স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
ঢাকা: মুক্তিযোদ্ধা ও ভাস্কর ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় বাড়িতে গেলেও সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফেরার জন্য তাঁর দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসার প্রয়োজন। যার অংশ হিসেবে একজন ফিজিওথেরাপিস্ট ও সার্বক্ষণিক নার্সের সহযোগিতা প্রয়োজন। এবং সেই সঙ্গে তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণ-পরিচর্যায় রাখাও প্রয়োজন।
রাজধানীর ধানমণ্ডির ল্যাব এইড হাসপাতালে বুধবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযোদ্ধা ও ভাস্কর ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর শারীরিক পরিস্থিতি সম্পর্কে এমন তথ্য জানান অর্থপেডিক্স বিভাগের অধ্যাপক আমজাদ হোসেন।
এ সময় ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর ছেলে কাজী শাকের তুর্জ বলেন, ‘আমাদের মা ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী আজ জটিল শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে গভীর অর্থনৈতিক সংকটে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে চিকিৎসাধীন আছেন। প্রায় দুই মাস হয়ে গেল বেঁচে থাকার এই লড়াই তাঁর যেন শেষ হয় না। আমাদের মা ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী গত ৮ নভেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় দুই মাস ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত ৭ নভেম্বর রাতে ওয়াশরুমে পড়ে গিয়ে তার পায়ের গোড়ালির হাড় সরে যায়। পরদিন ৮ নভেম্বর পায়ে চোট নিয়ে তিনি ল্যাব এইড হাসপাতালের জরুরি বিভাগে এলে সেখানে তার তিন দফা কার্ডিয়াক অ্যাটাক হয়, ব্লাড প্রেসার ফল করে। এ অবস্থায় চিকিৎসকদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় প্রথমে অস্থায়ী এবং পরে ১২ নভেম্বর স্থায়ী পেসমেকার সংযোজন করা হয়। তিনি দীর্ঘদিন থেকেই কিডনি জটিলতা, উচ্চ-রক্তচাপ, থাইরয়েড এবং উচ্চ-ডায়াবেটিসে ভুগছিলেন। যে কারণে তার পায়ের অস্ত্রোপচারের কাজটি এতটাই জটিল এবং ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে যে, এক পর্যায়ে চিকিৎসকদের বোর্ড অস্ত্রোপচার পরবর্তী জটিলতার আশংকায় তাকে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।’
তুর্জ বলেন, ‘আমাদের আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে আমরা আমাদের মাকে দেশের বাইরে নিয়ে যেতে অপারগ হওয়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থানান্তর করি। সেখানে কয়েক দফায় মেডিক্যাল বোর্ড হওয়ার পর ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় ১০ ডিসেম্বর পায়ের সফল অস্ত্রোপচার করা হয়। পরের দিন পুনরায় তার কার্ডিয়াক অ্যাটাক হয় এবং ৯ দিন আইসিইউতে চিকিৎসাধীন থাকেন। ২০ ডিসেম্বর বাড়িতে আনা হলে অবস্থার অবনতি হয়। ফলে তাকে আবার ল্যাব এইড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।’
ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর মেয়ে ফুলেশ্বরী প্রিয়নন্দিনী বলেন, ‘আমাদের মা শুধু একজন দেশবরেণ্য ভাস্কর নন, তিনি মানবাধিকার কর্মী হিসেবে নির্যাতিত অসহায় মানুষের পাশে বুক চিতিয়ে দাঁড়ানো একজন সাহসী যোদ্ধা। দেশবিরোধী যেকোনো শক্তির বিরুদ্ধে সব-সময়ই তিনি সামনের কাতারের মানুষ। বর্তমান সরকার আমাদের মা’কে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দিয়েছে; দিয়েছে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান স্বাধীনতা পদক। বেঁচে থাকাকালে তার জন্য একটি সুনিশ্চিত বাসস্থানের প্রয়োজন, তার সুচিকিৎসা নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমরা আমাদের মায়ের জন্য সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একটি সুনিশ্চিত বাসস্থান এবং সুচিকিৎসা নিশ্চিত হওয়ার লক্ষ্যে লিখিত আবেদন করেছি বলেও জানান তিনি।
সারাবাংলা/এসআর/আইজেকে