Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ডিজিটাল নিরাপত্তা বিলের প্রতিবেদনে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান


১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ২১:৫৩

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রেখে সংসদে ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল-২০১৮-এর প্রতিবেদন সংসদে উত্থাপন করেছে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। প্রতিবেদনে সম্পাদক পরিষদ ও সাংবাদিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক ও তাদের সুপারিশ বিলটিতে সন্নিবেশিত করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সোমবার (১৭ সেপ্টেম্বর) ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে সংসদের ২০তম অধিবেশনে বৈঠকে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি এই প্রতিবেদন উত্থাপন করেছে।

এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিলের ৩২ ধারায় অফিসিয়াল সিক্রেট অ্যাক্ট ১৯২৩-এর আওতায় কোনো ব্যক্তি সরকারি কোনো কম্পিউটার, ডিজিটাল ডিভাইস, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, ডিজিটাল নেটওয়ার্ক বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক্স মাধ্যমে তথ্য পাচারের অপরাধ করলে বা করতে সহায়তা করলে তিনি ১৪ বছরের কারাদণ্ড বা ২৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। একই অপরাধ দ্বিতীয়বার বা বারবার সংঘটিত করলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা এক কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

এই বিলের ৪৩ ধারায় বিনা ওয়ারেন্টে তল্লাশি ও গ্রেফতারের পাশাপাশি ক্ষতিকর তথ্য-উপাত্ত ব্লক বা অপসারণের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে পুলিশকে। এক্ষেত্রে জাতীয় ডিজিটাল নিরাপত্তা কাউন্সিলের মহাপরিচালকের অনুমোদনক্রমে পুলিশ যেকোনো স্থানে প্রবেশ ও তল্লাশি করতে পারবে এবং বাধাপ্রাপ্ত হলে ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারবে। কম্পিউটার, কম্পিউটার সিস্টেম ও নেটওয়ার্কসহ অন্যান্য সরঞ্জাম ও দলিল জব্দ ও ওই ব্যক্তি গ্রেফতার করতে পারবে। তবে তল্লাশি শেষ করার পর এ বিষয়ে ট্রাইবুনালকে প্রতিবেদন দিতে হবে।

বিজ্ঞাপন

বিলে ২১ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি ডিজিটাল মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির পিতা, জাতীয় সঙ্গীত বা জাতীয় পতাকার বিরুদ্ধে কোনো ধরনের প্রোপাগান্ডা ও প্রচারণা চালান বা তাতে মদত দেন, তাহলে ওই ব্যক্তি ১০ বছরের কারাদণ্ড ও এক কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

বিলের ২৫ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি ওয়েবসাইট আ অন্য কোনো ডিজিটাল মাধ্যমে (ক) ইচ্ছাকৃতভাবে বা জ্ঞাতসারে এমন কোনো তথ্য-উপাত্ত প্রেরণ করেন, যা আক্রমণাত্মক বা ভীতি প্রদর্শক অথবা মিথ্যা বলে জানা থাকা সত্ত্বেও কোনো ব্যক্তিকে বিরক্ত অপমান, অপদস্থ বা হেয় প্রতিপন্ন করার অভিপ্রায়ে কোনো তথ্য-উপাত্ত প্রেরণ, প্রকাশ বা প্রচার করেন; বা (খ) রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি বা সুনাম ক্ষুন্ন করার বা বিভ্রান্তি ছড়ানোর বা একই উদ্দেশ্যে অপপ্রচার বা মিথ্যা বলে জানা থাকা সত্ত্বেও কোনো তথ্য সম্পূর্ণ বা আংশিক বিকৃত আকারে প্রকাশ বা প্রচার করেন বা করতে সহায়তা করেন, তাহলে তিনি ৩ বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ৩ লাখ টাকা অর্থ দণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। একই অপরাধ দ্বিতীয়বার বা বারবার সংঘটিত করলে ৫ বছরের কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন ওই ব্যক্তি।

২৮ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী ইচ্ছাকৃতভাবে ধর্মীয় মূল্যবোধ বা অনুভূতিতে আঘাত করার বা উসকানি দেওয়ার অভিপ্রায়ে ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে কিছু প্রকাশ বা প্রচার করেন, তাহলে তিনি ৫ বছরের কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। একই অপরাধ দ্বিতীয়বার বা বারবার সংঘটিত করলে ১০ বছরের কারাদণ্ড বা ২০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

বিজ্ঞাপন

বিলের ২৯ ধারায় ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে পেনাল কোডের ৪৯৯ ধারা অনুযায়ী মানহানিকর কোনো তথ্য প্রচার ও প্রকাশ করার দায়ে ৩ বছরের কারাদণ্ড ও ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। তবে একই অপরাধ দ্বিতীয়বার বা বারবার সংঘটিত করলে ৫ বছরের কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রাখা হয়েছে।

৩১ ধারায় বলা হয়েছে, ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন বা করান, যা বিভিন্ন শ্রেণি বা সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা, ঘৃণা বা বিদ্বেষ তৈরি করে বা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট বা অস্থিরতা বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে বা আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটায় বা ঘটানোর উপক্রম হয়, তাহলে তিনি ৭ বছরের কারাদণ্ড বা পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। তবে একই অপরাধ দ্বিতীয়বার বা বারবার সংঘটিত করলে ১০ বছরের কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন ওই ব্যক্তি।

বিলের ৮ ধারায় বলা হয়েছে, জাতীয় ডিজিটাল নিরাপত্তা কাউন্সিলের মহাপরিচালকের নিজ অধিক্ষেত্রভুক্ত কোনো বিষয়ে ডিজিটাল মাধ্যমে প্রকাশিত বা প্রচারিত কোনো তথ্য-উপাত্ত ডিজিটাল নিরাপত্তার ক্ষেত্রে হুমকি তৈরি করলে তিনি ওই তথ্য-উপাত্ত অপসারণ, ক্ষেত্রমতো ব্লক করার জন্য বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন বা বিটিআরসিকে অনুরোধ করতে পারবেন। একই ধারায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ধর্মীয় মূল্যবোধ ও জনশৃঙ্খলা রক্ষায় মহাপরিচালকের মাধ্যমে একইভাবে তথ্য-উপাত্ত অপসারণ বা ব্লক করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। আইনের এ ধারায় সরকারকে অবহিত করে বিটিআরসিকে তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া অনুরোধ কার্যকর করার সক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্বলিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ‘রূপকল্প ২০২১: ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বিনিমার্ণের লক্ষ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সর্বোচ্চ নিরাপদ ব্যবহার আবশ্যক। বিশ্বে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহারের মাধ্যমে এর সুফলের পাশাপাশি অপপ্রয়োগও বেড়েছে। সাইবার অপরাধের মাত্রাও বাড়ছে। তাই জাতীয় ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং ডিজিটাল অপরাধের প্রতিকার, প্রতিরোধ, দমন, শনাক্তকরাণ, তদন্ত ও বিচারের উদ্দেশ্যে আইন প্রণয়ন আবশ্যক।

সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর

আরও পড়ুন:

সড়ক পরিবহন বিলের প্রতিবেদন সংসদে, ৫ বছর কারাদণ্ড বহাল

জাতীয় সংসদ ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর