আলোকচিত্রী শহিদুল আলমের মুক্তির দাবিতে নোবেলজয়ীদের বিবৃতি
১৯ আগস্ট ২০১৮ ১৭:৫৯
।। সারাবাংলা ডেস্ক ।।
প্রখ্যাত আলোকচিত্রী এবং দৃক ও পাঠশালার প্রতিষ্ঠাতা ড. শহিদুল আলমের অবিলম্বে ও বিনা শর্তে মুক্তির দাবিতে বিবৃতি দিয়েছেন ডেসমন্ড টুটু ও তাওয়াক্কুল কারমানসহ ১১ জন নোবেল বিজয়ী এবং বিশ্বের আরও ১৭ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব। এছাড়া নিরাপদ সড়কে দাবিতে বিক্ষোভের জের ধরে যেসব শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে, তাদেরও অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার কথা জানান তারা।
এ সময় তারা বাংলাদেশের সরকারের প্রতি সব নাগরিকের মানবাধিকার নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
প্রতিবাদ জানানো ১১ নোবেলজয়ীর মধ্যে ১০ জনই শান্তিতে নোবেল পদক পেয়েছেন। এছাড়া বিশিষ্ট অন্য ১৭ ব্যক্তিত্বের মধ্যে রয়েছেন নরওয়ের সাবেক প্রধানমন্ত্রী গ্রো হারলেম ব্রান্টল্যান্ড, অভিনেত্রী ও অ্যাকটিভিস্ট শাবানা আজমি, শ্যারন স্টোন ও চলচ্চিত্র পরিচালক রিচার্ড কার্টিস।
ওই যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ড. শহিদুল আলমকে বিতর্কিত আইসিটি আইনের আওতায় পুলিশি রিমান্ডে নেওয়ার বিরুদ্ধে আমরা যৌথভাবে আওয়াজ তুলেছি। বিবৃতিতে সই করা ব্যক্তিরা বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই, তারা যেন বেআইনি গ্রেফতারের অভিযোগ তদন্ত করে দেখে এবং ড. শহিদুল আলমকে অবিলম্বে এবং নিঃশর্তে মুক্তি দেয়।’
তারা সরকারের প্রতি বিক্ষোভের পর গ্রেফতার হওয়া সব শিক্ষার্থীকে মুক্তিরও দাবি জানায়।
সম্প্রতি রাজধানীর কুর্মিটোলা এলাকায় জাবালে নূর পরিবহনের দুই বাসের রেষারেষিতে একটি বাস ফুটপাতে অপেক্ষমাণ শিক্ষার্থীদের ওপরে উঠে যায়। এতে শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির দুই শিক্ষার্থী প্রাণ হারায়। এ ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাজধানীর বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা রাজপথে নেমে আসে। টানা এক সপ্তাহেরও বেশি তারা আন্দোলন চালিয়ে যায়। রাজধানীর বাইরেও সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে এই আন্দোলন।
এ ঘটনায় বিশ্ব গণমাধ্যমে অনেক বিশ্বাসযোগ্য প্রতিবেদন প্রচারিত হয়েছে উল্লেখ করে নোবেলজয়ী ও বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বরা বিবৃতিতে বলেন, তরুণ আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশের উপস্থিতিতেই আক্রমণ চালিয়েছে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন। সাংবাদিক ও ফটোগ্রাফারদের যারা এই বিক্ষোভের খবর প্রকাশে পেশাগত দায়িত্বে মাঠে নেমেছিলেন, তাদের ওপর হামলার নিন্দা জানানো হয় ওই বিবৃতিতে।
গণমাধ্যমের বরাতে বিবৃতি বলা হয়, স্কুল শিক্ষার্থীদের দাবির সমর্থনে কয়েকদিন পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে এলে তাদেরও বিভিন্ন মামলার অধীনে গ্রেফতার করা হয়।
এদিকে, শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনের সময় গত ৫ আগস্ট রাতে ড. শহিদুল আলমকে তার বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যান গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা। পরদিন তাকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) আইনের ৫৭ ধারায় মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। পরে শহিদুল আলমকে ঢাকা অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। আদালত তার সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর মধ্যে শহিদুল আলমের আইনজীবীরা রিমান্ড চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করলে হাইকোর্ট তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসার নির্দেশ দেন। পরে হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয় তার। রিমান্ড শেষে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, যে আইনে শহিদুল আলমের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে, সেটি ব্যাপকভাবে সমালোচিত একটি আইন। এমনকি সরকারও স্বীকার করেছে যে এই আইনের সংস্কার প্রয়োজন।
সে সময় গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বেশ কয়েকজন ছাত্রকে পুলিশি হেফাজতে নির্যাতন করা হচ্ছে, রিমান্ডের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের হয়রানি ও ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে। বিপরীতে তরুণ শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে যারা সহিংসতা চালিয়েছিল, তারা মুক্তভাবে ঘোরাফেরা করছে বলেও বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়। বিবিসি বাংলা।
সারাবাংলা/টিআর