Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আজকের শিশু, আগামীর প্রোগ্রামার!


৩০ অক্টোবর ২০১৮ ১৮:১১

।। মাকসুদা আজীজ, অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটর ।।

তোমরা কি শুধু বক্তব্য শুনবে নাকি একটা গানও শুনবে? তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলকের এই আহ্ববানে হর্ষধ্বনি তোলে শিশুরা। এই শিশুরা কোনো সাধারণ শিশু নয়। তারা বাংলাদেশের অনন্য কয়েকজন শিশু যারা প্রোগ্রামিং-এর ভাষা জানে, শুধু তাই নয়, প্রোগ্রামিং এর ভাষা দিয়ে সমস্যাও সমাধান করতে পারে।

এই শিশুরা মঙ্গলবার (৩০ অক্টোবর) জড়ো হয়েছিল আগারগাঁয়ের আইসিটি ভবনে, জাতীয় শিশু-কিশোর প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা-২০১৮’-এর পুরষ্কার বিতরণীতে। একদম ছোট্ট ছোট্ট কিছু শিশু। ক্লাস থ্রিতে পড়া বাচ্চারাও অংশ নিয়েছিল অনুষ্ঠানে। তবে তাদের শক্তিকে অস্বীকার করার কিছু নাই। তারা প্রোগ্রামিং জানে। সমস্যার সমাধান করতে পারে স্ক্র্যাচ বা পাইথন প্রোগ্রামিংয়ের মতো ভাষা দিয়ে।

প্রোগ্রামিং-এর ভাষা জানে বলেই কি না কে জানে। বাংলা ভাষাতেও তাদের কোনো জড়তা নেই। ধুমধাম উঠে চলে যায় স্টেজে, নিজেদের মতো করে বলে আসে এই অনুষ্ঠান সম্পর্কে তাদের অনুভূতির কথা। একদম আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠানের পাশ কাটিয়ে মন্ত্রীদের সঙ্গে কথা শুরু করে দেয় অনুষ্ঠানের মধ্যেই। ১০ বছরের স্যাম, মাত্র ক্লাস ফাইভে পড়ে, কত তার আলাপ প্রতিমন্ত্রীদের সঙ্গে। আগেও এসেছিল সে। কেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী মস্তফা জাব্বারের সঙ্গে তার দেখা হয়নি, কেন প্রতিমন্ত্রীও ছিলেন না? অবশেষে মন্ত্রী হার মানেন স্যামের তীক্ষ্ণ প্রশ্নে, কিন্তু স্যাম কি থামার পাত্র? তার কত কত প্রশ্ন কত কত মতামত।

বাংলাদেশ ইতোমধ্যে স্থান করে নিয়েছে মধ্যম আয়ের দেশে। এখন সরকারের প্রধান চ্যালেঞ্জ মধ্যম আয়ের দেশ হিসবে নিজেদের অবস্থান পাকা করা। আর এই কাজে সবচেয়ে বেশি দরকার দক্ষ জনশক্তি। আর আগামী পৃথিবীর দক্ষ জনশক্তি লড়বে মেধা দিয়ে, সেই লক্ষ্যে তৈরি করা প্রয়োজন দক্ষ জনশক্তি, যারা আগামীর পৃথিবীকে চালাবে। তাই বেছে নেওয়া শিশুদের, বলেন জুনায়েদ আহমেদ পলক।

বিজ্ঞাপন

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার শিশুদের প্রোগ্রামিং শেখানোর আরও একটা দারুণ কারণ তুলে ধরেন ক্ষুদে প্রোগ্রামারদের কাছে। তিনি বলেন, একবার আমরা টিচারদের প্রোগ্রামিং শিক্ষার একটি ট্রেনিং করছিলাম। এ ধরনের অনুষ্ঠানে বাবা মায়ের সঙ্গে অনেক সময় ছোট বাচ্চারাও আসে। এরকম একটা অনুষ্ঠানে আমরা একদিন অবাক হয়ে দেখলাম, একজন শিক্ষিকা মা যে সমস্যাটা সমাধান করতে পারছিলেন না তার ক্লাস থ্রিতে পড়া কন্যা তা করে ফেললেন। আমরা বুঝলাম, এটাই সময় আমাদের শিশুদের প্রোগ্রামিং শেখানোর।

