ডা. জাফরুল্লাহর বক্তব্যে আইএসপিআরের প্রতিবাদ
১৫ অক্টোবর ২০১৮ ১৯:৪৯
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে টকশো’তে আলোচনার সময় গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর)।
সোমবার (১৫ অক্টোবর) আইএসপিআর থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন- সেনাপ্রধানকে নিয়ে জাফরুল্লাহর বক্তব্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিত: সেনাসদর
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ৯ অক্টোবর ২০১৮ তারিখ রাত ১০টায় ‘সময়’ টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত টকশো ‘সম্পাদকীয়’তে অংশ নিয়ে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী আলোচনার একপর্যায়ে ২১ আগস্ট ২০০৪ সালে ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউ তে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জনসভায় ইতিহাসের নৃশংসতম, জঘন্য ও ঘৃণ্য গ্রেনেড হামলার ঘটনার সঙ্গে বর্তমান সেনাবাহিনী প্রধান ও সেনাবাহিনীর সংশ্লিষ্টতা খুঁজতে গিয়ে দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে বর্তমান সেনাবাহিনী প্রধান ও সেনাবাহিনী সম্পর্কে কল্পনাপ্রসূত ও বানোয়াট কিছু অসত্য তথ্য পরিবেশন করেন। সেনা সদর থেকে পরদিন (১০ অক্টোবর) ‘সময়’ টিভিতে লিখিত প্রতিবাদ জানানো হলে সময় টিভি কর্তৃপক্ষ অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে ওই দিনের ‘সম্পাদকীয়’ অনুষ্ঠানের শুরুতে ওই প্রতিবাদলিপি প্রচার করে।
আইএসপিআরের বিজ্ঞপ্তিতে ডা. জাফরুল্লাহর বক্তব্য ও সেনা সদরের প্রতিবাদ তুলে ধরা হয়। আইএসপিআরের বিজ্ঞপ্তি থেকে এ দুই বক্তব্য হুবহু উল্লেখ করা হলো—
‘গতকাল (৯ অক্টোবর) সময় টিভিতে রাত ১০টায় প্রচারিত টকশো ‘সম্পাদকীয়’ চলাকালীন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী যে বক্তব্য দেন তা হলো—
‘………….. দেখেন আরজেএস গ্রেনেড, আমি জানি না সময়টি মিলে কি না, আমাদের বর্তমান চিফ অব আর্মি আজিজ সাহেব চট্রগ্রামের কমান্ড্যান্ট ছিলেন, জিওসি ছিলেন, কমান্ড্যান্ট ছিলেন। তার ওখান থেকে ব্যাপকসংখ্যক সমরাস্ত্র, গোলাগুলি চুরি হয়ে গিয়েছিল, হারিয়ে গিয়েছিল, বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। এজন্য একটা কোর্ট মার্শালও হয়েছিল, জেনারেল আজিজের নামেও কোর্ট মার্শাল হয়েছিল। আজকে উনি………….., কিন্তু উনার কেন এসেছে, উনি হলেন ওভারঅল, উনি নিশ্চয়ই এখন তো ওখান থেকে এবং আমরা আরও দেখছি মিরপুরে সম্প্রতি কয়েক বাক্স পুকুরের মধ্যে পাওয়া গেছে, এ সবগুলি আমাদের ব্যর্থতা …………..’
আরও পড়ুন- সেনাপ্রধানকে নিয়ে দেওয়া বক্তব্যে ড. জাফরুল্লাহ’র দুঃখপ্রকাশ
এ বক্তব্য প্রসঙ্গে আইএসপিআরের প্রতিবাদে বলা হয়, বর্তমান সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ সম্পর্কে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বক্তব্য ছিল একটি দায়িত্বজ্ঞানহীন, অসত্য বক্তব্য। কারণ বর্তমান সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ চাকরি জীবনে কখনোই চট্টগ্রামের জিওসি বা কমান্ড্যান্ট হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন না। তিনি ২০১০ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে ২০১১ সালের জুন মাস পর্যন্ত কুমিল্লায় ৩৩ আর্টিলারি ব্রিগেডের ব্রিগেড কমান্ডার; ২০১১ সালের জুন থেকে ২০১২ সালের মে পর্যন্ত ঢাকায় মিরপুরে ৬ স্বতন্ত্র এডিএ ব্রিগেডের ব্রিগেড কমান্ডার এবং ২০১২ সালের মে থেকে ওই বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত কুমিল্লায় ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্ণিত সময়ে চট্টগ্রাম বা কুমিল্লা সেনানিবাসে কোনো সমরাস্ত্র বা গোলাবারুদ চুরি বা হারানোর কোনো ঘটনা ঘটেনি। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, বর্তমান সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ তার দীর্ঘ বর্ণাঢ্য সামরিক চাকরি জীবনে কখনোই কোর্ট মার্শালের সম্মুখীন হননি।
প্রতিবাদে বলা হয়, চাকরিরত একজন সেনাবাহিনী প্রধান সম্পর্কে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মতো একজন বিশিষ্ট ব্যক্তির এ ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন অসত্য বক্তব্য সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, যা সেনাবাহিনী প্রধানসহ সেনাবাহিনীর মতো রাষ্ট্রীয় একটি প্রতিষ্ঠানকে জনসম্মুখে হেয় করার হীন অপচেষ্টা মর্মে স্পষ্টত প্রতীয়মান।
প্রতিবাদে আরও বলা হয়, ‘ডা. জাফরুল্লাহর দায়িত্বজ্ঞানহীন অসত্য বক্তব্য কেবলমাত্র সেনাবাহিনী প্রধান হিসেবে জেনারেল আজিজ আহমেদের সুনাম ও সামাজিক অবস্থানকে ক্ষুণ্ন করেননি, বরং তা সেনাবাহিনী প্রধানের পদকে চরমভাবে হেয় প্রতিপন্ন করেছে, যা প্রকারান্তরে চাকরিরত সেনাবাহিনীর সব সদস্যকে বিভ্রান্ত করছে এবং তাদের মনোবলের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এছাড়া এ ধরনের অপপ্রচার সেনাবাহিনীর মতো সুশৃঙ্খল বাহিনীর সংহতি ও একতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে যা অনাকাঙ্ক্ষিত।’
