাহজালাল জামিয়া ইসলামিয়া গৌরনগর দাখিল মাদরাসা প্রাঙ্গণে জানাজা শেষে তাদের দাফন সম্পন্ন হয়।
আলোচিত এ ঘটনায় রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত থানায় কোনো মামলা হয়নি। তবে যেকোনো সময় নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এদিকে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় চলছে প্রতিবাদের ঝড়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নিহত দুই ভাইয়ের সঙ্গে প্রতিপক্ষের জমির উদ্দিন গংদের জমি সংক্রান্ত বিষয়ে পূর্ববিরোধ রয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায় জামাল উদ্দিনদের বাড়ির পাশের ফসলি জমিতে পূর্ববিরোধের জেরে তার ভাই কাইয়ুমের সঙ্গে জমির উদ্দিন গংদের ঝগড়া লাগে। বিষয়টি শুনে কাইয়ুমের বড় ভাই জামাল উদ্দিন ঘটনাস্থলে গেলে একপর্যায়ে প্রতিপক্ষের লোকজন ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাদের ওপর হামলা চালায়। এতে দুইভাই ঘটনাস্থলেই মারা যান। হামলার সময় প্রতিপক্ষের জমির উদ্দিনও গুরুত্বর আহত হন। আহত অবস্থায় প্রথমে তাকে বড়লেখা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। বর্তমানে তাকে পুলিশি প্রহরায় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
পারিবারিক সূত্র জানায়, নিহত জামাল উদ্দিনের স্ত্রী হালিমা বেগমসহ দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। অন্যদিকে নিহত আব্দুল কাইয়ুমের স্ত্রী, ছোট ছোট দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিদের হারিয়ে দুই পরিবারের সদস্যরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
নিহত কাইয়ুমের স্ত্রী অভিযোগ করে বলেন, জামাল ও কাইয়ূমকে হত্যায় প্রতিপক্ষের জমির, কামাল, দোয়েল, জয়নাল, সামছুল, বদরুলসহ বেশ কয়েকজন অংশ নেন। তারা এই ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেছেন।
আরও পড়ুন: বড়লেখায় দুই ভাই খুন, আহত ১
এ হত্যার ঘটনায় হামলা ও মামলার ভয়ে বিওসি কেছরিগুল গ্রামের অর্ধেক পরিবার পুরুষশূন্য হয়ে গেছে। অনেকেই গ্রামছাড়া।
গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে আলাপকালে তারা বলেন, পুরো গ্রাম জুড়ে সুনসান নিরবতা। মোড়ে মোড়ে রয়েছে পুলিশের অবস্থান। মাঝে মাঝে টহল দিচ্ছে তারা। গ্রামের অর্ধেক অংশেই নেই পুরুষ। হামলায় অভিযুক্ত বেশ কিছু ঘরবাড়িতে কোনো সদস্যই নেই।
বড়লেখা থানার ওসি মো. মনিরুজ্জামান খান বলেন, নিহত দুই ভাইয়ের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে এবং মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় আহত অবস্থায় একজনকে আটক করা হয়েছে। তিনি পুলিশি হেফাজতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
এদিকে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন বিভ্রান্তিকর ও অপপ্রচারমূলক তথ্য ছড়ানো হচ্ছ। বিশেষ করে হত্যাকাণ্ডটিকে রাজনৈতিক ঘটনা হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে। তবে জেলা পুলিশ জানিয়েছে এ ঘটনার সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, গতকাল শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় উপজেলার দক্ষিণভাগ উত্তর ইউনিয়নের বিওসি কেছরিগুল (মাঠগুদাম) গ্রামে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। এতে বিওসি কেছরিগুল গ্রামের মৃত নিমার আলীর ছেলে কুয়েত ফেরত জামাল উদ্দিন (৫৫) ও কৃষক আব্দুল কাইয়ুম (৪৮) নিহত হন।