এলএনজি সরবরাহে ঘাটতি, ঢাকা ও চট্টগ্রামে তীব্র গ্যাস সংকট
৬ নভেম্বর ২০১৮ ১৩:১৫
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে। গত তিনদিনে এই সংকট আরো তীব্র আকার নিয়েছে। মূলত আমদানিকৃত এলএনজি সরবরাহের ঘাটতির কারণে এ সংকট দেখা দিয়েছে বলে পেট্রোবাংলা ও তিতাস গ্যাসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান। তারা জানান, সমুদ্রের নিচে এলএনজি পাইপলাইনের সমস্যার কারনে সরবরাহ কম পাওয়া যাচ্ছে। এর ফলে বন্দর নগরী চট্টগ্রাম ও রাজধানী ঢাকায় গ্যাস সংকট হচ্ছে। এ সংকট আরো কয়েকদিন থাকবে।
ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বাসাবাড়িতে দিনের বেলা গ্যাস সংকটের অভিযোগ করেছেন অনেকেই। অনেক এলাকায় গভীর রাত পর্যন্তও গ্যাসের কোনো চাপ থাকে না। উত্তরা, পল্টন, মোহাম্মদপুর, মিরপুরসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গত কয়েকদিন থেকেই চলছে তীব্র গ্যাস সংকট।
রাজধানীর আগারগাঁও তালতলা জনতা হাউজিংয়ের বাসিন্দা শেখ সাবিহা সারাবাংলাকে বলেন, ‘গত তিন দিন ধরেই সকাল ৭ টার পর থেকে সারাদিন চুলায় আর গ্যাসই পাচ্ছিনা। বিকেলের পর গ্যাস সরবরাহ ঠিক হয়ে আসে। তাই রাতেই সব রান্না শেষ করতে হয়। তবে মাঝে মধ্যে হুট করে রাতেও দু- একবার গ্যাস আসা-যাওয়া করে।’
একই ধরনের সমস্যার কথা জানালেন খিলগাঁও চৌধুরীপাড়ার আব্দুল হান্নান। তিনি জানান, গত কয়েকদিন ধরে গ্যাসের চাপ এত কমে যায় যে রান্না করা যায় না। কি কারণে এমন হচ্ছে জানিনা। গত তিন-চারদিন হলো সকালের নাস্তা আর দুপুরের খাবার বাইরে থেকে কিনে এনে খাচ্ছি। শীত আসার আগেই এমন সমস্যা হলে পরে কি হবে কে জানে?
মিরপুর কাজিপাড়ার বাসিন্দা সাদিয়া শিপ্রা জানান, রোববার থেকে দিনের বেলা গ্যাসের চাপ এতোই কম যে, কোনো ধরনের রান্না করা সম্ভব হচ্ছে না। গ্যাস থাকলেও চুলা টিমটিম করে জ্বলে ।
তিতাস গ্যাস কোম্পানির ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তফা কামাল এ প্রসঙ্গে বলেন, এলএনজি সরবরাহ কমের কারণে রাজধানীতে গ্যাসের সমস্যা দেখা দিয়েছে। আমরা সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছি। এজন্য বিদ্যুতে কমিয়ে অন্যগুলাতে সরবরাহ ঠিক রাখার চেষ্টা করছি। বিদ্যুতে দু’ধরনের জ্বালানি দিয়ে (ডুয়েল ফুয়েল) যেসব কেন্দ্র চলে সেগুলোতে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রেখেছি। তিতাসের মোট ১৯টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মধ্যে ১০টি কেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে।
রাজধানীর মতো একই সংকট দেখা দিয়েছে বন্দর নগরী চট্টগ্রামেও। এ প্রসঙ্গে পেট্রোবাংলার এক কর্মকর্তা জানান, গত শনিবার (৩ নভেম্বর) রাতে সাগরের নিচে পাইপলাইনের সমস্যার কারণে এলএনজি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এতে চট্টগ্রামে ঘাটতি তৈরি হয়েছে। এছাড়া ঠাণ্ডা আবহাওয়ার কারণে গ্যাসের চাহিদাও বেড়ে গেছে। এসব কারণে গ্যাস সংকট শুধু আবাসিক নয়, ঘাটতি দেখা দিয়েছে শিল্প, বিদ্যুৎ ও সার কারখানায়।
পেট্রোবাংলার সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, গত শনিবার এলএনজি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে প্রায় তিনশ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস কম পাওয়া যাচ্ছে। গত শনিবার ২ হাজার ৯৯৭ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ হয়। আর গতকাল সোমবার ২ হাজার ৭১৩ মিলিয়ন ঘনফুট সরবরাহ করা হয়। ঘাটতি হয়েছে ২৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। এরমধ্যে বিদ্যুতে ২ হাজার ৫৪ মিলিয়নের চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ করা হয়েছে ১ হাজার ১৪ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। সার কারখানায় ৩১৬ মিলিয়নের বিপরীতে সরবরাহ করা হয়েছে ১৮৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস।
সারাবাংলা/এইচএ/জেডএফ/জেএএম