শহিদুলের শুনানি: আপনারা পেটাবেন আর আমরা বসে বসে দেখব?
৭ আগস্ট ২০১৮ ২১:৫২
।। স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: ‘বুঝলাম তিনি (শহিদুল আলম) সাংঘাতিক রকমের কাজ করে ফেলেছেন! কিন্তু তাকে মারপিট করেছেন কেন? পত্রিকায় দেখালাম তার বক্তব্য দিয়ে সাংবাদিকরা লিখেছে, তাকে চোখ বেঁধে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তিনি বলেছেন, তাকে নির্যাতন করা হয়েছে। আপনারা তাকে পেটাবেন, আর আমরা বসে বসে দেখব?’
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে এভাবেই একের পর এক প্রশ্ন করছিলেন বিচারপতি সৈয়দ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি ইকবাল কবিরের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
মঙ্গলবার (৭ আগস্ট) আলোকচিত্রী এবং দৃক ও পাঠশালা সাউথ এশিয়ান মিডিয়া একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা শহিদুল আলমকে বিচারিক আদালতের দেওয়া রিমান্ড চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিটের শুনানিতে আদালত এসব কথা বলেন। এক পর্যায়ে আদালত বলেন, ‘কপাল ভালো গুম হয়নি।’
রোববার (৫ আগস্ট) রাতে বাসা থেকে আটক করে নিয়ে আসার পর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) উত্তরের পুলিশ পরিদর্শক মেহেদী হাসান শহিদুল আলমের বিরুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) আইনের ৫৭ ধারায় মামলা দায়ের করেন। ওই দিনই তাকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে মহানগর হাকিম আসাদুজ্জামান নূরের আদালত তার সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এই রিমান্ড আদেশ চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে দায়ের করা রিটের শুনানিতে শহিদুল আলমের আইনজীবী ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘শহিদুলকে নির্যাতন করা হয়েছে। তার জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা না দিয়ে তাকে রিমান্ডে নেওয়ায় সংবিধানের ৩১, ৩২, ৩৩ এবং ৩৫(৫) অনুচ্ছেদকে লঙ্ঘন করা হয়েছে।’
‘তাছাড়া গ্রেফতারের পর হেফাজতে নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ ও রিমান্ডে নেওয়ার ব্যপারে আদালতকে কোনো যৌক্তিক কারণ দেখাতে পারেনি ডিবি। তারপরও রিমান্ডে নেওয়ার আদেশে বিজ্ঞ বিচারক তার বিচারিক মানসিকতার প্রমাণ রাখেননি। ফলে তাকে দ্রুত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থানান্তরের নির্দেশনা চাচ্ছি।’— যোগ করেন ড. কামাল হোসেন।
প্রবীণ এই আইনজীবী বলেন, ‘তিনি একজন সাধারণ আলোকচিত্রী নন, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আলোকচিত্রী। তার মতো একজন ব্যক্তিকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে ডিবি কার্যালয়ে রাতভর জিজ্ঞাসাবাদ, নির্যাতন করা হয়েছে।’
এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার আলোকচিত্রী শহিদুল আলমকে রিমান্ডে নেওয়ার কারণ তুলে ধরে হাসপাতালে স্থানান্তরে আপত্তি জানান।
জবাবে আদালত বলেন, ‘এসব তো পুলিশের বক্তব্য। আর এখানে তো তার চিকিৎসার বিষয়ে কথা হচ্ছে। অসুস্থ বা আহত হলে তাকে চিকিৎসা দিতে হবে না?’
আদালতের প্রশ্নের উত্তরে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, ‘তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট একটি মামলাও হয়েছে। কোনো রকম আদেশ না দিয়ে শুনানি আগামীকাল পর্যন্ত মুলতবি রাখা হোক। মাননীয় অ্যাটর্নি জেনারেল এ বিষয়ে শুনানি করবেন।’
তখন বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন বলেন, ‘ছবিতে দেখা গেছে, তিনি হাঁটতে পারছেন না।’
এ পর্যায়ে আইনজীবী সারা হোসেন বলেন, ‘আমি ওই কোর্টে উপস্থিত ছিলাম। তিনি নাকে আঘাতপ্রাপ্ত। একদম খালি পায়ে তুলে নিয়ে আসা হয় তাকে। উনি হাঁটতে পারেন না। আর আমরা তো অন্য কোনো বিষয়ে এখন আদেশ চাচ্ছি না। দ্রুত চিকিৎসার জন্য আদেশ চাচ্ছি।’
অমিত তালুকদার তখন বলেন, ‘আগামীকাল মামলার কাগজপত্র আসবে। সেগুলো দেখে আসলে বলা যাবে।’
এ সময় বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন বলেন, ‘বুঝলাম তিনি (শহিদুল আলম) সাংঘাতিক রকমের কাজ করে ফেলেছেন! কিন্তু তাকে মারপিট করেছেন কেন? পত্রিকায় দেখালাম তার বক্তব্য দিয়ে সাংবাদিকরা লিখেছে, তাকে চোখ বেঁধে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তিনি বলেছেন, তাকে নির্যাতন করা হয়েছে। আপনারা তাকে পেটাবেন, আর আমরা বসে বসে দেখব?’
আদালত আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তি ডক্টরেট ডিগ্রি নিয়েছেন, নির্যাতন না করা হলে তিনি কি মিথ্যা বলেছেন? ধরে নিলাম তিনি ফলস বলেছেন। কিন্তু সাংবাদিকরা যে লিখেছেন তার নাক দিয়ে যে রক্ত পড়ছে, সাংবাদিকরা কি মিথ্যা লিখেছে? আর নিশ্চয়ই তিনি দুই তলা, তিন তলার ডিগ্রি নেননি! বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাক্তাররা দেখুক। আগে দেখি ডাক্তাররা কী বলে, তাকে নির্যাতন করা হয়েছে কি হয় নি— সেটা আমাদের দেখতে হবে।’
এরপর আদালত আগামী বৃহস্পতিবার (৯ আগস্ট) বিষয়টি আবার শুনানির জন্য রেখে ড. শহিদুল আলমকে দ্রুত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থান্তরের আদেশ দেন।
এর আগে, মঙ্গলবার শহিদুল আলমের রিমান্ড চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন তার পার্টনার রেহনুমা আহমেদ। একই রিটে শহিদুল আলমকে গোয়েন্দা পুলিশের হেফাজত থেকে দ্রুত হাসপাতালে স্থানান্তরের নির্দেশনাও চাওয়া হয়।
আরও পড়ুন-
শহিদুল আলমের রিমান্ড চ্যালেঞ্জ করে রিট
জামিন পেলেন না শহিদুল আলম, ৭ দিনের রিমান্ড
শহিদুল আলমকে দ্রুত বিএসএমএমইউয়ে ভর্তির নির্দেশ
শহিদুলের জন্য রঘুর হৃদয়ে রক্তক্ষরণ, প্রধানমন্ত্রীকে খোলা চিঠি
আদালতের অনুলিপি নেয়নি ডিবি-ডিএমপি: শহিদুল আলমের আইনজীবী
সারাবাংলা/এজেডকে/এসএমএন/টিআর