Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

৩ অক্টোবর জেলায়, ৪ অক্টোবর বিভাগে বিএনপির সমাবেশ


৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৭:৪৭

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: কারবন্দি খালেদা জিয়াসহ সকল রাজবন্দির মুক্তি এবং ‘নির্বাসনে থাকা’ তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে আগামী ৩ অক্টোবর জেলা এবং ৪ অক্টোবর বিভাগীয় পর্যায়ে সমাবেশ করবে বিএনপি। সমাবেশ শেষে জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারকে স্মারকলিপিও দেবে দলটি।

রোববার (৩০ সেপ্টম্বর) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপি আয়োজিত জনসভা থেকে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

আরও পড়ুন- বিএনপির ৭ দাবি, ১২ লক্ষ্য ঘোষণার জনসভা রোববার

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি, তার সুচিকিৎসা নিশ্চিত করাসহ বিভিন্ন দাবিতে বিএনপির পক্ষ থেকে এ সমাবেশ আয়োজন করা হয়। সমাবেশ থেকে ৭ দফা দাবি ও ১২টি লক্ষ্য ঘোষণা করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

দাবিগুলো হচ্ছে— খালেদা জিয়ার মুক্তি, সাজা বাতিল, দলটির নেতাকর্মীর নামে দায়ের করা সব ’মিথ্যা’ মামলা প্রত্যাহার এবং নতুন মামলা না দেওয়া, তফসিলের আগেই সংসদ ভেঙে দেওয়া ও সরকারের পদত্যাগ, আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, নির্বাচন পর্যবেক্ষণে দেশি ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ না করা, ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে সেনাবাহিনী মোতায়েন এবং ইভিএম ব্যবহার না করা।

সাত দফা দাবির পাশাপাশি ১২টি লক্ষ্যও জাতির উদ্দেশে তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে— রাষ্ট্রের সর্বস্তরে সুশাসন নিশ্চিত করা, প্রতিহিংসার রাজনীতির অবসান, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি দলীয়করণের বদলে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিচারপতি নিয়োগ এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, সশস্ত্র বাহিনীকে আরো আধুনিক ও শক্তিশালী করা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, দুর্নীতি প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ, সব নাগরিকের মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত করা, স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ, কোনো ধরনের সন্ত্রাসবাদকে মদদ না দেওয়া, কোনো বিচ্ছিন্নতাবাদীকে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে না দেওয়া এবং আয়ের বৈষম্য অবসানকল্পে জাতীয় ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ।

বিজ্ঞাপন

দাবি এবং লক্ষ্যগুলো ঘোষণা করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘খালেদা জিয়াসহ সকল রাজবন্দির মুক্তি, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব ‘মিথ্যা’ প্রত্যাহার এবং উল্লেখিত দাবি আদায় ও লক্ষ্যগুলো বাস্তবায়নের জন্য আগামী ৩ অক্টোবর দেশের সব জেলায় সমাবেশ ও জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি প্রদান এবং ৪ অক্টোবর বিভাগীয় পর্যায়ে সমাবেশ ও বিভাগীয় কমিশনারকে স্মারকলিপি প্রদান করবে বিএনপি। এরপর পর্যায়ক্রমে আরও কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’

দেশ ও গণতন্ত্রের জন্য বেগম খালেদা জিয়া যেকোনো ধরনের ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত আছেন জানিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘গতকাল আমাদের একজন আইনজীবী কারাগারে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেছেন। তিনি অত্যন্ত অসুস্থ। কিন্তু সেই অসুস্থতা তাকে পরাভূত করতে পারেনি, দুর্বল করতে পারেনি। সেই অসুস্থতা নিয়েই তিনি দেশবাসীকে জানিয়েছেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য যেকোনো ধরনের ত্যাগ স্বীকার করতে রাজি আছেন। কিন্তু গণতন্ত্র উদ্ধারের জন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে এবং এই দানব সরকারকে সরাতে হবে।’

সম্পূর্ণ মিথ্যাভাবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় জড়ানো হয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘১০ অক্টোবর এই মামলায় তারা রায় দেবে। আমরা বার বার বলেছি, এই মামলা স্পূর্ণ সাজানো মামলা। তিন বার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন করে প্রধান রাজস্বাক্ষী মুফতি হান্নানকে ২শ দিন নির্যাতন করে, মিথ্যা ১৬৪ আদায় করে এবং মামলা শেষ হবার আগেই তাকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে।’

‘এই মামলা যেভাবে চলেছে, তাতে আমরা কখই এই মামলাকে গ্রহণ করতে পারি না। আমরা ২১ আগস্টের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছি। কিন্তু যারা অপরাধী নয়, তাদেরকে সাজা দেওয়ার প্রচেষ্টাকে আমরা নিন্দা জানাচ্ছি। আমরা আশা করব, বিচারক ন্যায় বিচার করবেন এবং যারা এর সঙ্গে জড়িত নন— তারেক রহমানসহ যারা আছেন তাদেরকে বেকসুর খালাস দেবেন’— বলেন মির্জা ফখরুল।

