আধুনিক প্রযুক্তি থাকায় চামড়া সংরক্ষণ সক্ষমতা বেড়েছে
২০ আগস্ট ২০১৮ ১০:৫৮
।। গোলাম সামদানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা : হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি শিল্প সাভারে স্থানান্তরিত হওয়ায় চামড়া সংরক্ষণের সক্ষমতা আগের চেয়ে কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। দেশে বছরে প্রায় দুই কোটি পশুর চামড়া সংগ্রহ হয়। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে কয়েকগুণ চামড়া সংরক্ষণের সক্ষমতা বাংলাদেশের রয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের মতে, চামড়ার গুণগত মান নষ্ট হয় মূলত সঠিক সময়ে এবং সঠিক পরিমাণে লবণ ব্যবহার না করলে। তবে সংরক্ষণের সক্ষমতার অভাবে দেশে চামড়া নষ্ট হয় না।
চামড়া ব্যবসায়ীদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ট্যানারিগুলোতে এখনো গত বছরের ৪০ শতাংশ চামড়া মজুত রয়েছে। এই মজুতের পরিমাণ প্রায় ১১ কোটি বর্গফুট। চলতি বছরে চামড়া সংগ্রহের নতুন লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৩ কোটি বর্গফুট। এর মধ্যে শুধু কোরবানি ঈদে চামড়া সংগ্রহ হবে ২০ কোটি বর্গফুট। ফলে গত বছরের মজুত চামড়া এবং চলতি বছরের সংগৃহীত চামড়াসহ ট্যানারিগুলোতে এই বছর ৪৪ কোটি বর্গফুট পশুর চামড়া সংরক্ষণ করতে হবে। এই বিপুল পরিমাণ চামড়া সংরক্ষণের সক্ষমতা বাংলাদেশের রয়েছে বলে জানিছেন ব্যবসায়ীরা।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ট্যানারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সভাপতি শাহীন আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘সাভারে ট্যানারি শিল্প নগরীতে স্থানান্তরিত ১৫৫টি ট্যানারির মধ্যে ১১৫টি কারখানা চালু হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৫৬টি ট্যানারি পুরোপুরি উৎপাদনে গেছে। বাকিগুলো স্বল্প পরিমাণে উৎপাদন শুরু করেছে। তা সত্ত্বেও সেখানে আমাদের চামড়া সংরক্ষণে কোনো সমস্যা হবে না। কারণ আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে কারখানাগুলোর উৎপাদন সক্ষমতা ৬ থেকে ৭ গুণ বেড়েছে।’
বিটিএ সভাপতি আরও বলেন, চামড়া সংরক্ষণের জন্য এবং গুণগত মান বজায় রাখতে লবণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মূলত সময়মত পরিমাণমত লবণ ব্যবহার করলে চামড়া নষ্ট হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তিনি বলেন, শুধু কোরবানির মৌসুমে অতিরিক্ত ৫০ থেকে ৬০ হাজার টন লবণ লাগে। এখন পর্যন্ত দেশে লবণের কোনো সংকট নেই, দামও তেমন বাড়েনি। আরও কয়েকদিন গেলে বলা যাবে, লবণের সংকট হবে কিনা এবং দাম বাড়ছে কিনা।
অন্যদিকে, কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হাজী মো. দেলোয়ার হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘সাভারে স্থানান্তরিত ট্যানারিগুলোতে আধুনিক যন্ত্রপাতি ও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে চামড়া সংরক্ষণের সক্ষমতা আমাদের আগের চেয়ে ৮ থেকে ১০ গুণ বেড়েছে। আগে ১৫৫টি ট্যানারি দিনরাত চালু রেখে যে চামড়া সংরক্ষণ হতো, এখন ৪০টি ট্যানারিও চালু থাকলেই তার চেয়ে বেশি কাজ হয়।’
তিনি আরও বলেন, আগে ট্যানারির এক ডোলে যেখানে আড়াইশ চামড়া প্রসেসিং হতো, বর্তমানে এক ডোলেই দেড় হাজার চামড়া প্রসেসিং করা যায়। ফলে, প্রসেসিংয়ের অভাবে কিংবা ট্যানারি স্বল্পতার কারণে চামড়ার গুণগত মান কিংবা চামড়া নষ্ট হওয়ার সুযোগ নেই।
দেলোয়ার হোসেনও বললেন, চামড়ার গুণগত মান নষ্ট হয় মূলত সঠিক সময়ে এবং সঠিক পরিমাণে লবণ দেওয়া না হলে। সাধারণ গরু থেকে চামড়া ছাড়ানোর ৮ থেকে ১০ ঘণ্টার মধ্যে লবণ দিলে এই চামড়া তিন থেকে চার মাস পর্যন্ত এমনিতেই সংরক্ষণ করা যায়। পরে ট্যানারিতে স্থানান্তরিত করে চূড়ান্তভাবে সংরক্ষণ করা হয়। তবে সময়মতো লবণ ব্যবহার না করলে কিংবা পরিমাণের চেয়ে কম লবণ ব্যবহার করলে চামড়া দ্রুত নষ্ট হয় বলে জানান তিনি।
দেশে বর্তমানে লবণের সংকট নেই জানিয়ে হাজী দেলোয়ার হোসেন বলেন, লবণের দামও তেমন একটা বাড়েনি। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, অভ্যন্তরীণভাবে প্রচুর লবণ উৎপাদন হয়েছে, বিদেশ থেকেও পর্যাপ্ত লবণ আমদানি করা হয়েছে। ফলে লবণ সংকট হওয়ার কথা না।
অন্যদিকে, লবণ মিল মালিক সমিতির সভাপতি নূরল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, বর্তমানে দেশে যথেষ্ট পরিমাণ লবণের মজুত রয়েছে। গত দেড় বছর ধরে লবণের দাম বাড়েনি, ঈদেও দাম বাড়বে না। বর্তমানে ৭৪ কেজি এক বস্তা লবণের দাম চট্রগ্রামে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা।
উল্লেখ্য, এবারের কোরবানির ঈদে ১ কোটি ১৫ লাখ পশুর কাঁচা চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন ব্যবসায়ীরা। এসব পশু থেকে চলতি বছরে চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ৩৩ কোটি বর্গফুট। এর মধ্যে কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ কোটি বর্গফুট। বাকি ১৩ কোটি বর্গফুট চামড়া বছরজুড়ে সংগ্রহ করা হবে। এর আগে ২০১৫, ২০১৬ ও ২০১৭ সালে চামড়া সংগ্রহ করা হয়েছিল যথাক্রমে ২৮ কোটি ৫০ লাখ বর্গফুট, ৩০ কোটি বর্গফুট এবং ৩১ কোটি ৫০ লাখ বর্গফুট।
সারাবাংলা/জিএস/জেএএম