গ্রেনেড হামলা ছিল আ.লীগকে নেতৃত্বশূন্য করার প্রয়াস: আদালত
১০ অক্টোবর ২০১৮ ১৮:২০
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে তখনকার বিরোধী দল আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করার চেষ্টা করা হয়েছিল বলে এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে মন্তব্য করেছেন আদালত। বিচারক বলেন, সাধারণ জনগণ সহিংসতার রাজনীতি চায় না। এ আদালতও চায় না, সিলেটে ব্রিটিশ হাইকমিশনারের ওপর হামলা, সাবেক অর্থমন্ত্রী এস এম কিবরিয়ার ওপর নৃশংস হামলা, রমনা বটমূলে সংঘটিত বোমা হামলা কিংবা ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মতো হত্যা-সহিংসতার ঘটনার পুনরাবৃত্তি হোক।
রায়ের পর্যবেক্ষেণে আরও বলা হয়, রাষ্ট্রযন্ত্রের সহায়তায় প্রকাশ্য দিবালোকে নৃশংস এ হামলা ঘটানো হয়েছিল। কিন্তু রাজনীতি মানেই কি বিরোধী দলের ওপর পৈশাচিক আক্রমণ? রাজনীতিতে অবশ্যম্ভাবীভাবে ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী দলের মধ্যে মতবিরোধ থাকবে। তাই বলে বিরোধী দলকে নেতৃত্বশূন্য করার প্রয়াস চালানো হবে? এটা কাম্য নয়।
বুধবার (১০ অক্টোবর) দুপুরে পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে স্থাপিত ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় ঘোষণা করেন।
এই রায়ের পর্যবেক্ষণেই বিচারক বলেন, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ক্ষমতায় যে দলই থাকবেন বিরোধী দলের প্রতি তাদের উদারনীতি প্রয়োগের মাধ্যমে গণতন্ত্র সুপ্রতিষ্ঠিত করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা থাকতে হবে। বিরোধী দলীয় নেতাদের হত্যা করে ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিক ফায়দা অর্জন করা মোটেই গণতান্ত্রিক চিন্তার বহিঃপ্রকাশ নয়।
বিচারক বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পরাজিত শক্তি ঐক্যবদ্ধভাবে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে। সে ঘটনার বিচার যে না হয়, সে চেষ্টা চালায়। ইনডেমনিটি বিলের মাধ্যমে দেশে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র শুরু হয়। জাতির পিতাকে হত্যার পর চার জাতীয় নেতাকেও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে হত্যা করা হয়। তাতেও ষড়যন্ত্র থামেনি। পরে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগকে ফের নেতৃত্বশূন্য করার হীন প্রচেষ্টা চালানো হয়।
বিচারক বলেন, তৎকালীন রাষ্ট্রীয় যন্ত্রের সহায়তায় প্রকাশ্য দিবালোকে ঘটনাস্থল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের সামনে যুদ্ধে ব্যবহৃত স্পেশালাইজড মারণাস্ত্র আর্জেস গ্রেনেড বিস্ফোরণের মাধ্যমে ঘটনা ঘটানো হয়। প্রশ্ন ওঠে, কেন এই মারণাস্ত্রের ব্যবহার? রাজনীতি মানেই কি বিরোধী দলের ওপর পৈশাচিক আক্রমণ? শুধু আক্রমণই নয়, দলকে নেতৃত্বশূন্য করার ঘৃণ্য অপচেষ্টা। রাজনীতিতে অবশ্যাম্ভাবীভাবে ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী দলের মধ্যে মতবিরোধ থাকবে। তাই বলে নেতৃত্বশূন্য করার প্রয়াস চালানো হবে— এটা কাম্য নয়।
পর্যবেক্ষণে বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন বলেন, সাধারণ জনগণ এ রাজনীতি চায় না। সাধারণ জনগণ চায়, যেকোনো রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশে যোগ দিয়ে সেই দলের নীতি, আদর্শ ও পরিকল্পনা সম্পর্কে সম্যক ধারণা পাওয়া। আর সেই সভা-সমাবেশে আর্জেস গ্রেনেড বিস্ফোরণ করে রাজনৈতিক নেতা ও জনসাধারণকে হত্যার এ ধারা চালু থাকলে পরবর্তী সময়ে দেশের সাধারণ জনগণ রাজনীতিবিমুখ হয়ে পড়বে। এ আদালত চায় না— সিলেটে হযরত শাহজালাল (রহ.) এর দরগা শরীফের ঘটনার, সাবেক অর্থমন্ত্রী এস এম কিবরিয়ার ওপর নৃশংস হামলা, রমনা বটমূলে সংঘটিত বোমা হামলা এবং এ মামলার ঘটনায় তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর নৃশংস বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলার পুনরাবৃত্তি হোক।
পর্যবেক্ষণে আদালত আরও বলেন, আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মাধ্যমে এই নৃশংস ও ন্যাক্কারজনক ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করা সম্ভব বলে এ আদালত মনে করেন। সার্বিক পর্যালোচনায় দেখা যায়, মূল ঘটনার আগে বিভিন্ন ঘটনাস্থলে এ মামলার আসামিরা অভিন্ন অভিপ্রায়ে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র সভা করে পরিকল্পিতভাবে এ মামলার ঘটনাস্থল ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর সামনে ঘটনার তারিখ ও সময় মারাত্মক সমরাস্ত্র আর্জেস গ্রেনেডের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ ২৪ জনকে হত্যা ও শতাধিক নেতাকর্মীকে মারাত্মকভাবে জখম করে। এ মর্মে আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রসিকিউশন পক্ষ প্রমাণে সক্ষম হয়েছে। সে প্রেক্ষিতে আসামিদের শাস্তি প্রদান যুক্তিসঙ্গত বলে এ আদালত মনে করে।’
আরও পড়ুন-
তারেকের যাবজ্জীবন, বাবর-পিন্টুর ফাঁসি
রায়ে খুশি তবে পুরোপুরি সন্তুষ্ট নই: কাদের
বিচারের এখনও অনেক ধাপ বাকি: বি চৌধুরী
বিশ্ব গণমাধ্যমে গুরুত্ব পাচ্ছে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার রায়
খালেদা জিয়া ও তারেকের নাম বলিনি, তাই সাজা পেলাম: বাবর
সারাবাংলা/জেএ/টিআর
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা গ্রেনেড হামলা মামলার রায়