এইসব শিশু-কিশোরদের তথ্য-প্রযুক্তি খাতে আরও অংশগ্রহণ বাড়াতে আয়োজন করা হয় বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা ‘জাতীয় শিশু-কিশোর প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা-২০১৮’।

মে-জুন মাস থেকে শুরু হয় এই প্রতিযোগিতার প্রাথমিক কাজ। সারাদেশের সবগুলো জেলায় ছড়িয়ে থাকা ১৮০টি শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাবের আওতায় থাকা শিশুদের নিয়ে শুরু হয় জাতীয় শিশু-কিশোর প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার প্রথম ধাপ। এই ল্যাবগুলোর প্রশিক্ষক হিসেবে ওই সকল বিদ্যালয়ের আইসিটি বিষয়ক শিক্ষক ও ইয়াং বাংলার একজন সমন্বয়কারীকে বাছাই করে দুদিন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় (ট্রেনিং অব ট্রেইনার- টিওটি)।

স্ক্র্যাচ এবং পাইথন- এই দুই প্রোগ্রামিং ভাষায় প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়। তৃতীয় শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের গ্রুপ ভিত্তিক প্রতিযোগিতা হয় স্ক্র্যাচ নামক ভিজুয়াল ইন্টারেক্টিভ প্রোগ্রামের মাধ্যমে। শিশুদের জন্য দুর্দান্ত একটি প্রোগ্রাম ‘স্ক্র্যাচ’। এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে গল্প তৈরি ও বিভিন্ন আইডিয়া শেয়ারের পাশাপাশি ক্ষুদ্রে প্রোগ্রামাররা পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে। অন্যদিকে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সিনিয়র এবং জুনিয়র দুই ভাগে বিভক্ত করে পাইথন প্রোগ্রামের ওপর প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। পাইথন বেশ শক্তিশালী অবজেক্ট ভিত্তিক উচ্চ পর্যায়ের প্রোগ্রামিং ভাষা। তবে এটি ব্যবহার করা বেশ সহজ। বিশেষত কম্পিউটারে কাজের জন্য প্রোগ্রাম তৈরিতে ইচ্ছুক কিশোরেরা বেশ সহজে পাইথন ব্যবহার করে তাদের প্রয়োজনীয় প্রোগ্রাম তৈরি করতে পারে।

বিজ্ঞাপন

প্রতিযোগিতার দ্বিতীয় ধাপে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত এই শিক্ষক ও ইয়াং বাংলার সমন্বয়কেরা নিজ নিজ জেলার অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয় করে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের বাছাই করে। এই কাজে ইয়াং বাংলার সকল জেলা কো-অর্ডিনেটরবৃন্দ জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে নিজ নিজ জেলার শিক্ষার্থীদের বেছে নেয়। ১২ থেকে ৩০ মে তারিখের মধ্যে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছে এই প্রতিযোগিতা আয়োজনের খবর পৌঁছানো শেষে শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। এ সময় সারাদেশ থেকে মোট ৫৪০০ শিক্ষার্থী এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য রেজিস্ট্রেশন করে। তাদের মধ্যে প্রাইমারি স্কুলের শিশুদের জন্য ৩ জন করে ‘স্ক্র্যাচ’ প্রোগ্রামের দল তৈরি করা হয়। অন্যদিকে হাই স্কুলের শিক্ষার্থীদের এককভাবে পাইথন প্রোগ্রামিংয়ে প্রতিযোগিতার জন্য রেজিস্ট্রেশন করা হয়।

