Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘আলংকারিক’ নয়, সরাসরি ভোটে সংসদে যেতে চান নারীরা


২৯ নভেম্বর ২০১৮ ০৮:১৪

।। জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারী ক্ষমতায়নে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে জাতীয় সংসদেও সংরক্ষিত নারী আসনের সংখ্যা একাধিক দফায় বাড়িয়ে ৫০-এ উন্নীত করা হয়েছে। তবে সংসদে এক-তৃতীয়াংশ নারী আসন নিশ্চিত করতে নারী অধিকারকর্মীদের দীর্ঘদিনের দাবি উপেক্ষিতই থেকে গেছে। তাদের দাবি, সংরক্ষিত নারী আসনের সংখ্যা বাড়িয়ে নারীর ক্ষমতায়ন করা যাবে না। নারী অধিকার নিশ্চিত করতে প্রয়োজন প্রত্যক্ষ ভোটে নারীদের সংসদে যাওয়ার ব্যবস্থা করা।

বিজ্ঞাপন

নারী অধিকারকর্মীরা বলছেন, সংরক্ষিত নারী আসনের বিধান আরও ২৫ বছর পর্যন্ত বাড়িয়ে যে সিদ্ধান্ত নবম জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে, তাতে নারীর ক্ষমতায়নকে আরও পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, ওই বিল পাসের আগে জনমত যাচাই-বাছাই ও সংশোধনী প্রস্তাব এনে জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র ৯ জন সংসদ সদস্য বলেন, সংরক্ষিত নয়, তারা সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নির্বাচন করতে চান। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর নারী প্রার্থী দিতে অনীহাকেও তারা সংবিধানের পরিপন্থি বলে মন্তব্য করেন।

তাছাড়া, ২০২০ সালের মধ্যে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিটি পর্যায়ে ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্বের যে বিধান গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে করা হয়েছে, তা বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলো সচেষ্ট নয় বলেও অভিযোগ নারী অধিকারকর্মীদের। ৩৩ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনও যথেষ্ট উদ্যোগ নেয়নি বলেও মনে করছেন তারা।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের দীর্ঘ তিন দশকের সুপারিশ ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ২০০৮ সালে দেওয়া নির্বাচনি ইশতেহার ভঙ্গ করে সংরক্ষিত নারী আসনের মেয়াদ বাড়ানোর প্রতিবাদ জানিয়ে মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়েশা খানম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা গত তিন দশক ধরে সুপারিশ দিচ্ছি, এই সরকার ২০০৮ সালে নির্বাচনি ইশতেহারেও অঙ্গীকার করেছিল, সংসদে নারীদের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হবে এবং নারী আসন এক-তৃতীয়াংশে উন্নীত করা হবে। কিন্তু তা হয়নি। আমরা এই নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের নিন্দা ও ক্ষোভ জানাচ্ছি।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, অনেক উন্নয়নের কাজ হয়েছে, অর্থনৈতিক অনেক উন্নয়ন হয়েছে। নারীদের উন্নয়নেও সরকারের কিছু উদ্যোগ রয়েছে। কিন্তু নারীদের রাজনীতিতে অংশ নেওয়া ও রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে গড়ে তোলার মতো তেমন কাজ হয়নি।

আরও পড়ুন: আসন জয়ের সমীকরণে প্রত্যক্ষ ভোটে পিছিয়ে নারী

‘উইনিং ক্যান্ডিডেট’ দরকার— এমন বিবেচনাতেই রাজনৈতিক দলগুলো জাতীয় নির্বাচনে নারী প্রার্থী দিতে আগ্রহী নন বলে মনে করেন আয়েশা খানম। তিনি বলেন, ১৮ কোটি মানুষের দেশে সংসদীয় আসন তিনশ থেকে বাড়িয়ে নারীদের জন্য এক-তৃতীয়াংশ নিশ্চিত করার বিধান রাখলে আরও অনেক বেশি বেশি নারী রাজনীতিতে আসবে এবং প্রত্যক্ষ নির্বাচন করেই তারা সংসদে আসবে।

সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনকে ‘অপমানজনক ও আলংকারিক’ অভিহিত করে মানবাধিকারকর্মী ও নিজেরা করি’র সমন্বয়ক খুশি কবির বলেন, নারীদের জন্য এটা অত্যন্ত অপমানজনক। সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্যরা সংসদে কোনো কথা বলতে পারেন না। তারা কোনো কাজেও আসছেন না। আর তাদের যদি নির্দিষ্ট ভোটার থাকত, কাজের জায়গা থাকত, তাহলে তাদের জবাবদিহিতার জায়গা তৈরি হতো।

খুশি কবির বলেন, আমরা সরাসরি যেখানে নারী প্রার্থী চাইছি সেখানে দলগুলো তাদেরকে মনোনয়নই দিচ্ছে না। মনোনয়ন দেওয়ার সংখ্যা কমে যাচ্ছে। আবার যাদের মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে, তাদের সবাই তো আর নির্বাচিত হয়ে আসবে না। তাহলে নারী সংসদ সদস্যের সংখ্যা এমনিতেই কমে যাচ্ছে। সেখানে নারীর ক্ষমতায়ন কী করে হবে? আমরা যতই বলি নারী নেতৃত্ব সরাসরি আসুক, কিন্তু মনোনয়ন দেওয়া দেখেই বোঝা যায়, রাজনৈতিক দলগুলো আমাদের কথা শুনতে চাইছে না।

তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য ফজিলাতুন্নেছা বাপ্পী মনে করেন, সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের বিধান রাখা হয়েছে মূলধারার সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় নারীকে যুক্ত রাখবার জন্য। এই বিধান নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। নারীদের এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখা হবে বলে মনে করার কিছু নেই বলে মনে করেন তিনি।

নারীকে মূলধারায় আনতে সরকার ও রাষ্ট্র বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে উল্লেখ করে বাপ্পী বলেন, ১৯৭২ সালের প্রথম সংসদে নারীদের জন্য ১৫টি আসন সংরক্ষিত ছিল। এই সংখ্যা পরে বাড়ানো হয়েছে। এখান থেকে নারীরা প্রস্তুত হবে, নিজেদের তৈরি করে মূলধারায় আসবে। আর ৩০০ আসনে নারীদের নির্বাচনের পথ উন্মুক্ত রয়েছেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সারাবাংলা/জেএ/টিআর

জাতীয় সংসদ সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর