এক মোটরসাইকেলে ৩ জন নয়, হেলমেট ছাড়া তেল নয়: ডিএমপি
৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৪:৩২
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: রাজধানীতে মাসব্যাপী বিশেষ ট্রাফিক সচেতনতা কার্যক্রমের ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। এই ট্রাফিক কার্যক্রমের আওতায় যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং করা যাবে না এবং হেলমেট না থাকলে মোটরসাইকেলের চালকরা তেল নিতে পারবে না। এক মোটরসাইকেলে তিন জনও উঠতে পারবেন না।
এছাড়া গাড়িতে অবৈধভাবে ফ্ল্যাগ স্ট্যান্ড লাগানো যাবে না এবং অবৈধ হুটার ও বিকন লাইট ব্যবহার করা যাবে না বলেও সতর্ক করেছেন ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া।
মঙ্গলবার (৪ সেপ্টেম্বর) সকালে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব ঘোষণা দেন।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, বর্তমানে সড়কের দুরাবস্থা দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনার ফসল। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় যেন পরিবর্তন আসে, সেজন্য মাসব্যাপী কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। একদিনে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে না, ধীরে ধীরে আসবে। মানুষের আইন না মানার প্রবণতা, অপ্রশস্ত সড়ক ও উন্নয়নের জন্য যত্রতত্র খোঁড়াখুঁড়ির কারণে ট্রাফিক সিস্টেমে ব্যাঘাত ঘটে।
এ সময় কমিশনার বলেন, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি রোভার স্কাউটসের ৩২২ জন সদস্য রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে কাজ করবেন। যেখানে-সেখানে যেন গাড়ি পার্কিং না হয় এবং সড়কে যেন শৃঙ্খলা ফিরে আসে, সেজন্য এ বিশেষ অভিযান চলবে।
আরও পড়ুন- রাজধানীতে লেগুনা চলবে না: ডিএমপি কমিশনার
মোটরসাইকেলচালকদের উদ্দেশে আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, কোনো মোটরসাইকেলে তিন জন চড়া যাবে না এবং প্রতিটি মোটরসাইকেলের চালক ও যাত্রীকে অবশ্যই হেলমেট পরতে হবে। আমরা ঢাকা শহরের সব পেট্রোল পাম্পকে বলে দিয়েছি, হেলমেট না থাকলে কোনো মোটরসাইকেল আরোহীকে জ্বালানি দেওয়া যাবে না। এরই মধ্যে এই নির্দেশনা শুরু হয়েছে।
প্রাইভেট কারের চালকদের প্রতি তিনি বলেন, অবৈধভাবে যারা ফ্ল্যাগ স্ট্যান্ড লাগিয়েছেন, তারা যেন সেগুলো খুলে ফেলেন। যারা অবৈধ হুটার ও বিকন লাইট ব্যবহার করেন, তারাও এগুলো আর ব্যবহার করবেন না। এসব ব্যবহার করলে তার জন্য শাস্তি পেতে হবে এবং এ ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তি বা শ্রেণিপেশার মানুষকে বিবেচনায় নেওয়া হবে না।
বাসচালকদের উদ্দেশে কমিশনার বলেন, ঢাকা শহরে ১২১টি বাস স্টপেজ চিহ্নিত করেছে পুলিশ। এর বাইরে কোনো বাস থামবে না। এক স্ট্যান্ড থেকে আরেক স্ট্যান্ড যেতে গাড়ির দরজা খোলা যাবে না। একইভাবে যত্রতত্র যাত্রীরাও দাঁড়াতে পারবেন না। পাল্লা দিয়ে গাড়ি চালাবেন না। গাড়িতে ড্রাইভারের ছবি ও মোবাইল নম্বর টাঙাতে হবে। গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোনে কথা বলা যাবে না। সিট বেল্ট লাগাতে হবে। সব বাসকে আগামীতে ঢাকায় ছয়টি রুটের আওতায় নিয়ে আসার কাজ চলছে। প্রজেক্টটি প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের দফতরে পাসের অপেক্ষায় রয়েছে।
বাস মালিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, যাচাই না করে ড্রাইভার নিয়োগ দেবেন না। লাইসেন্স চেক করবেন। নেশাগ্রস্ত কিনা, তা খতিয়ে দেখবেন। চুক্তিতে গাড়ি দেবেন না। চুক্তিতে গাড়ি দিলে পাল্লা দিতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে যায়।
জাহাঙ্গীর গেট থেকে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত মডেল ট্রাফিক সিস্টেম চালু করা হবে জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, এই একমাসে দৃশ্যমান অগ্রগতি আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। অন্তত এই একটি সড়ককে সিস্টেমে আনা হবে। মডেল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় রূপান্তর করতে রোড ডিভাইডার সাড়ে ৪ ফুট থেকে ৫ ফুট উঁচু করা হবে, যেন পথচারীরা কেউ টপকিয়ে যেতে না পারে। এটি বাস্তবায়ন হলে পর্যায়ক্রমে অন্য সড়কেও এই সিস্টেম ফলো করা হবে।
বিশেষ ট্রাফিক সচেতনতা কার্যক্রমের আওতায় পথচারীদেরও জেব্রা ক্রসিং দিয়ে পার হওয়ার নিয়ম মানা বাধ্যতামূলক করা হবে। ট্রাফিক আইন কেউ না মানলে ভ্রাম্যমাণ আদালত দিয়ে ওই সব রাস্তা পারাপার করা পথচারীদের শাস্তির আওতায় আনা হবে।
ব্যাটারিচালিত রিকশার চলাচল প্রসঙ্গে কমিশনার বলেন, ঢাকা শহরে কোনো ব্যাটারিচালিত রিকশা কোনোভাবেই চলবে না। একইসঙ্গে কোনো লেগুনাও চলবে না। এগুলো অবৈধ। তাদের কোনো রুট পারমিট নেই। এগুলো দুর্ঘটনার জন্য দায়ী এবং সড়কে বিশৃঙ্খলা তৈরি করে। তবে শহরের উপকণ্ঠে এসব চালাতে পারবে।
এক প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার বলেন, যে রুটে যতটা গাড়ির পারমিট দিয়েছে বিআরটিএ, ওই রুটে ঠিক ততটাই গাড়ি চালাতে পারবে পরিবহন কোম্পানিগুলো। এর বেশি চলতে পারবে না। সেদিকেও ট্রাফিক বিভাগ কাজ করছে।
ফুটপাত নিয়ে প্রশ্ন করলে কমিশনার বলেন, ফুটপাত পরিষ্কার করা হবে। এরই মধ্যে অনেক ফুটপাত দখলদারিত্ব বন্ধ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বাকিগুলোও দখলমুক্ত করা হবে। রাজউক ও সিটি করপোরেশনের সঙ্গে এ নিয়ে কাজ চলছে। জনগণের হাঁটা চলার ফুটপাত ফিরিয়ে আনা হবে। বিশেষ করে বাংলামোটর থেকে মগবাজার পর্যন্ত রাস্তার দুই পার দখল হয়ে গেছে। সেটাও ফিরিয়ে আনা হবে। রাজউকও শিগগিরই অভিযান চালাবে।
সবশেষে কমিশনার বলেন, সড়কে যতদিন শৃঙ্খলা ফিরে আসবে না ততদিন ট্রাফিকের এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে সব নাগরিককে সহযোগিতার জন্য অনুরোধ করেন ডিএমপি কমিশনার।
সারাবাংলা/ইউজে/টিআর