বেপরোয়া সাইবার আক্রমণ চালিয়েছে রাশিয়া: অভিযোগ পশ্চিমাদের
৫ অক্টোবর ২০১৮ ১৪:৩৮
।। আন্তর্জাতিক ডেস্ক ।।
রাজনৈতিক দল, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, গণমাধ্যম, অ্যাথলেট কিছুই বাদ যায়নি রাশিয়ার হ্যাকারদের কবল থেকে। পশ্চিমাদের অভিযোগ রাশিয়ার সামরিক গোয়েন্দা শাখা (জিআরইউ) এসব ঘটনার সাথে জড়িত। সুতরাং তারা সরাসরি আঙ্গুল তুলছেন পুতিনের ক্রেমলিন অফিসের দিকে।
বৃহস্পতিবার (০৪ অক্টোবর) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে একথা বলা হয়।
অভিনব এই ঘোষণায় ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্ট বলেন, ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি সেন্টার (এনসিএসসি) প্রমাণ পেয়েছে,সাইবার হামলাকারীরা রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা জিআরইউ-এর আস্কারায় পৃথিবীর নানা প্রান্তে হামলা চালায়। ক্রেমলিনের সম্মতিতে এসব হামলার ঘটনা ঘটে থাকে।
এধরনের হামলাকে অসৎ ও আন্তর্জাতিক নিয়মের লঙ্ঘন উল্লেখ করে হান্ট বলেন, বিশ্বের অনেক দেশের নাগরিক এমনকি রাশিয়ার নাগরিকরাও তাদের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর এই অভিযোগের বিষয়ে ৬টি নির্দিষ্ট আক্রমণের কথা উল্লেখ করে ১২টি হ্যাকিং গ্রুপের কোড নেম প্রকাশ করে। এই গ্রুপগুলো হলো, ফেন্সি বিয়ার, ভোদো বিয়ার, এপিটি২৮, সুফাসি, পোনস্ট্রম, সেডনিট, সাইবারখেলিফাত, সাইবার বেরকু, ব্লাকএনার্জি এক্টরস, স্ট্রোনটিয়াম, জার টিম ও স্যান্ডওয়ার্ম।
সাইবার হামলার ঘটনার মধ্যে, ২০১৭ সালের ব্যান্ড-র্যাবিট র্যানসমাওয়ার ভাইরাস ছড়িয়ে কিয়েভ মেট্রো, ওডেসা এয়ারপোর্ট, রাশিয়ার সেন্ট্রাল ব্যাংক ও রাশিয়ার দুটি গণমাধ্যমের ক্ষতির বিষয়টি উল্লেখ আছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয় আন্তর্জাতিক ডোপ নিরোধ সংস্থার তত্ত্বাবধানে থাকা অ্যাথলেটদের গোপনীয় ফাইল, ব্রিটিশ টিভি স্টেশন, ২০১৬ সালে ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কমিটিতে হামলা ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রভাব রাখতে চেষ্টা করেছে রুশ হ্যাকাররা।
ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে এ বিষয়ে বলা হয়, রুশ গোয়েন্দা সংস্থা জিআরইউ বেপরোয়া ও বাছ-বিচারহীন। তারা অন্য দেশের নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করে। এমনকি তারা রাশিয়ার কোম্পানি ও নাগরিকদেরও ক্ষতি করতে প্রস্তুত। এধরনের কাজে তারা আন্তর্জাতিক নিয়মনীতির তোয়াক্কা করে না।
বৃটেনের রয়েল ইউনাউটেড সার্ভিস ইনস্টিটিউট এর প্রফেসর ম্যালকলাম চালমার্স বলেন, পৃথিবীর অন্যান্য গোয়েন্দারা তথ্য চুরি করে ও কৌশলগতভাবে সুবিধা নিতে চায়। কিন্তু জিআরইউ কাজ সনাতন ধারণার বাইরে। তাদের উদ্দেশ্যবিহীন এসব আক্রমণ জীবন ও সমাজব্যবস্থার জন্য হুমকিস্বরুপ। তারা যুদ্ধ ও শান্তির মাঝে ধোঁয়াশা তৈরি করছে।
আরও পড়ুন: ওরা গোয়েন্দা নয়, সাধারণ নাগরিক : পুতিন
