Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ছোটরাই বানাচ্ছে রোবট, করবে প্রতিযোগিতাও


১৫ অক্টোবর ২০১৮ ০৮:২৬

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।

‘আমাদের যুগে আমরা যখন খেলেছি পুতুল খেলা

তোমরা এ যুগে সেই বয়সেই লেখাপড়া কর মেলা।

আমরা যখন আকাশের তলে উড়ায়েছি শুধু ঘুড়ি

তোমরা এখন কলের জাহাজ চালাও গগনজুড়ি।’

কবি সুফিয়া কামালের লেখা কবিতার সেই আজিকার শিশুও বড় হয়ে গিয়েছে সেই কবেই! তার পরের প্রজন্মের শিশুরা এখন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে দেশ। শুধু দেশ কেন, বিদেশ থেকেও তো ম্যাথ অলিম্পিয়াড, জিওমেট্রিক অলিম্পিয়াড থেকে পদক নিয়ে আসছে তারা। এখন এই পুতুল খেলা আর লেখাপড়ার দারুণ মেলবন্ধনও করে ফেলছে শিশুরা। তারা নিজেরাই বানাচ্ছে রোবট! শুধু তাই নয়, সেইসব রোব্ট নিয়ে হচ্ছে প্রতিযোগিতাও!

ঠিক তাই। সারাদেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা রোবট বানানো শিশুদের নিয়েই আগামী ২৬ অক্টোবর (শুক্রবার) কার্জন হলে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ রোবট অলিম্পিয়াড-২০১৮।

রোবট অলিম্পিয়াডের বিষয়টি বাংলাদেশের জন্য খুবই নতুন। ২০১৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল রোবট অলিম্পিয়াডের সদস্যপদ লাভ করে। এর এক বছরের মাথায়ই শিশুরা নামছে রোবট অলিম্পিয়াডে। আর ২০১৮ সালে রোবট অলিম্পিয়াডের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতাটি অনুষ্ঠিত হবে ডিসেম্বরের ১৫ থেকে ১৯ তারিখ, ফিলিপাইনের ম্যানিলাতে। ১৬টি সদস্য রাষ্ট্রসহ ২২ থেকে ২৩টি দেশের প্রতিযোগীরা এই সম্মানজনক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে থাকে।

বাংলাদেশ থেকে এ বছর বাংলাদেশ রোবট অলিম্পিয়াডের (বিডিআরও) মাধ্যমে  প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় প্রতিযোগীদের পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে। সেই লক্ষ্যে দেশব্যাপী আঞ্চলিক পরিচিতিমূলক কর্মশালা এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় জাতীয় প্রতিযোগিতাটি ২৬ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে ঐতিহ্যবাহী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন: সোফিয়ার মতো কথা বলতে পারে বাংলাদেশের রোবটও

এই অলিম্পিয়াডের বিশেষত্ব হচ্ছে— এতে অংশগ্রহণকারীদের বয়স হবে ৭ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে। Robot Gathering, Rescue Mission, Travers Challenge, Robot In Movie, Creative Category (on Theme)— এমন বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জ থাকবে এই প্রতিযোগিতায়।

কথা হয় বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্কের (বিডিওএসএন) ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. লাফিফা জামালের সঙ্গে। এই সংগঠনটিই ইন্টারন্যাশনাল রোবট অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশকে যুক্ত করার কাজটা করেছে।

ড. লাফিফা একইসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবটিক্স ও মেকাট্রনিক্স বিভাগের প্রধানের দায়িত্বও পালন করছে। তিনি বলেন, ইন্টারন্যাশনাল রোবট অলিম্পিয়াড আয়োজন করার পেছনে আমাদের সবচেয়ে বড় দায়টা ছিল, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এই আসরটা শুরু হয়েছে ১৯৯৯ সাল থেকে। এ বছর এর ২০তম আসর। মানে পৃথিবীর অনেক দেশের শিশুরা এরই মধ্যে রোবট অলিম্পিয়াড মাতিয়ে তুলছে। তাহলে আমরা কেন নয়?

তিনি বলেন, আমরা গত কয়েক বছর ধরেই জাতীয় পর্যায়ে অনুষ্ঠিত বিজ্ঞান মেলা, প্রতিযোগিতা, উৎসবে দেখেছি, শিশু-কিশোররা রোবট বানিয়ে আনছে। যখন আমরা সেগুলোর বিচার করতাম, ওদের বলতাম, কোড বদলে দেখাতে কিংবা এমন কিছু করতে যা তাদের আয়ত্বের বাইরে হওয়ার কথা। কিন্তু আমরা দেখেছি, তারা পারছে। যেসব বিচার কাজ পাঁচ মিনিটে হওয়া সম্ভব, সেগুলো আমরা অনেক সময় নিয়ে করে দেখেছি, ওরা পারছে। এই বিষয়টা আমাদের একটা বার্তা দেয়— হ্যাঁ, এটা সময় আমাদের শুরু করার। এরপরই আমরা আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করি এবং খুব সুন্দর একটা দিন, ২০১৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর আমরা সদস্যপদ পেয়ে যাই।

প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের শিশুদের অংশগ্রহণ নিয়ে ড. লাফিফা বলেন, যেহেতু আমাদের প্রথম অংশগ্রহণ, তাই আমরা শুরুতেই অনেক কিছু চাচ্ছি না। আর এই আসরটাও এমন যে চাইলেও যেকোনো কিছু করে ফেলা যাবে না। এখানে খুব নির্দিষ্টভাবে বলা আছে, রোবট নিয়ে প্রতিযোগী আসলে কী কী করতে পারবে। তাই খুব বেশি কিছু করার অবকাশ নেই। তাই আমরা চাচ্ছি, যেসব প্রতিযোগীরা সেখানে যাবে তাদের কিছুটা প্রশিক্ষণ দিতে, যেন তারা প্রতিযোগিতাটার বিষয়ে বিশদ ধারণা পায়।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন: জাপানি রোবটের গ্রহাণু জয়

এখন পর্যন্ত আমাদের প্রতিযোগীদের কী অবস্থা— জানতে চাইলে ড. লাফিফা বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত বিভিন্ন জেলায় স্কুল পর্যায়ে গিয়েছি প্রতিযোগী সংগ্রহে। আমি দেখেছি, ওদের অনেক আগ্রহ। ওরা সমস্যার দারুণ সব সমাধান বের করে। আমাদের কাজ হচ্ছে, ওদের এই কল্পিত সমাধানগুলোর পথে পৌঁছাতে সাহায্য করা। তাই আমরা চাচ্ছি একটি জাতীয় পর্যায়ে রোবট অলিম্পিয়াড আয়োজন করে প্রতিযোগীদের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার জন্য তৈরি করতে।

৭ থেকে ১৮ বছরের শিশু-কিশোররা যোগ দিতে পারবে ২৬ অক্টোবরে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জাতীয় রোবট অলিম্পিয়াডে। তবে তার আগে https://goo.gl/BAhHYj লিংকে গিয়ে অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে তাদের।

তাহলে আর বসে থাকা কেন, বাংলাদেশও তৈরি হয়ে যাক রোবট অলিম্পিয়াডের যোগ দেওয়ার জন্য। কে বলবে, এই বছরই আমরা পদক জিতে ফেলি কি না!

সারাবাংলা/এমএ/একে/টিআর

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ রোবট অলিম্পিয়াড-২০১৮ রোবট

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর