ক্যাম্পেইনে বিএ পাশ, হলফনামায় স্বশিক্ষিত সাদেক খান
৬ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৯:১৯
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৩ (মোহাম্মদপুর) আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থী সাদেক খানের শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়ে ভিন্ন তথ্য পাওয়া গিয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের কাছে দেওয়া হলফনামায় সাদেক খান তার শিক্ষাগত যোগ্যতার জায়গায় নিজেকে ‘স্বশিক্ষিত’ বলে দাবি করেছেন। অথচ কয়েকদিন আগে এক জাতীয় দৈনিকে ‘ক্যাম্পেইন নিউজে’ সাদেক খান জানিয়েছেন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে বিএ (সম্মান) পাশ করেছেন। ১৯৭৩ সালে ঢাকা কলেজে পড়াশোনার সময় তিনি ছাত্রলীগের সদস্যও ছিলেন বলে ওই প্রতিবেদনে জানানো হয়।
ঢাকা-১৩ আসনের এই প্রার্থী তার হলফনামায় উল্লেখ করেছেন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে তার নামে ৩ লাখ ২৭ হাজার ৫০৯ টাকা জমা আছে। আর তার স্ত্রীর অ্যাকাউন্টে জমা আছে ৪৫ লাখ ৯৩ হাজার ৭০৮ টাকা। সাদেক খান আয়ের উৎস হিসেবে মূলত বাড়ি ও দোকানভাড়া এবং ব্যবসার কথা উল্লেখ করেছেন। এ ক্ষেত্রে বাড়ি ও দোকানভাড়া থেকে বছরে ১২ লাখ ৫৩ হাজার ৫০ এবং ব্যবসা থেকে বছরে ২০ লাখ ২৫ হাজার ৮১৫ টাকা বার্ষিক আয় দেখানো হয়েছে।
হলফনামায় নির্দিষ্ট কোনো খাত উল্লেখ না করে ‘অন্যান্য’ বাবদ আয় দেখানো হয়েছে ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
হলফনামায় দেওয়া তথ্য থেকে আরও জানা যায়, সাদেক খানের কাছে নগদ টাকা আছে ১৮ লাখ ৭৮ হাজার ৩০০। স্ত্রীর কাছে আছে ৯ হাজার ৯৯৭ টাকা। সাদেক খান নিজ নামে বাস-ট্রাক, মোটরগাড়ি ও মোটরসাইকেলের আর্থিক মূল্য দেখিয়েছেন ১০ লাখ ৫০ হাজার টাকা। স্ত্রীর নামে এই অর্থের পরিমাণ ৩৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা। তিনি তার কাছে সোনা, অন্যান্য মূল্যবান ধাতু ও পাথর নির্মিত অলংকারের আর্থিক মূল্য উল্লেখ করেছেন ৩০ হাজার টাকা। স্ত্রীর কাছে স্বর্ণালংকার আছে ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকার। নিজ নামে ইলেকট্রনিক সামগ্রী দেখানো হয়েছে ৩৫ হাজার টাকার। স্ত্রীর নামে আছে ১ লাখ ২০ হাজার টাকার। এ ছাড়া নিজ নামে ৫০ হাজার ও স্ত্রীর নামে ১ লাখ ২৩ হাজার ৫০০ টাকার আসবাবের কথা উল্লেখ করেছেন হলফনামায়। এছাড়াও ‘অন্যান্য’ খাতে তার নামে অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ দেখানো হয়েছে ৪২ লাখ ৮২ হাজার টাকার। সব মিলিয়ে সাদেক খানের নামে মোট অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ দেখানো হয়েছে ৭৬ লাখ ৫২ হাজার ৮০৯ টাকার।
স্থাবর সম্পদের হিসেবে সাদেক খান হলফনামায় উল্লেখ করেছেন, তার নিজ নামে অকৃষিজমি আছে ১ কোটি ৪১ লাখ টাকার। যৌথ মালিকানায় ১ কোটি ৩১ লাখ ৫২ হাজার ও স্ত্রীর নামে ১ কোটি ১২ লাখ ৩ হাজার টাকার জমির কথা। তার নামে বাড়ি ও অ্যাপার্টমেন্টের আর্থিক মূল্য দেখিয়েছেন ২২ লাখ ৯০ হাজার টাকার। চা–বাগান, রাবার বাগান, মৎস্য খামার ক্যাটাগরিতে অর্থমূল্য দেখানো হয়েছে ৫ লাখ ৫৭ হাজার টাকা।
এ ছাড়া সাদেক খান ফিলিং স্টেশনের নামে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেড ধানমন্ডি শাখা থেকে গাড়ি কেনা বাবদ ৩৪ লাখ ৭৫ হাজার ২৩৮ টাকা ঋণ নেওয়ার কথা উল্লেখ আছে।
১৯৭৭ সালে মো. সাদেক খান অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনে সর্বকনিষ্ঠ কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়ে ২০০১ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। তিনি তৎকালীন ৪৭ নং ওয়ার্ড ও বর্তমান ৩৪ নং ওয়ার্ড থেকে চারবার কাউন্সিলর নির্বাচিত হন।
১৯৯৭ সালে তিনি দুইবার ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন। মো. সাদেক খান সর্বশ্রেষ্ঠ কাউন্সিলরেরও পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৯২ সালে তিনি ৪৭ নং ওয়ার্ড ও ১৯৯৬-সাল থেকে ২০১৫ পর্যন্ত বৃহত্তর মোহাম্মদ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৩ আসনের প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
চারদলীয় জোট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে তিনি একাধিকবার রাজনৈতিক মামলার আসামি হন।
শেখ হাসিনা কারাবন্দি হলে তার মুক্তির দাবিতে ৪ লাখ ৫০ হাজার গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করেন।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে এই আসন থেকে নৌকার প্রার্থী ছিলেন যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান ও ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক। তিনি নৌকার প্রার্থী হিসাবে জয়লাভ করেন। এরপর তিনি মন্ত্রিসভায় স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিনা পুনরায় নির্বাচিত হন। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
ঢাকা-১৩ আসনটি একসময় ঢাকা-৯ আসনের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৯৯১ সালে আসনটিতে জয় পান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মকবুল হোসেন জয় পান। ২০০১ পুনরায় আসনটি দখলে নিয়েছিল বিএনপি।
সারাবাংলা/এনআর/একে