আইএসপিআরের প্রতিবাদের পর ১৩ অক্টোবর রাজধানীর গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করেন ডা. জাফরুল্লাহ। এ প্রসঙ্গে আইএসপিআরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ১৩ অক্টোবর রাজধানীর গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডা. জাফরুল্লাহ এর আগে ‘সময়’ টিভির টকশো’তে তার দেওয়া বক্তব্যে সেনাবাহিনী প্রধান সম্পর্কে ‘অসাবধানতাবশত ভুল তথ্য উল্লেখ এবং ‘ভুল শব্দ চয়ন ও শব্দ বিভ্রাট হয়েছিল’ মর্মে উল্লেখ করেন। ওই সংবাদ সম্মেলনে তিনি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আরও কিছু তথ্য উপস্থাপন করেন। সংবাদ সম্মেলনে তার দেওয়া বক্তব্য বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়া, অনলাইন পোর্টালসহ প্রায় সব জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়।
প্রকাশিত সংবাদে উল্লেখিত কিছু বিষয়ে সেনা সদরের দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছে এবং এ বিষয়ে সেনাসদর থেকে তীব্র প্রতিবাদ জ্ঞাপন করা হলো বলে উল্লেখ করা হয় আইএসপিআরের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে। এতে বলা হয়, কারণ ডা. জাফরুল্লাহর সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যে ফের কিছু বানোয়াট, অসত্য ও বিভ্রান্তিকর তথ্য উপস্থাপিত, হয়েছে যা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আলোচনার সময় আমি দেশের বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল এম এ আজিজ সম্পর্কে অসাবধানতাবশত একটি ভুল তথ্য উল্লেখ করেছিলাম। কিন্তু ডা. জাফরুল্লাহ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ সম্পর্কে যা যা বলেছেন, তার সবই ভুল।
আইএসপিআরের বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ডা. জাফরুল্লাহ শব্দ চয়নে ভুল করে ‘কোর্ট অব ইনকোয়ারি’র স্থলে ‘কোর্ট মার্শাল’ বলেছেন— তার এই তথ্যটিও সঠিক নয়। ব্যক্তি আজিজের বিরুদ্ধে কখনও কোর্ট মার্শাল তো হয়ইনি, বরং জেনারেল আজিজের সুদীর্ঘও বর্ণাঢ্য চাকরি জীবনে তার বিরুদ্ধে কোনো কোর্ট অব ইনকোয়ারিও হয়নি। বস্তুতপক্ষে ডা. জাফরুল্লাহর বক্তব্যটি চরম মিথ্যাচারের সামিল। এর আগে সময় টিভিতে ভুল, দায়িত্বজ্ঞানহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বক্তব্যের জন্য ভুল স্বীকার ও দুঃখপ্রকাশ করতে গিয়ে পুনরায় অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে ও চতুরতার সঙ্গে তিনি মিথ্যা তথ্য দিয়ে জেনারেল আজিজ আহমেদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অপচেষ্টা চালিয়েছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ৯ অক্টোবর টকশো’তে তিনি ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় ব্যবহৃত আর্জেস গ্রেনেডের উৎস হিসেবে সুকৌশলে সেনাবাহিনীকে জড়িত করার একটি চেষ্টা করেছিলেন, যা ছিল দূরভিসন্ধিমূলক। এখানে উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইতিহাসে কখনও কোনো গ্রেনেড হারানো, চুরি বা বিক্রি হওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা সংক্রান্ত মামলার রায় ঘোষণার আগের দিন টেলিভিশন লাইভ টকশো’তে এ ধরনের অসত্য বক্তব্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অসত্য বক্তব্যকে সংশোধনের কোনো চেষ্টা করেননি। তার সামগ্রিক বক্তব্যে এটা স্পষ্ট, তিনি সেনাবাহিনীতে কর্মরত সব পদবীর সদস্যদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টার পাশাপাশি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সেনাবাহিনী প্রধানের ভাবমূর্তি এবং স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক দেশপ্রেমিক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপপ্রয়াস চালিয়েছেন।
জনগণের আস্থা ও বিশ্বস্ততার কেন্দ্রবিন্দু বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। জাতীয় এই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে মিডিয়া বা অন্য কোনো মাধ্যমে বক্তব্য দেওয়ার আগে তথ্যের সঠিকতা যাচাই করা বাঞ্ছনীয়। মিথ্যা/ভুল তথ্য পরিবেশন একটি গর্হিত অপরাধ। কেননা ভুল তথ্য এক দিকে যেমন দেশমাতৃকার অতন্দ্র প্রহরী বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যদের মনোবলের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে, তেমনি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী তাদের অসৎ উদ্দেশ্য সাধনের সুযোগ নিতে পারে। তাই সেনাবাহিনী বিষয়ে সত্যতা যাচাই করে তথ্য পরিবেশন করার জন্য অনুরোধ করা হলো।
আরও পড়ুন-
জাফরুল্লাহকে বক্তব্য প্রত্যাহারের আহ্বান কাদেরের
জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বিরুদ্ধে জিডি, তদন্ত করবে ডিবি
সারাবাংলা/ইউজে/টিআর
আইএসপিআর ডা. জাফরুল্লাহ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