এপেক সম্মেলনে তীব্র বাকযুদ্ধে চীন-যুক্তরাষ্ট্র
১৭ নভেম্বর ২০১৮ ১৭:৩৫
।।আন্তর্জাতিক ডেস্ক।।
চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার চলমান বাণিজ্য বিরোধ প্রকট আকার ধারণ করেছে। শনিবার (১৭ নভেম্বর) পাপুয়া নিউগিনিতে অনুষ্ঠিত এশিয়া প্যাসিফিক ইকোনমিক করপোরেশন (এপেক) সম্মেলনেও বাকি সব বিষয় ছাপিয়ে ফুটে ওঠেছে দুই দেশের মধ্যকার বিরোধ। খবর আল জাজিরা ও বার্তা সংস্থা রয়টার্সের।
সম্মেলনে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, অর্থনৈতিক ‘সংরক্ষণবাদ’ পুরো বিশ্বের উন্নতিকে ছাপিয়ে গেছে। তিনি দেশগুলোকে মুক্ত বাণিজ্য নীতি অনুসরণ করতে আহবান জানান।
শি বলেন, কেউ যদি বিশ্বের জন্য নিজের দরজা বন্ধ করে দেয় তাহলে একইসঙ্গে সে নিজেও পুরো বিশ্ব থেকে আলাদা হয়ে যাবে ও নিজের রাস্তা হারাবে।
তিনি বিশ্বের প্রতি ‘সংরক্ষণবাদ’ ও ‘একপাক্ষিকতা’ ত্যাগ করার আহবান জানান। বলেন, এটা একটি স্বল্পমেয়াদী ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থায় ভবিষ্যতে ব্যর্থতা নিশ্চিত।
শি’র পর বক্তব্য রাখতে গিয়ে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স বলেন, যতদিন না বেইজিং তাদের বাণিজ্য নীতিমালা পাল্টাচ্ছে ততদিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান থেকে সরবে না। তিনি হুশিয়ারি দিয়ে বলেন, পরিস্থিতি বিবেচনায় চীনা পণ্যের ওপর আরোপিত শুল্ক দ্বিগুণ করে দেওয়া হতে পারে।
পেন্স বলেন, আমরা আমাদের ও চীনের মধ্যকার ভারসাম্যহীনতা সামলাতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা ২৫ হাজার কোটি ডলার সমপরিমাণের চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করেছি। প্রয়োজনে সে সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি করা হতে পারে। যতদিন চীন তাদের অবস্থান থেকে সরে না আসবে, ততদিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান থেকে সরবে না।
প্রসঙ্গত, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলতি বছর বাণিজ্যিক যুদ্ধ তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে ওঠছে। উভয় দেশ অপর দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা সমতুল্যের পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করেছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য নিয়ে চলমান এই ‘ইট মারলে পাটকেল’ যুদ্ধে বৈশ্বিক অর্থনীতির গুরুতর ক্ষতি হতে পারে।
শনিবারের সম্মেলনে শি আমেরিকার বাণিজ্য সংরক্ষণবাদের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, কারও স্বার্থপর এজেন্ডা বৈশ্বিক বাণিজ্য নিয়মে প্রয়োগ করা উচিত নয়।
এদিকে, চীনের সঙ্গে বিরোধের প্রমাণ হিসেবে পেন্স সম্মেলনে আসা তাইওয়ানের প্রতিনিধির সঙ্গে দেখা করেন। উল্লেখ্য, তাইওয়ান হচ্ছে চীনের পার্শ্ববর্তী একটি স্বায়ত্তশাসিত দ্বীপ, যেটি চীন তাদের বলে দাবি করে। পেন্স আরও বলেন, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র যৌথভাবে নতুন একটি নৌঘাঁটির উন্নয়ন নিয়ে কাজ করবে।
চীনের বেল্ট-এন্ড-রোড পরিকল্পনা নিয়েও সমালোচনা করেন পেন্স। তিনি বলেন, চীনের ঋণ হচ্ছে মূর্খতা। বেশিরভাগ সময়ই এই ঋণগুলোর সঙ্গে নানা শর্ত থাকে ও পরবর্তীতে ঋণের বোঝা বয়ে বেড়াতে হয়। উল্লেখ্য, বেল্ট-এন্ড-রোড পরিকল্পনার অংশ হিসেবে চীন দরিদ্র দেশগুলোকে অবকাঠামোর উন্নয়নে ঋণ দিয়ে থাকে।
প্রসঙ্গত, শনিবারের এপেক সম্মেলনটি ছিল সদস্য দেশগুলোর প্রধান নির্বাহী কর্মীদের বৈঠক। রবিবার অনুষ্ঠিত হবে ২১টি দেশের প্রধান নেতাদের বৈঠক। এপেক সম্মেলন বর্তমানে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এশিয়ায় প্রভাব বিস্তারের একটি উপায় হয়ে ওঠেছে।
সারাবাংলা/ আরএ