বিজ্ঞাপন

স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন বলেন, ‘মাত্র ২৪ ঘণ্টা হাতে রেখে আমাদেরকে জনসভা করার অনুমতি দিয়েছেন। এসে দেখে যান আমাদের জনসভা জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। যদি সাহস থাকে আমাদেরকে এক সপ্তাহ সময় দিয়ে সমাবেশ করার সুযোগ দেন, ঢাকা শহর বন্ধ হয়ে যাবে।’

‘আমরা যখন সমাবেশ করতে চাই, তখন আপনারা বলেন, এই সমাবেশ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার জন্য, নাশকতার জন্য করতে চাই। আজকের বিশাল সমাবেশে আপনারা কোথায় বিশৃঙ্খলা দেখছেন, কোথায় নাশকতা দেখছেন?’—প্রশ্ন ড. মোশারফ হোসেনের।

বর্তমান সরকারকে ফ্যাসিস্ট ও স্বৈরাচার আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘এই সরকারকে জনগণ আর চায় না। আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়া ২০১৭ সালে ভিশন ২০৩০ ঘোষণা করেছিলেন। তখন তিনি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের কথা বলেছিলেন। তিনি সেই সময় বলেছিলেন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় সংসদ ভেঙে দিতে হবে। সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ইভিএম ব্যবহার করা যাবে না। সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে।’

‘এ বছর ৩ ফেব্রুয়ারি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভায় তিনি বলেছিলেন জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির জন্য। আজকে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত যে, জনগণ খালেদা জিয়ার সেই ডাকে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সকল ধর্ম, বর্ণ ও মতের লোক এই সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, জোট এবং ব্যক্তি— সকল মহল ঐকমত্য হয়েছে, এই সরকারকে পতন ঘটাতে হবে’— বলেন ড. মোশারফ।

তিনি বলেন, ‘৫ জানুয়ারি নির্বাচনে প্রমাণ হয়েছে বিএনপিকে ছাড়া অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হয় না, খালেদা জিয়াকে ছাড়া অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হয় না।’

খালেদা জিয়াকে প্রতীকী প্রধান অতিথি ঘোষণা করে তার আসন শূন্য রেখেই দুপুর ২টা পাঁচ মিনিটে কোরআন তেলোয়াতের পর ছাত্রদলের সভাপতি রাজিব আহসানের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে বিএনপির জনসভা শুরু হয়। ভ্যাবসা গরম ও তীব্র রোদ উপেক্ষা করে মঞ্চের সামনে কয়েক হাজার নেতাকর্মী, সমর্থক মুহুর্মুহু স্লোগানে প্রকম্পিত করে তোলে জনসভাস্থল।

জনসভা শুরুর চার ঘণ্টা আগে সকাল ১০টা থেকেই ঢাকা এবং পাশ্ববর্তী জেলা থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী, সমর্থক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, রমনা পার্ক, শাহবাগ মোড়, মৎস ভবন মোড়, শিল্পকলা একাডেমি মোড় এবং আশপাশের সড়কে জমা হতে থাকেন।

দুপুর ২টা নাগাদ শাহবাগ থেকে মৎসভবন মোড় পর্যন্ত সড়ক রীতিমতো বন্ধ হয়ে যায়। যানচলাচল স্থবির হয়ে পড়ে। রাস্তার দুই পাশে শত শত গাড়ি আটকে যায়। চরম দুর্ভোগে পড়েন হাজার হাজার যাত্রী। পরে বিকেল ৪টার পর পুলিশি তৎপরতায় সীমিত পরিসরে যান চলাচল শুরু হয়।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে জনসভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরুদ্দিন সরকার, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, ড. মঈন খান, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, গয়েশ্বরচন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, সেলিমা রহমান, এডভোকেট জয়নাল আবেদীন, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, শওকত মাহমুদ, শামসুজ্জামান দুদু, বরকত উল্লাহ বুলু, মো. শাহজাহান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, জয়নুল আবদিন ফারুক, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, আতাউর রহমান ঢালী, ফজলুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দীন খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন,  মুজিবুর রহমান সরোয়ার, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, আসাদুল হাবীব দুলু, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, এমরান সালেহ প্রিন্স, শামা ওবায়েদ, বিলকিস জাহান শিরিনসহ অন্যেরা।

সারাবাংলা/এজেড/একে/টিআর

আরও পড়ুন

 ‘ক্ষমতায় এলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করবে বিএনপি’
সমাবেশে ধস্তাধস্তি, মৎস্য ভবন এলাকায় পুলিশকে লক্ষ্য করে পাটকেল নিক্ষেপ
শাহবাগ-মৎস্যভবন মোড় পর্যন্ত রাস্তা বন্ধ
দুপুরে বিএনপির সমাবেশ, পুলিশের কড়া নিরাপত্তা

খালেদা জিয়া বিএনপি মির্জা ফখরুল

বিজ্ঞাপন

বিদেশ বিভুঁই। ছবিনামা-১
২৪ নভেম্বর ২০২৪ ২৩:০০

আরো

সম্পর্কিত খবর