‘খালেদা জিয়া নিঃশ্বাস ফেলার সময় পাচ্ছেন না’
২৮ ডিসেম্বর ২০১৭ ১৫:২৬
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
ঢাকা : রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসেবে একের পর এক মামলা দিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন তার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন।
বকশীবাজার কারা অধিদফতরের প্যারেড গ্রাউন্ডে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালতে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট সংক্রান্ত দুর্নীতি মামলার যুক্তিতর্ক শুনানিকালে বৃহস্পতিবার তিনি এ অভিযোগ করেন।
খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, খালেদা জিয়াকে মামলা দিয়ে ধাওয়া করা হচ্ছে, নিঃশ্বাস ফেলার সময় পাচ্ছেন না তিনি। মাথা ঠাণ্ডা রেখে মামলা লড়ছেন।
‘মামলাটি রাজনৈতিক কালিমাযুক্ত’- এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, তিন বারের প্রধানমন্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এটি একটি হালকা মামলা। ১৭ বছর পর হঠাৎ প্রদীপ জ্বলে উঠেছে। এটি একটি অশুভ মামলা।
মাহবুব হোসেন বলেন, এখনো অনেক বিচারক আছেন, যারা ন্যায়বিচার করেন। তারা ইতিহাস হয়ে থাকবেন। এ মামলার ক্ষেত্রেও বিচারক যদি ন্যায় বিচার করেন, তাহলে তিনি ইতিহাস হয়ে থাকবেন। অন্যথায় কলঙ্কিত হবেন।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে যারা ক্ষমতায় থাকে, তারা চায় আদালতের কাঁধে বন্দুক রেখে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে। আমরা আশা করছি, মাননীয় আদালত ন্যায়বিচার করবেন।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের একটা পয়সাও তছরুপ হয়নি বলে দাবি করেন খালেদা জিয়ার এই আইনজীবী। তিনি বলেন, এই ট্রাস্টের সঙ্গে খালেদা জিয়া কোনোভাবেই জড়িত নন। তিনি সম্ভ্রান্ত পরিবার থেকে এসেছেন, তিন বার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন,সারা জীবন নিঃস্বার্থভাবে কাজ করেছেন, কখনো রাজপ্রাসাদে বসবাস করেননি।
খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, বিদেশ থেকে যে টাকা এসেছে, সেটি শুধু মাত্র প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আত্মার মাগফিরাতের জন্য, তার নাম স্মরণ করার জন্য।
‘তদন্তকারী কর্মকর্তা উল্লেখ করেছেন, যে টাকাগুলো এসেছে, সেগুলো দু’টি ট্রাস্টে ভাগ করা হয়েছে। এখানে মোস্তাফিজুর রহমানের টাকা হালাল আর খালেদা জিয়ার টাকা হারাম! মাননীয় আদালত, এ সব রাজনৈতিক’- বলেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী।
বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া যুক্তিতর্ক আগামী ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত মুলতবি রাখা হয়েছে। ৩-৪ জানুয়ারি বাকি যুক্তিতর্ক শুরু হবে। বিশেষ জজ আদালত ৫ এর বিচারক ড. আক্তারুজ্জামান বৃহস্পতিবার নতুন এ দিন নির্ধারণ করেন।
সকাল সাড়ে ১১টায় আদালতে আসেন খালেদা জিয়া। এর ১০ মিনিট পর তার পক্ষে যুক্তিতর্ক শুনানি শুরু হয়। খালেদা জিয়ার হাজিরা উপলক্ষে আদালত প্রাঙ্গণে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। মোতায়েন করা হয় বিপুল সংখ্যক পুলিশ। আদালতের প্রধান ফটকে স্ক্যানার বসিয়ে তল্লাশি করা হয়।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রাজধানীর রমনা থানায় জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা করে দুদক।এতিমদের সহায়তা করার উদ্দেশ্যে একটি বিদেশি ব্যাংক থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ এনে মামলাটি করা হয়। তদন্ত শেষে ২০০৯ সালের ৫ আগস্ট তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এরপর ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ অভিযোগ (চার্জ) গঠনের মাধ্যমে মামলার বিচার শুরু করেন।
এ মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ আসামি ছয়জন। অপর পাঁচ আসামি হলেন—খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মোমিনুর রহমান।
আসামিদের মধ্যে ড. সিদ্দিকী ও মোমিনুর মামলার শুরু থেকেই পলাতক। আর তারেক রহমান গত ৯ বছর ধরে লন্ডনে রয়েছেন। এ মামলায় তার বিরুদ্ধে আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। বাকিরা জামিনে রয়েছেন।
সারাবাংলা/এআই/একে/এজেড
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুদক বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া