বিদ্রোহী প্রার্থীরা মাঠে, বহিষ্কারের সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন নেই
২৪ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৬:৪০
।। হাসান আজাদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি আর মাত্র ছয় দিন। অথচ এখনও নির্বাচনের মাঠে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা। যদিও দলের শীর্ষ নেতারা কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, গত ১৭ ডিসেম্বরের পর মাঠে থাকলে তাদের ‘আজীবন বহিষ্কার’ করা হবে। সেই ডেডলাইনের পাঁচ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনও প্রার্থীরা যেমন মাঠ ছাড়েননি, তেমনি দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তেরও নেই কোনো বাস্তবায়ন বা অগ্রগতি।
দলটির একাধিক নেতা জানান, অনেক প্রার্থীই দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হলেও কেন্দ্র থেকে যোগাযোগের পর সরে দাঁড়িয়েছেন। তবে যেসব প্রার্থী এখনও মাঠে রয়ে গেছেন, তাদের অনেকেই নিজ নিজ নির্বাচনি আসনে জনপ্রিয়। নিজেদের জয়ের ব্যাপারে তারা বেশ আশাবাদী। যে কারণে কেন্দ্র থেকে সর্তকবার্তা, এমনকি দলীয় প্রধানের হুঁশিয়ারির পরও বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়ে গেছেন তারা।
নেতারা জানান, দল থেকে আজীবন বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কেন্দ্র থেকে মাঠের পরিস্থিতি আরও পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তবে নির্বাচনের আগে এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে কি না— সে বিষয়টি কেউ নিশ্চিত করতে পারেনি।
আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান এ প্রসঙ্গে সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিদ্রোহী প্রার্থীদের সঙ্গে এখনও যোগাযোগ হচ্ছে। আশা করছি দুয়েকদিনের মধ্যে বিদ্রোহীরা নির্বাচনের মাঠ থেকে সরে দাঁড়াবেন।’ তবে বিদ্রোহীদের আজীবন বহিষ্কারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত থাকলেও বাস্তবায়নের বিষয়ে তিনি কিছু জানাননি।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, এখনও ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে ওয়ার্কার্স পার্টির ইয়াসিন আলীকে না মেনে নৌকার বিরুদ্ধে ভোটে দাঁড়িয়েছেন দলটির সাবেক সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ইমদাদুল হক। তার মার্কা মোটরগাড়ি। তিনি এখনও নির্বাচনি প্রচার চালাচ্ছেন।
সারাবাংলায় পড়ুন: আ. লীগে আজও দেড় ডজন বিদ্রোহী প্রার্থী: কাল থাকলে কঠোর ব্যবস্থা
গাইবান্ধা-১ আসনে মহাজোট মনোনীত জাতীয় পার্টির প্রার্থী শামীম হায়দার পাটোয়ারীকে মানতে চাইছেন না উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ইমদাদুল হক। তিনি স্বতন্ত্র হিসেবে প্রার্থী হয়েছেন এবং তার পক্ষে প্রচার-প্রচারণাও চলছে জোরেশোরে। এই আসনে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আফরোজা বারীও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।
পিরোজপুর-৩ আসনে জোট প্রার্থী হিসেবে জাতীয় পার্টির রুস্তম আলী ফরাজীকে মানছেন না সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আশরাফুর রহমান। মঠবাড়িয়া উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ ছেড়ে তিনি প্রার্থী হয়েছেন আপেল প্রতীকে। যশোর-৫ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী স্বপন ভট্টাচার্যের পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটের লড়াইয়ে আছেন দলের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সহ-সম্পাদক কায়সার হাসান বারীও। তার মার্কা ‘ঢাক’।
নরসিংদী-৩ আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক পাওয়া জহিরুল ইসলাম মোহনকে না মেনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন সিরাজুল ইসলাম মোল্লা। ২০১৪ সালেও মোহনের প্রতিপক্ষ হিসেবে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে জয় পান সিরাজুল ইসলাম মোল্লা। তার মার্কা সিংহ।
মাদারীপুর-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করছেন। এই আসনে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আল আমিন মোল্লা ‘সিংহ’ প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।
নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে মহাজোট মনোনীত জাতীয় পার্টির লিয়াকত হোসেন খোকাকে না মেনে বিদ্রোহী হিসেবে আছেন আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ আল কায়সার।
মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মৃণাল কান্তি দাসকে মানতে চাইছিলেন না জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মহিউদ্দিনের ছেলে পৌর মেয়র ফয়সাল বিপ্লব। তবে তিনি ভোটে দাঁড়াননি। স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন তার স্ত্রী চৌধুরী ফাহরিয়া আফরিন। তিনি একতারা প্রতীকে ভোটের লড়াইয়ে আছেন।
ফরিদপুর-৪ আসনে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহকে সিংহ প্রতীকে চ্যালেঞ্জ করেছেন নিক্সন চৌধুরী। তিনি ২০১৪ সালেও দলের সমর্থন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে জিতে যান।
লক্ষ্মীপুর-২ আসনে মহাজোট মনোনীত জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ নোমানের পাশাপাশি প্রার্থী হয়েছেন কুয়েত আওয়ামী লীগের সাবেক আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম পাপুল। তবে দল সমর্থন না করায় তিনি স্বতন্ত্র পরিচয়ে ভোট করছেন।
ফেনী-১ আসনে মহাজোটের প্রার্থী জাসদের শিরিন আখতারকে আপেল প্রতীকে চ্যালেঞ্জ করছেন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শেখ আবদুল্লাহ। তিনি প্রচারলা চালাচ্ছেন দিন রাত।
সারাবাংলা/এইচএ/টিআর/এসএন