জনগণ সচেতন হলে কেউ ঠকাতে পারবে না: প্রধানমন্ত্রী
৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১৪:৪৫
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: একাদশ জাতীয় সংসদে নির্বাচনি ইশতেহারে পুষ্টিসমম্মত নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তার অঙ্গীকার যথাযথভাবে বাস্তবায়নের ইচ্ছা পোষণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন বলেন, বিভিন্ন দোকান, হোটেল-রেঁস্তোরায় ভেজাল বা বাসিপচা খাবারের ব্যাপারের আমাদেরকে যথেষ্ট সচেতন হতে হবে। এখানে নাগরিক সচেতনতা একান্তভাবে দরকার। জনগণ সচেতন হলে খাবার নিয়ে কেউ ঠকাতে পারবে না। সে ক্ষেত্রে সরকারের যা করণীয় আমরা সেটা করব।
রবিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর খামারবাড়িতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ মিলনায়তনে জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন। ‘সুস্থ সবল জাতি চাই, পুষ্টিসম্মত নিরাপদ খাদ্যের বিকল্প নাই’ শীর্ষক প্রতিপাদ্যে দিবসটি এবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা বাংলাদশকে গড়ে তোলার চেষ্টা করে যাচ্ছি। জাতির পিতার যে স্বপ্ন ছিল, একটি সুখি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।’
এ লক্ষ্যে সরকারের বিভিন্ন মেয়াদে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি, খাদ্য মজুদ ও সংরক্ষণের ক্ষেত্রে নেওয়া কর্মসূচি ও পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘আমাাদের দেশের মানুষের যে জনসংখ্যা, সে জনসংখ্যাকে সামনে রেখে আমাদের খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করেছি। যাতে খাদ্যের জন্য কখনো আর কারও কাছে হাত পাততে না হয়। আমরা যেন নিজেরাই স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারি।’
জাতির পিতার একটি উদ্ধৃতি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘খাদ্য উৎপাদনের বিশ্বে একটা বেশ ভালো অবস্থানে আছি। আর খাদ্য চাহিদা এটা কখনো শেষ হয়ে যায় না। খাদ্য চাহিদা থাকবেই। যেহেতু আমাদের জমি অত্যন্ত ঊর্বর, যেটা জাতির পিতা বলেই গেছেন। সেটাকে আমাদের মাথায় রেখে উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি সংরক্ষণে দায়িত্ব নিতে হবে।’
স্বাধীনতার পর পর জাতির পিতা বাংলাদেশে বিভিন্ন অঞ্চলে খাদ্য গুদাম নির্মাণের কাজ শুরু করেছিলেন। আমরা সেই পদাঙ্ক অনুসরণ করে সমগ্র বাংলাদেশে এখন খাদ্য উৎপাদন করার সঙ্গে সঙ্গে যেন সেটা আমাদের কৃষকরা রাখতে পারে বা খাদ্যটা মজুদ থাকতে পারে কোনো আপতকালীন সময়ে সেই লক্ষ্য রেখে আমরা বিভিন্ন ধরনের সাইলো গোডাউন করে যাচ্ছি।
এছাড়াও আপদকালীন সময়ে আমার কত খাদ্যের প্রয়োজন হতে পারে সে হিসাবও মাথায় রেখে খাদ্য মজুদের লক্ষ্যে আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন সাইলো করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। যাতে সেখানে দুই তিন বছর পর্যন্ত চাল ভালো থাকে। কোনো বন্যা বা কোনো কিছু হলে বাংলাদেশকে আর কোনদিন কার কাছে হাত পাততে না হয় বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
এখন প্রায় ২১ লাখ মেট্রিক টনের মতো খাদ্য মজুদের সক্ষমতা রয়েছে। আমরা ২৭ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য মজুদ করার ব্যবস্থা নিচ্ছি জানিয়ে দেশবাসীকে খাদ্য অভ্যাসের দিকটি পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের খাদ্যের যে অভ্যাসটা, সে অভ্যাসটা একটু পরিবর্তন করা দরকার। দেশবাসীকে বলবো, আমাদের ছিল এক থাল পেটভরে ভাত, সামান্য একটু সবজি।’
সবাইকে মাস মাংস কিনেই খেতে হবে এমন নয়। সবজির মধ্য দিয়েও কিন্তু অনেক পুষ্টি আসে। সেটাও আমরা ব্যবহার করতে পারি। আর এখন তো মাছ উৎপাদনে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ। মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়ে গেছে। একজন দিনমজুর যা কামাই করে তা দিয়ে দশ/বারো কেজি চাল কিনতে পারে কাজেই ওতো চাল হয়ত প্রয়োজন হয় না তাই সাথে সাথে মাছও একটু কিনতে হবে। অবশ্য মানুষ এখন কিনছে, এব্যাপারে তারা সচেতন বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
সেই সঙ্গে জনগণের পুষ্টি চাহিদা নিশ্চিতে মাংস উৎপাদন বৃদ্ধিসহ দুগ্ধ উৎপাদনে বিশেষ ভাবে দৃষ্টি দিয়েছি বলেও জানান তিনি।
তাই এ বিষয়ে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘একগাদা ভাতই শুধু খেতে হবে না, ভাতের সঙ্গে পর্যাপ্ত পরিমাণে শাক-সবজিও বেশি করে খেতে হবে। আর মাছ-ডিম তো আছেই। যাতে করে খাবারটা সুষম খাদ্য হয়। আর সুষম খাদ্য হলেই কিন্তু পুষ্টি নিশ্চয়তাটা থাকবে।’
পাশাপাশি পুষ্টি নিশ্চয়তার ক্ষেত্রে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ওপর বিশেষ দৃষ্টি দেওয়ার আহ্বান জানান।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের বিভিন্ন মেয়াদে জাতীয় খাদ্য নীতি কর্মপরিকল্পনা, কৃষি খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টিনিরাপত্তা সংক্রান্ত প্রথম রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের বিভিন্ন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যও তুলে ধরেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘খাদ্য উৎপাদনেই আমরা শুধু সফলতা অর্জন করিনি, সংরক্ষণ করে মানুষের ঘরের কাছে খাদ্য পৌঁছে দেওয়া, সেই ব্যবস্থাও আমরা নিয়েছি। অনেক আগে অনেক ভিক্ষুক ছিল। আমরা এখন ভিক্ষুকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়েছি। কেউ ভিক্ষা করে চলবে না। কিছু না কিছু কাজ করে খাবে, সেই সুযোগ যেমন করে দিচ্ছি, আর যারা একেবারে কিছু করতে পারে না, তাদের জন্য বিনা পয়সায় খাদ্য ঘরে পৌঁছে দিচ্ছি। কেউ যেন না খেয়ে কষ্ট না পায়, এটাই আমাদের লক্ষ্য। সে লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করছি।’
এ ক্ষেত্রে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের বোধহয় একটা দায়িত্ব আছে। এটা দেখতে, কোথাও মানুষের ঘরে খাবার নাই, এরকম মানুষ আছে কি না? খুঁজে বের করবেন, যত টাকা লাগে দেব, তাদের খাদ্য নিরাপত্তা আমরা নিশ্চিত করব।
উপকূলীয় এলাকায় খাদ্য শস্য, বীজ সংরক্ষণের সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ পরিবেশবান্ধব ও জলবায়ু সহিঞ্চু পাঁচ লাখ পারিবারিক সাইলো বিতরণের কার্যক্রম চলমান আছে বলেও উল্লেখ করেন।
দেশে যারা অতি দারিদ্র্য ও অসহায় মানুষ আছে তাদের একদিকে যেমন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা, আরেকদিকে খাদ্যের সাথে সাথে পুষ্টির ব্যবস্থা নিশ্চিতে লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি বলেও জানান।
নির্বাচনী ইশতেহারে পুষ্টিসমম্মত নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা বিধানের অঙ্গীকার যথাযথভাবে পালনের ইচ্ছা পোষণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের যেমন বিভিন্ন দোকানের খাবার, হোটেল-রেঁস্তোরার যে ভেজাল বা বাসিপচা খাবারের যে বিভিন্ন ঘটনাগুলো ঘটছে, সেগুলোর ব্যাপারে আমাদের যথেষ্ট সচেতন হতে হবে। এখানে নাগরিক সচেতনতা একান্তভাবে দরকার। জনগণ যদি সচেতন হয় তাহলে জনগণকে এভাবে খাবার নিয়ে ঠকাতে পারবে না। সেই ক্ষেত্রে আমাদের পক্ষ থেকে যা করণীয় তা আমরা করবো, করে যাচ্ছি এবং আমরা সেটা করব।’
বিএসটিআইকে আমরা আধুনিক করেছি, উন্নতমানের করেছি। কিন্তু খাদ্যপরীক্ষা করার জন্য বিশেষ ল্যাবরেটরি করা একান্তভাবে প্রয়োজন। সেই ল্যাবরেটরিও আমরা করে দেব। আমাদের একটা কেন্দ্রীয় ল্যাবরেটরি যেমন থাকবে, সেই সঙ্গে প্রত্যেকটি বিভাগেও এর একটা শাখা থাকবে। যাতে করে যে কোনো জায়গায় যে কোনো খাদ্য সঙ্গে সঙ্গে আমরা পরীক্ষা করে দেখতে পারি, সেখানে কোনরকম ক্ষতিকর কিছু আছে কি না? ভেজাল আছে কি না? এটার ব্যবস্থা আমরা করব।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশকে আমরা উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসাবে গড়ে তুলতে চাই। জাতির পিতা আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। তার যে স্বপ্ন ছিল সেটা তিনি পূরণ করে যেতে পারেননি। অকালে তাকে চলে যেতে হয়েছে। এটা আমাদের কর্তব্য। আমি জনগণের কাছে কৃতজ্ঞ। তারা আমার উপর বিশ্বাস রেখেছেন, আস্থা রেখেছেন। আমাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। তাদের ভোটের মর্যাদা যেমন আমরা রক্ষা করব, সেই সঙ্গে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করে দেশকে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলা এটি আমাদের লক্ষ্য।’
জাতীয় নিরাপদ খাদ্য বিষয়বস্তুর ওপর তিনটি ক্যাটাগরিতে তিন বিভাগে রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব শাহাবুদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্ব করেন। এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার।
সারাবাংলা/এনআর/একে