গ্রেফতারের আগে ড. কামালের কাছে বিবৃতি চেয়েছিলেন মইনুল
২৩ অক্টোবর ২০১৮ ২৩:০৯
।। সারাবাংলা ডেস্ক ।।
মানহানির মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন। তবে গ্রেফতারের আগে ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্বে থাকা ড. কামালের কাছে তিনি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি চেয়েছিলেন। যদিও জোটের পক্ষ থেকে বিবৃতি দিতে রাজি হননি ড. কামাল।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া দুইটি ফোনালাপের সূত্র ধরে এ তথ্য জানা গেছে। এর মধ্যে একটি ফোনকল ছিল ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের সঙ্গে ড. কামালের, অন্যটি ব্যারিস্টার মইনুলের সঙ্গে গণস্বাস্থ্য হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহর।
ড. কামালের সঙ্গে ফোনালাপে ব্যারিস্টার মইনুল বলেন, কামাল ভাই, আমার যা মনে হয় আপনি একটি স্টেটমেন্ট ইস্যু করতে পারেন কি না— (যাতে বলা হবে) ‘বিভিন্নভাবে কেস দিয়ে তাকে হ্যারাস করা হচ্ছে। আমাদের ঐক্যফ্রন্ট থেকে যেন বলা হয় এবং আমরা এটা কনডেম করি।’ দুই সেন্টেন্সের একটা স্টেটমেন্ট। আজ আপনার ঐক্যফ্রন্ট থেকে একটা রিঅ্যাকশন দেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।
তবে ব্যারিস্টার মইনুলের এ আহ্বানে সাড়া দিতে রাজি হননি ড. কামাল। তিনি বলেন, ঐক্যফ্রন্টকে আমি এসবের মধ্যে টানতে চাচ্ছি না। ঐক্যফ্রন্ট হ্যাজ নাথিং টু ডু উইথ দিস।
ড. কামালের এমন মন্তব্যের পর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে ব্যারিস্টার মইনুল বলেন, ‘তাইলে আপনি থাকেন। আই গো অ্যাট স্ট্রিক্ট। আই অ্যাম নট ইন দ্য ফ্রন্ট (ঐক্যফ্রন্ট)।’
এরপর ড. কামাল ‘না, না’ বলে ওঠেন।
অন্য ফোনালাপটিতে ডা. জাফরুল্লাহকে ব্যারিস্টার মইনুল বলেন, আমি বললাম, ড. কামাল, আমাকে আঘাত করে মামলা করছে, হ্যারাস করছে। আমি মনে করি, আপনার কাছ থেকে একটা স্টেটমেন্ট যাওয়া উচিত। আমাদের জোটে… একটা গণ্ডগোল করার চেষ্টা করছে। দুই সেন্টেন্সের আপনের একটা স্টেটমেন্ট দেওয়া উচিত। তিনি বললেন, আমি এ বিষয়টাকে ঐক্য প্রক্রিয়ার মধ্যে আনতে চাই না।
জবাবে জাফরুল্লাহ বলেন, ওরা তো এটাই চাচ্ছে। চাচ্ছে তোমাকে আলাদা করে বের করতে।
এসময় ব্যারিস্টার মইনুল বলেন, সে চাক না চাক, আমি তো বলে দিছি— আমি নাই তো তাইলে। ঐক্যফ্রন্টে নাই। তখন জাফরুল্লাহ তাকে বলেন, তুমি একটু চুপ করে থাকো। চুপ থাকো একটু।
জাফরুল্লাহর এ কথার জবাবে মইনুল বলেন, না, চুপ কইরা আর না। আমাকে কাইলা, অ্যারেস্ট করে নিয়ে যাবে। তুমি (কামাল) আমাকে নিয়া একটা স্টেটমেন্ট দিতে পারবা না, তুমি কোন ঐক্যফ্রন্ট? আমি আমার নিজের ঐক্যফ্রন্টে থাকব। তার ঐক্যফ্রন্টে থাকব না। কী আশ্চর্য, আমার চরম বিপদ!
জাফরুল্লাহ এসময় বলেন, মানুষ যদি, আমরা যদি… এ সময় যদি আমরা একে অন্যের পাশে না দাঁড়াই…
তখন ব্যারিস্টার মইনুল বলেন, আমি শুধু বললাম, দুই শব্দের একটা স্টেটমেন্ট দেন— হাসিনা যেভাবে… একতরফা মামলা হচ্ছে… আমরা উদ্বিগ্ন ফিল করছি…। সে বলে, আমি ঐক্যফ্রন্টে এটা আনতে চাই না। তার কিসের ঐক্যফ্রন্ট? উইদাউট মইনুল হোসেন কিসের ঐক্যফ্রন্ট তার আছে? কিসের ঐক্যফ্রন্ট?
তখন ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, খুবই খারাপ কাজ। ব্যারিস্টার মইনুল বলেন, এটা কাওয়ার্ড। এটা কোনো কাজের না। একে দিয়ে কাজ হবে না আমাদের।
উল্লেখ্য, গত ১৬ অক্টোবর বেসরকারি একটি টেলিভিশনের টকশোতে যুক্ত হয়ে একজন নারী সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টিকে আপত্তিকর কথা বলেন ব্যারিস্টার মইনুল। এ নিয়ে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। ব্যারিস্টার মইনুলকে প্রকাশ্যে ক্ষমতা চাওয়ার দাবি জানিয়ে বিবৃতি দেন নারী সাংবাদিকরা। বিভিন্ন গণমাধ্যমে সম্পাদকরাও তার বিরুদ্ধে বিবৃতি দেন, বিবৃতি দেন বিশিষ্ট নাগরিকরাও। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তার সমালোচনা করেন।
এ ঘটনায় ব্যারিস্টার মঈনুল প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ক্ষমাপ্রার্থনা করেন। তবে তিনি দাবি অনুযায়ী প্রকাশ্যে ক্ষমা না চাওয়ায় ২১ অক্টোবর ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে মানহানির মামলা দায়ের করেন মাসুদা ভাট্টি। পরে জামালপুর ও কুড়িগ্রামেও মামলা হয় তার নামে। এর মধ্যে ঢাকা ও জামালপুরের মামলায় রোববার পাঁচ মাসের এবং সোমবার কুড়িগ্রামের মামলায় ছয় সপ্তাহের আগাম জামিন পান ব্যারিস্টার মঈনুল।
এর মধ্যে আজ সোমবার বিকেলে রংপুরের মানবাধিকারকর্মী মিলি মায়া সেখানকার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ব্যারিস্টার মঈনুলের বিরুদ্ধে মানহানির আরেকটি মামলা দায়ের করে। পরে সন্ধ্যার দিকে বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। সেই মামলায় সোমবার রাতে উত্তরায় ঐক্যফ্রন্টের আরেক নেতা আ স ম আবদুর রবের বাসা থেকে ব্যারিস্টার মইনুলকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ।
আরও পড়ুন-
আ স ম রবের বাসা থেকে গ্রেফতার ব্যারিস্টার মঈনুল
‘ব্যারিস্টার মঈনুল ইংরেজি খাওয়াটা শিখেছেন, ভদ্রতাটা শিখেননি’
ব্যারিস্টার মঈনুলকে শুধু ক্ষমা চাইলেই হবে না, শাস্তিও পেতে হবে
সারাবাংলা/এনএইচ/টিআর
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ড. কামাল হোসেন ডা. জাফরুল্লাহ ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন