মনোনয়ন বাণিজ্যকারীরা কীভাবে জয়ের আশা করে: প্রধানমন্ত্রী
১০ জানুয়ারি ২০১৯ ২১:০২
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: মনোনয়ন বাণিজ্য করলে নির্বাচনে জয়ী হওয়া যায় না বলে মনে করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘যাদের আন্দোলন ব্যর্থ হয়, নির্বাচনে তারা কখনো জয়ী হতে পারে না। আর সেটার প্রমাণ হয়েছে ২০১৮ সালের নির্বাচনে। যারা মনোনয়ন নিয়ে বাণিজ্য করেছে, তারা কী করে আশা করে জয়ী হবে?’ বৃহস্পতিবার (১০ জানুয়ারি) দুপুর ৩টার পরে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০৮ সালের নির্বাচনে জনগণ আমাদের ম্যান্ডেট দিয়েছিল। তখন ব্যাপক হারে ভোট পড়ে। আপনারা যদি ২০১৮ সালে নির্বাচন আর ২০০৮’র নির্বাচন তুলনা করেন। ২০০৮ সালে কিন্তু ভোট পড়েছিল আরও অনেক বেশি। প্রায় ৮৬ ভাগ ভোট পড়েছিল। কোনো কোনো জায়গায় প্রায় ৯০ ভাগের ওপরে ভোট পড়েছিল। অনেকেই অনেক কথা বলছেন। কিন্তু তারা যদি এই তুলনাটা দেখেন, তখন দেখবেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে ভোট পড়েছিল অনেক বেশি। জনগণ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটকে ভোট দিয়েছিল।’
নির্বাচন প্রতিহতের নামে বিএনপি-জামায়াতের আগুন সন্ত্রাসের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারা নির্বাচন ঠেকানোর চেষ্টা ২০১৩-১৪ করেছিল কিন্তু সফল হতে পারেনি। কারণ বাংলাদেশের জনগণ তা রুখে দাঁড়িয়েছিল। জনগণ আমাদের পাশে ছিল। সেই নির্বাচনে আবার আমরা সরকার গঠন করি।’ তিনি আরও বলেন, ‘এরপর কী? তারা সরকার উৎখাত করবে। তাদের আন্দোলন কী ছিল? আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করা, এটা কখনো মানুষ মেনে নিতে পারেনি। তখন জনগণেই তাদের প্রতিরোধ করেছিল।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাদের আন্দোলন, তাদের ধর্মঘট আজ পর্যন্ত কিন্তু প্রত্যাহার করা হয়নি। সেটাও অব্যাহত আছে। কিন্তু জনগণ সেটাকে আর কোনো ধর্তব্যেই নেয়নি। এভাবে তাদের সব আন্দোলন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।’
২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির ভরাডুবির ব্যর্থতার কারণ নিজেদেরই খুঁজে বের করার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘তারা যে অপকর্মগুলো করেছে, যে অগ্নি সন্ত্রাস করে প্রায় তিন হাজার নয়শত’র ওপরে গাড়ি-বাস-লঞ্চ-সিএনজি পুড়িয়েছিল, প্রায় ৫’শর কাছাকাছি মানুষ আগুনে পুড়ে মেরেছিল, স্কুল কলেজের বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে কেউ বাদ যায়নি, তাদের সেই আগুন সন্ত্রাস থেকে। এসব অপকর্ম করেও তারা কীভাবে আশা করতে পারে, জনগণ তাদের ভোট দেবে?’
শুধু মানুষ না, তাদের এই রুদ্ররোষ থেকে গাছপালা থেকে পশুপাখিও রেহাই পায়নি উল্লেখ করে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারাগারে থাকার দিকটি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘একদিকে এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করে বিএনপি নেত্রী কারাগারে বন্দি, অন্যদিকে তার পুত্রকে বানিয়েছে বিএনপির অ্যাক্টটিং চেয়ারপারসন। সে হলো দশ ট্রাক অস্ত্র চোরকারবারি মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি। ২১ শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি। মানি লন্ডারিং মামলার আসামি। যেখানে এফবিআই এসে সাক্ষ্য দিয়ে গেছে, সেই কেসের সাজাপ্রাপ্ত আসামি, রিফিউজিডিভ বিদেশে পালিয়ে আছে। বিএনপি’র এমন কোনো নেতা কি তাদের দলে নাই দেশের ভেতরে, তারা যাকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বানাতে পারে?’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘নির্বাচনের সময় তারা কী করলো? প্রার্থী নির্বাচন তারা কীভাবে করেছে? সেটা নিয়ে তো ইতোমতো মনোনয়ন বাণিজ্য। একেক আসনে ৪/৫ জনকে নমিনেশন দিলো। সেই নমিনেশন যাদের দিয়েছে, দেওয়ার পরে কে তাদের প্রতীক পাবে, যে যত বেশি টাকা দিলো, সে পেলো। এই হলো তাদের নমিনেশনের ট্রেড বা বিজনেস। মনে হলো নমিনেশন তারা অকশনে দিয়েছিল।’
সিলেটে ইনাম আহমেদ চৌধুরী নমিনেশন পেলেন না উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেখানে যে টাকা দিতে পারলো সে নমিনেশন পেলো। ইনাম নমিনেশন পেলে জেতার হয়তো একটা সম্ভাবনা ছিল। ধামরাই, সেখানে আতাউর রহমান খান সাহেবের ছেলে জিয়াউর রহমান, আমরা তো ধরেই নিয়েছিলাম, জিয়াউর রহমান নমিনেশন পাবেন, নমিনেশন পেলে তিনি তো জিতবেনই। কিন্তু তাকে না দিয়ে যে বেশি টাকা দিতে পারলো তাকে নমিনেশন দিলো। ঠিক সেইভাবে নারায়ণগঞ্জে তৈমুর আলম খন্দকার। তাকে মনোনয়ন দিলো না বিএনপি। সেখানে যে টাকা সাপ্লাই দিতে পারলো তাকে তারা নমিনেশন দিয়েছে। চট্টগ্রামে মোর্শেদ খান, তাকে নমিনেশন দিলো না, যে ভালো টাকা দিতে পারলো সে পেলো নমিনেশন।’ তিনি আরও বলেন, ‘যখন সিট অকশনে দেওয়া হয় ,তখন তারা নির্বাচনে জেতে কীভাবে? আমি ছোট ছোট কয়েকটা উদাহরণ দিলাম কারণ এদের মধ্যে অনেকেই আমার সঙ্গে দেখা করে তাদের দুঃখের কথাগুলো নিজেরাই বলে গেছেন। তারা দুঃখের কথাগুলো বলে গেছেন, এর মধ্যে একজন আমাদের দলে জয়েনও করেছেন। যারা একেবারে যারা বঞ্চিত তাদের মুখ থেকেই পেয়েছি।’
বিএনপির মনোনয়ন বাণিজ্যের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আরেকটা কথা আপনারা জানেন, কেউ যদি ভাইয়ার সঙ্গে কথা বলতে চায়, তখন ভাইয়া নাকি আবার খালি ফোন নাম্বার বদলায়। সেজন্য তার সঙ্গে কথা বলতে হলে আবার পাউন্ডে সেখানে পেমেন্ট করতে হবে। আরও এক কাহিনি শুনলাম। আমাদের দেশের কোনো এক অ্যাম্বাসিতে একজন প্রার্থী গিয়ে হাজির। সেখানে গিয়ে বলছে, সে নমিনেশন নিয়ে এসেছে, নমিনেশন সাবমিট করবে। সেখানে অ্যাম্বাসি বলেছে, আমরা তো নমিনেশন নিতে পারি না, রিটার্নিং অফিসারকে অথবা অনলাইনে পাঠাতে পারেন। তখন উনি ক্ষেপে গিয়ে বলেন, আমি লন্ডনে এতোগুলো টাকা দিলাম, এত পয়সা দিলাম। আমাকে বলা হলো, এখানে নমিনেশন দেওয়া যাবে আর এখন বলছেন, দেওয়া যাবে না। সে তো খুব ক্ষোভের চোটে তার দুঃখের কথা বলে কত দিলো কী দিলো, সব বলে-টলে চলে গেলো।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সব চেয়ে বড় কথা হলো, তারা নমিনেশন দিলো কাকে? যেখানে উচ্চ আদালত থেকে একটি দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, সেই জামায়াতে ইসলামীর ২৫ জনই নমিনেশন পেয়েছে। বাংলাদেশের জনগণ এখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী। তারা যুদ্ধাপরাধীদের কখনো ভোট দেবে না। ’ ভোট তারা দিতে চায়ও না বলেও তিনি মন্তব্য করেন।’
সারাবাংলা/এনআর/এমএইচ/এমএনএইচ
আরও পড়ুন
আগামী ৫ বছর আমাদের জন্য কঠিন পরীক্ষা: প্রধানমন্ত্রী