ছাত্র-ছাত্রী বাছাই শেষে প্রতিটি ল্যাবে তিনদিন করে পাইথন এবং তিনদিন করে স্ক্র্যাচ এর প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। তারপর ২ জুন ২৭০০ শিশুর ৯০০ দল এবং হাইস্কুল পর্যায়ের ২৭০০ শিক্ষার্থী নিয়ে জেলা পর্যায়ে স্ক্র্যাচ ও পাইথন ভিত্তিক অনলাইন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। ‘কোড মার্সাল’ নামে প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার জন্য অনলাইন প্লাটফর্মে প্রতিযোগিতা করে শিক্ষার্থীরা। এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে প্রতিটি জেলা থেকে পাইথন ভিত্তিক বিজয়ী এবং স্ক্র্যাচ ভিত্তিক একটি করে বিজয়ীদলের নাম ঘোষণা করা হয়।

প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত ধাপে জেলা ভিত্তিক বিজয়ীদের নিয়ে ঢাকায় দুই দিনব্যাপী স্ক্র্যাচ ভিত্তিক জাতীয় ক্যাম্প এবং পাইথন ভিত্তিক জাতীয় ক্যাম্প পৃথকভাবে আয়োজন করা হয় সাভারের শেখ হাসিনা ন্যাশনাল ইয়ুথ সেন্টারে। সারাদেশে ৬৪ জেলা থেকে ৫৫টি স্ক্র্যাচ দল ৭ জুন স্ক্র্যাচ ক্যাম্পে অংশ নেয়। সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইটি ইনস্টিটিউট (আইআইটি)-এর শিক্ষকদের সহায়তায় প্রাইমারি স্কুলের এই শিক্ষার্থীরা স্ক্র্যাচের ওপর আরও বিস্তারিত প্রশিক্ষণ অর্জন করে এবং ৮ জুন প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। এই দুদিন অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের অভিভাবকবৃন্দ প্রোগ্রামিং ও প্রোগ্রামারদের গুরুত্ব সম্পর্কে ধারণা লাভ করে।

অন্যদিকে ৯ জুন ১২৮ জন পাইথন প্রোগ্রামার নিয়ে পাইথন ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হয়। এই শিক্ষার্থীদের ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত জুনিয়ার এবং নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সিনিয়র এই দুই ভাগে ভাগ করা হয় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইটি ইনস্টিটিউট (আইআইটি)-এর শিক্ষকদের সহায়তায় তাদের পাইথন প্রোগ্রামিংয়ের ওপর আরও বিস্তারিত ধারণা প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে ১০ জুন ১২৮ জনের মধ্যে প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।

অবশেষে মঙ্গলবার ছিল সে মাহেন্দ্র দিন। যেদিন শিশুরা পেলো তাদের কাজের স্বীকৃতি। প্রতি বিভাগে ছয়টি ক্যাটাগরিতে পুরষ্কার নিচ্ছিলো শিশুরা। হাত ভর্তি বই, ক্রেস্ট, সার্টিফিকেট ট্যাব বা ল্যাপটপ। ছোট হাতগুলো ভরে ভরেও যখন উপহার নিচ্ছিলো বিজয়ীরা। তাদের চোখ ভরে প্রোগ্রামার হওয়ার স্বপ্ন, তারা রোবট বানাবে। সেই স্টিভ জবস যেমন বলেছিলেন, প্রত্যেকের প্রোগ্রামিং শেখা উচিত, এতে সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বাড়ে। সমস্যাকে সমাধানেই দক্ষ হয়ে গেছে তারা, আর কিছু কি আছে তাদের সামনে ভয় পাওয়ার মতো?

সারাবাংলা/এমএ/এমআই

জুনায়েদ আহমেদ পলক প্রোগ্রামার মোস্তাফা জব্বার

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

চট্টগ্রামে খালে ভাসছিল অর্ধগলিত লাশ
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৪:৩৩

বিএসইসি‘র চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৩:৫১

সম্পর্কিত খবর