‘সময় ১ মাস, প্রস্তুত হোন’
১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৩:১৩
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: আইনি প্রক্রিয়ায় কারাবন্দি খালেদা জিয়ার মুক্তি সম্ভব নয়। রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমেই তাকে মুক্ত করতে হবে। হাতে সময় মাত্র এক মাস। সবাই প্রস্তুত হোন। অচিরেই কর্মসূচি আসছে। সেই কর্মসূচিতে সবাইকে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন আদায় করে তবেই ঘরে ফিরতে হবে।
আরও পড়ুন- প্রতীকী অনশনে বিএনপি
বুধবার (১২ সেপ্টেম্বর) ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন চত্বরে আয়োজিত প্রতীকী অনশন কর্মসূচিতে দলের নেতাকর্মী, সমর্থকদের উদ্দেশে এসব কথা বলেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে এ প্রতীকী অনশন আয়োজন করা হয়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘তথাকথিত সাজার পর আজ ৬ মাস হলো খালেদা জিয়া কারাগারে আছেন। অথচ ৬ দিনও তার কারাগারে থাকার কথা নয়। নিম্ন আদালত সম্পূর্ণভাবে সরকারের নিয়ন্ত্রণে। উচ্চ আদালত জামিন দেওয়ার পরও নিম্ন আদালতের ম্যাজিস্ট্রেটরা সরকারের ইন্ধনে তার এই জামিন স্থগিত করেছে।’
‘সুতরাং বিষয়টি খুব স্পষ্ট। সরকার চায় না বেগম খালেদা জিয়া জামিনে মুক্তি পাক। সেই জন্য আইনী প্রক্রিয়ায় তার মুক্তি সম্ভবপর নয়। তার মুক্তির একটাই পথ, সেটা হলো রাজপথ’— বলেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ।
তিনি বলেন, ‘রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়ার মুক্তি আনতে হবে। আমাদের যে আন্দোলন চলছে, এ আন্দোলন বেগবান হবে, আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে যাবে। আর আছে মাত্র মাস খানেক সময়। এই সময়ের মধ্যে প্রস্তুতি নিতে হবে। এবার রাস্তায় নামলে আন্দোলন সফল না হওয়া পর্যন্ত কেউ বাড়িতে ফিরে যাবেন না।’
সভাপতির বক্তব্যে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘এই সরকার ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো নীল নকশা করছে আরেকটি এক তরফা নির্বাচনের জন্য। আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, নির্বাচনের আগেই খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে এবং নির্বাচনের সময় সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বার বার জনগণের সাথে প্রতারণা করা যায় না। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো নির্বাচনে এ দেশে আর হবে না। আজ সারাবাংলাদেশ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে আগামী নির্বাচন হতে হবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না।’
ড. মোশাররফ বলেন, ‘সরকার আজ আতঙ্কিত। বিনা কারণে গায়েবি মামলা দিয়ে আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মী আটক করছে। পুলিশ প্রশাসনকে এবং সরকারকে বলতে চাই আপনাদের সময় শেষ। পুলিশকে বলব, জনগণের ওপর আর নির্যাতন করবেন না। আপনরা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী, আওয়ামী লীগের কর্মচারী নন। সুতরাং আওয়ামী লীগের নির্দেশে আর গ্রেফতার করবেন না।’
‘আগামী নির্বাচনে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে আমরা অংশগ্রহণ করব এবং এদেশের জনগণ খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে একটা প্রতিনিধিত্বশীল সরকার গঠন করবে। আপনারা যারা প্রশাসনের লোক আওয়ামী লীগের হয়ে কাজ করছেন, আপনাদেরকে কিন্তু প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে ভবিষ্যতেও কাজ করতে হবে’— বলেন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
দুপুর ১২টা ৫ মিনিটে বিএনপি নেতাদের পানি পান করিয়ে প্রতীকী অনশন ভাঙান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমেদ।
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বুধবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এই কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। কর্মসূচি সকাল ১০টায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সকাল ৯টা থেকেই ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে হাজির হতে থাকেন বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা। সকাল ১০টা নাগাদ নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে ইনস্টিটিউশন চত্বর পূর্ণ হয়ে যায়।
অনশন কর্মসূচিতে অংশ নিতে আসা নেতাকর্মীদের হাতে ছিল খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে লেখা বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড। ‘মুক্তি মুক্তি মুক্তি চাই, খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই’ বলে সারাক্ষণ স্লোগান দেন তারা।
এদিকে, বিএনপির অনশন কর্মসূচিকে ঘিরে সতর্ক অবস্থানে ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন চত্বরসহ এর আশপাশের এলাকায় মোতায়েন ছিল বাড়তি পুলিশ। অনশন শেষে ফেরার সময় মৎস ভবন ও শিল্পকলা একাডেমি মোড় থেকে বেশ কয়েকজনকে আটক করে তারা। এ সময় সংবাদকর্মীরাও পুলিশি হয়রানির শিকার হন।
অথচ গতকাল মঙ্গলবার (১১ সেপ্টেম্বর) রাতেই ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছ থেকে প্রতীকী অনশন কর্মসূচি পালনের মৌখিক অনুমতি পায় বিএনপি।
প্রতীকী অনশন কর্মসূচিতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, গয়েশ্বরচন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, মো. শাহজাহান, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, জয়নুল আবদিন ফারুক, আমান উল্লাহ আমান, আতাউর রহমান ঢালী, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, মিজানুর রহমান মিনু, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, এমরান সালেহ প্রিন্স, স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম।
এসময় আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার, শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, যুব দলের সিনিয়র সহসভাপতি মু. তাজুল করীম বাদরু, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র সহসভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, ছাত্রদলের সভাপতি রাজীব আহসান, সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসানসহ অন্যরা।
জোট নেতাদের মধ্যে বক্তব্য দেন জামায়াতের নায়েবে আমির মিয়া মোহম্মদ গোলাম পরওয়ার, ন্যাপ (ভাসানী) চেয়ারম্যান আজহারুল ইসলাম, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির সহসভাপতি শহীদের রহমান তামান্না, জাপার সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লুৎফর রহমান, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরানসহ অন্যরা।
এর আগে, গত সোমবার (১০ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে বিএনপি। মৌখিক অনুমতি নিয়ে পালন করা ওই কর্মসূচি শেষেও বিনা উসকানিতে বিএনপির প্রায় অর্ধশত নেতাকর্মীকে আটক করে পুলিশ।
সারাবাংলা/এজেড/টিআর