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে এর এক অনুরোধের প্রেক্ষিতে এই পূর্ণাঙ্গ তদন্তটি চালানো হয়। চলতি বছরের মার্চে ইংল্যান্ডের সলসবেরি নগরীতে সাবেক রুশ গুপ্তচর সের্গেই স্ক্রিপাল এবং তাঁর মেয়ে ইউলিয়াকে রাসায়নিক হামলা চালিয়ে হত্যাচেষ্টায় রাশিয়ার সম্পৃক্ততা নিয়ে যুক্তরাজ্যের ঘোষণার অংশ হিসেবে এমন ইঙ্গিত দেওয়া হল।
যুক্তরাজ্য তদন্ত করে স্ক্রিপাল হত্যাচেষ্টার ঘটনার জন্য আলেকজেন্ডার পেত্রভ এবং রুসলান বশিরভ নামের এই দুই রুশ নাগরিকে দায়ী করেন। তবে পুতিন বলছেন তারা গোয়েন্দা সংস্থার কেউ নয় বরং সাধারণ নাগরিক। সের্গেই স্ক্রিপাল রুশ গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক জিআরইউ সদস্য। তিনি রাশিয়ার দলত্যাগ করে রাজনৈতিক আশ্রয়ে বৃটেনে থাকছেন। পশ্চিমাদের সন্দেহ রাশিয় স্ক্রিপালকে হত্যার চেষ্টা করছে।
ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তর এমন এক সময়ে এই ঘোষণা দিল, যখন ২৯ দেশের ন্যাটো নিরাপত্তা জোট সম্মিলিতভাবে একটি সাইবার প্রতিরক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রস্তাব করেছে।
যুক্তরাজ্যের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা স্যার মার্ক লায়েল গ্রান্ট সাইবার আক্রমণকে স্বাধীন বিশ্বে টিকে থাকার হুমকি হিসেবে মনে করেন। তিনি জানান, শতকরা ৫০ ভাগ ব্রিটিশ কোম্পানি সাইবার হামলার শিকার হয়েছে।
যুক্তরাজ্যের এই অভিযোগের পরপরই পশ্চিমা অন্যান্য দেশগুলোও একইসাথে রাশিয়ার বিরুদ্ধে হ্যাকিং এর অভিযোগ তুলছে। গুরুত্বপূর্ণ এসব অভিযোগের মধ্যে রয়েছে, মালয়েশিয়ার নিখোঁজ বিমান এমএইচ১৭ অনুসন্ধানের তথ্য হাতিয়ে নিতে চেষ্টা, নেদারল্যান্ডে কেমিক্যাল ওয়েপন ওয়াচডগে সাইবার হামলা, যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তরে সাইবার হামলা এবং কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিলে ডোপ বিষয়ে তথ্য হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা ও মার্কিন নিউক্লিয়ার টেকনোলজি কোম্পানির তথ্য চুরি চেষ্টা।
সাইবার আক্রমণের এসব ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে সাতজনকে অভিযুক্ত করে পরিচয় প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এরা হলেন, দিমিত্রি সের্গেভিচ ব্যাডিন, আর্তেম আন্দ্রেভিচ মেলিসেভ, এলেক্সি ভেলেরভিচ মেনিন, অ্যালেক্সি সার্গেভিচ মলেন্তে, ইভোনি মিকলভিচ, মিকালোভিচ সতিনকভ, ইভান সারগোভিচ ইয়ারমাকুভ।
তাদের বিরুদ্ধে ধোঁকাবাজি, পরিচয় গোপন ও মানি লন্ডারিং এর অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে, ধারণা করা হচ্ছে তারা সবাই এখন রাশিয়ায় রয়েছে। উল্লেখ্য, রাশিয়ার সাথে আমেরিকার কোন বন্দি বিনিময় চুক্তি নেই।
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এসব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলছে, এসব পশ্চিমাদের ‘গোয়েন্দা উন্মাদনা’। তারা রাজনৈতিক প্রপাগান্ডার শিকার। মালশিয়ার বিমানের তথ্য হাতিয়ে নেবার মতো বিষয় কেন তারা করবে তা বোধগম্য নয় দেশটির।
রাশিয়ার মন্তব্য, ‘মোবাইল নিয়ে ঘুরতে দেখলেই তারা আমাদেরকে গোয়েন্দা মনে করে। ’
সারাবাংলা/এনএইচ