Sunday 28 Dec 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

তদন্ত কর্মকর্তার জবানবন্দি
আবু সাঈদ হত্যায় সরাসরি জড়িত বেরোবির সাবেক উপাচার্য হাসিবুর

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ০১:১১

রংপুর: জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম শহিদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থী আবু সাঈদের হত্যায় সরাসরি জড়িত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়টির তৎকালীন উপাচার্য মো. হাসিবুর রশীদ। আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন রোববার (২৮ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ দ্বিতীয় দিনের জবানবন্দিতে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেছেন।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এর দুই সদস্যের বিচারিক প্যানেলে এই সাক্ষ্য গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। প্যানেলের সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মঞ্জুরুল বাছিদ এবং অপর সদস্য জেলা ও দায়রা জজ নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর এদিন আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

বিজ্ঞাপন

তদন্ত কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন জানান, উপাচার্য হাসিবুর আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন। এই মামলায় ৩০ জন আসামির মধ্যে হাসিবুরসহ ২৪ জন পলাতক রয়েছেন, আর বাকী ৬ জন গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন।

জবানবন্দিতে তদন্ত কর্মকর্তা রুহুল আমিন বলেন, “২০২৪ সালের নিরীহ-নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার কোটা সংস্কার ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য হাসিবুর রশীদ। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকা সত্ত্বেও অন্য আসামিদের বেআইনি কার্যক্রম প্রতিরোধে কোনো ব্যবস্থা নেননি তিনি। এছাড়া, তৎকালীন রংপুর মহানগর পুলিশের (আরপিএমপি) কমিশনার মো. মনিরুজ্জামানও আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ছাত্রলীগ সদস্যদের সহযোগিতায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে নিয়োজিত পুলিশ কর্মকর্তাদের ওয়্যারলেসের মাধ্যমে আবু সাঈদকে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা এবং অন্যদের গুরুতর জখম করার নির্দেশ দেন। মনিরুজ্জামান ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেন এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক ও নিরীহ ছাত্র-জনতাকে গ্রেফতার করে নির্যাতনের মাধ্যমে হয়রানি করেন।”

মামলায় গ্রেফতার ছয় আসামির মধ্যে একজন বেরোবির তৎকালীন প্রক্টর শরিফুল ইসলাম। তার বিষয়ে জবানবন্দিতে বলা হয়, “তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকা সত্ত্বেও অন্য আসামিদের বেআইনি কার্যক্রম প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেননি। আবু সাঈদকে হত্যা এবং অন্যদের গুরুতর জখম করার ঘটনায় উসকানি দেন ও সহযোগিতা করেন তিনি।”

এছাড়া, আন্দোলন দমনে নিয়োজিত পুলিশ সদস্যদের বেআইনি কার্যক্রম নিবারণে কোনো ব্যবস্থা নেননি। জবানবন্দিতে আরও উল্লেখ করা হয়, “আবু সাঈদকে হত্যা এবং অন্যদের গুরুতর জখম করতে উসকানি দেন ও প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করেন রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি পোমেল বড়ুয়া। এ ছাড়া তিনি গত বছরের ১১ জুলাই আবু সাঈদকে থাপ্পড় মারেন।”

পুলিশের সাবেক সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আমির হোসেন ও সাবেক কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায় আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা করেন বলেও জানান তদন্ত কর্মকর্তা।

বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-২-এ এই মামলার বিচার চলছে। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারক মো. মঞ্জুরুল বাসিত ও বিচারক নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর। গত ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত এই মামলায় ১৬ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন। মামলাটি ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর আবু সাঈদের পরিবারের পক্ষ থেকে দায়ের করা হয়, যেখানে ৩০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। সম্প্রতি আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ সাক্ষ্য দেন এবং অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করেন।

উল্লেখ্য, আবু সাঈদ ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ফটকের সামনে (বর্তমানে আবু সাঈদ গেট ও আবু সাঈদ চত্বর) কোটা সংস্কার আন্দোলনের মিছিলে অংশ নেওয়ার সময় পুলিশের গুলিতে নিহত হন। তিনি বেরোবির ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন এবং আন্দোলনের প্রথম শহীদ হিসেবে পরিচিত। এই ঘটনা জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের সূচনা করে, যাতে সরকার পতন ঘটে। আবু সাঈদের স্মৃতিতে বেরোবির সংলগ্ন চত্ত্বরকে ‘শহিদ আবু সাঈদ চত্ত্বর’ নামকরণ করা হয়েছে।

২০২১ সালের ১৪ জুন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে যোগ দেন হাসিবুর রশীদ। শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে গত ১৬ জুলাই পুলিশের গুলিতে নিহত হন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। এর পর থেকে আন্দোলনের দাবানল ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। ওই দিন ভিসির পদত্যাগের দাবিতে তাঁর বাসভবন ঘেরাও করেন শিক্ষার্থীরা। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে ক্যাম্পাস ত্যাগ করে নিরাপদ স্থানে সরে যান হাসিবুর রশীদ। সূত্র জানায়, আবু সাঈদ নিহতের কয়েকদিন পরেই দেশত্যাগ করেন হাসিবুর রশীদ। সরকার পতনের পর ৯ আগস্ট হাসিবুর রশীদ উপাচার্য পদ থেকে পদত্যাগ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের অধ্যাপক হাসিবুর রশীদ এর আগে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন।

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর